শনিবার, ৬ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

আট মানদণ্ডে মিলবে নৌকার টিকিট

রফিকুল ইসলাম রনি

আট মানদণ্ডে মিলবে নৌকার টিকিট

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার টিকিট মিলবে আট মানদণ্ডে। তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন ধরে ব্যাপক যাচাই-বাছাই করে এই আট গুণাবলিতে যিনি এগিয়ে থাকবেন তাকেই দেওয়া হবে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন। শুধু নিজ দলেই নয়, সর্বমহলে থাকতে হবে ব্যাপক জনপ্রিয়তা ও ইমেজ। থাকতে হবে দলের জন্য ত্যাগ ও আনুগত্য। একই সঙ্গে মনোনয়নপ্রত্যাশীকে হতে হবে শিক্ষিত-মার্জিত। খোঁজ রাখা হচ্ছে দলের কর্মসূচিতে কতটা সক্রিয়, পারিবারিক ইমেজ, সামাজিক মর্যাদা। এসব গুণের পাশাপাশি দীর্ঘদিনের ত্যাগী-অভিজ্ঞ নেতারাই আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টিতে মনোনয়ন পাওয়ার যোগ্য হবেন। যাদের সঙ্গে এলাকার নেতা-কর্মীর সম্পর্ক নেই, পরিবারের সদস্যরা মাদক-সন্ত্রাসের সঙ্গে যুক্ত তাদের মনোনয়ন দেওয়া হবে না। নির্বাচনী এলাকায় বড় বড় শোডাউন করে কিংবা বড় নেতাদের সঙ্গে ছবি তুলে এলাকায় পোস্টার সাঁটিয়ে দলীয় মনোনয়ন পাওয়া যাবে না। দলের বিভিন্ন ফোরামে নেতাদের উদ্দেশে এমন কথা জানিয়েছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই। পেশি শক্তি ও অর্থবিত্তের অধিকারী হলেই মনোনয়ন পাওয়া যাবে—এমন ধারণা পোষণ ঠিক হবে না। দলের একাধিক নীতিনির্ধারণী ফোরামের নেতারা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।  সূত্রমতে, আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড মনে করে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তীব্র প্রতিযোগিতা হবে। তাই, ইমেজসম্পন্ন ও যোগ্য প্রার্থী মনোনয়ন দিতে হবে, নইলে ভোটের আগেই ‘পরাজয়’বরণ করতে হবে। সে কারণে এবার প্রার্থী নির্বাচনে সবচেয়ে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এ জন্য কিছু মানদণ্ড নির্দিষ্ট করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর নিজস্ব টিম, দলীয়, একটি বেসরকারি এবং কয়েকটি সরকারি সংস্থা দিয়ে কয়েক দফা মাঠ জরিপ করিয়েছেন তিনি। এ জরিপের ভিত্তিতে যারা এগিয়ে রয়েছেন তাদেরই দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী ফোরামের নেতারা বলছেন, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অন্যতম রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি অংশ না নেওয়ায়, মানদণ্ড বজায় রাখার বিষয়কে ততটা গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। আগামী নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ প্রায় নিশ্চিত। তাই আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের ক্ষেত্রে উল্লিখিত গুণাবলি এক রকম বাধ্যতামূলক হয়ে উঠেছে।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘নির্বাচনী এলাকায় সবচেয়ে জনপ্রিয়, গ্রহণযোগ্য, বিভিন্ন জরিপে যিনি এগিয়ে থাকবেন তাকেই মনোনয়ন দেওয়া হবে। কেবলমাত্র স্লোগান দিয়ে আর বিলবোর্ড টানিয়ে ও ছবি লাগিয়ে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া যাবে না। তাদের আমলনামা ভালো হতে হবে। আর তৃণমূল পর্যায়ের সব নেতার আমলনামা ও কার্যক্রম আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে জমা আছে। যার এসিআর সবচেয়ে ভালো তিনিই নৌকার টিকিট পাবেন।’ দলীয় সূত্রমতে, বিতর্কিত, জনবিচ্ছিন্নদের মনোনয়ন দেওয়া হবে না। এ জন্য বর্তমান এমপি বা মন্ত্রিপরিষদে থাকা অনেক নেতাই মনোনয়ন থেকে বাদ পড়বেন। বিশেষ করে ২০১৪ সালের নির্বাচনে যারা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে এলাকার খোঁজখবর রাখেননি, ব্যক্তিস্বার্থে দলীয় কোন্দল সৃষ্টি করেছেন, বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে দল ও সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলেছেন, তাদের এবার নৌকায় তোলা হবে না। তাই দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা এসব আসনে জনপ্রিয় মুখ খুঁজছেন। বিশেষ করে রাজশাহী, খুলনা ও চট্টগ্রাম বিভাগের কয়েকজন এমপির বিরুদ্ধে মাদক পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগ জমা হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। সম্প্রতি চুয়াডাঙ্গার একজন সংসদ সদস্যের দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে মাদক কারবারির অভিযোগ ওঠায় ওই এমপিকে গালমন্দ করেছে দলের হাইকমান্ড। জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর নিজস্ব একটা টিমের বিভিন্ন সংস্থার এবং দলীয় জরিপে যার প্লাস পয়েন্টের পরিমাণ বেশি তিনিই ‘যোগ্য’। তাকেই দলীয় টিকিট দেওয়া হবে। টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসতে চ্যালেঞ্জের নির্বাচনে মুখ দেখে কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হবে না। ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কয়েক দফা দলীয় কার্যনির্বাহী সংসদ ও দলের সংসদীয় দলের বৈঠকে এমপিদের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, কারও মুখ দেখে এবার মনোনয়ন দেওয়া হবে না। একই সঙ্গে কাউকে পাস করানোর দায়িত্ব তিনি নেবেন না।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় আসা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কঠিন কাজ। আওয়ামী লীগ টানা দুই মেয়াদে ক্ষমতায় রয়েছে। এ নিয়ে দলের ভিতরে-বাইরে মানুষের প্রত্যাশার মাত্রা বেড়ে গেছে। অনেক প্রত্যাশাই পূরণ করা হয়েছে, কিছু প্রত্যাশা হয়তো এখনো পূরণ করা সম্ভব হয়নি। সে কারণে সরকারবিরোধী জনমতও তৈরি হয়েছে। আবার বিভিন্ন এলাকায় বিগত দুই মেয়াদে অনেকেই এমপি রয়েছেন। ২০১৪ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত কিছু এমপি নিজ এলাকায় আধিপত্য ধরে রাখতে গিয়ে দলের নেতা-কর্মীদের ওপর নির্যাতন চালিয়েছেন। জামায়াত-বিএনপি নেতাদের দলে নিয়ে ‘এমপি লীগ’ তৈরি করে সংগঠনকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছেন। সে কারণে অনেক ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতা-কর্মীরা দল থেকে অভিমান করে দূরে সরে আছেন। এসব আসনে প্রার্থী পরিবর্তন না হলে তাদের দলের জন্য মাঠে নামানো কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। আবার কিছু ভোটার আছে, যারা প্রতীক নয়, ব্যক্তি দেখেও ভোট দেন। তাই সার্বিক বিবেচনায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী চূড়ান্ত করবে। আবার কিছু মনোনয়নপ্রত্যাশী কালেভদ্রে এলাকায় গিয়ে মোটর শোভাযাত্রা করে এলাকায় হুলস্থূল ফেলে দিচ্ছেন। কেউ কেউ কেন্দ্রের বড় বড় নেতার সঙ্গে ছবি, সেলফি তুলে এলাকায় পোস্টার সাঁটিয়ে নিজেকে ‘নেতার কাছের মানুষ’ হিসেবে জানান দিচ্ছে। এতে সাধারণ মানুষও বিভ্রান্ত হচ্ছেন, আসলে কে পাচ্ছেন আগামীতে নৌকার মনোনয়ন।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দলীয় সভানেত্রী বিভিন্ন মাধ্যমে জরিপ চালিয়েছেন। সেই জরিপে যারা এগিয়ে থাকবেন তাদেরই নৌকার টিকিট তুলে দেবেন প্রধানমন্ত্রী। যারা ইমেজ সংকটে রয়েছেন, তাদের মনোনয়ন দেওয়া হবে না।

সর্বশেষ খবর