শনিবার, ৬ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

হলি আর্টিজানের মতো হামলার পরিকল্পনা

চট্টগ্রামে জঙ্গি আস্তানায় র‌্যাবের অভিযান, গোলাগুলি নিহত ২

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

হলি আর্টিজানের মতো হামলার পরিকল্পনা

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের একটি বাড়িকে ঘিরে গতকাল গভীর রাত থেকে সকাল পর্যন্ত র‌্যাবের সঙ্গে নব্য জেএমবি সদস্যদের প্রচণ্ড গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এক পর্যায়ে আত্মঘাতী বোমায় দুই জঙ্গি নিহত হয়েছে। পরে ঘটনাস্থল থেকে ঢাকার হলি আর্টিজানে ব্যবহূত হয়েছে এমন অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে একটি একে-২২, তিনটি পিস্তল, পাঁচটি অবিস্ফোরিত আইইডি,  বোমা তৈরির সরঞ্জাম এবং জিহাদি বই। র‌্যাব জানিয়েছে, ঢাকার গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারির মতো বন্দর নগরীর চট্টগ্রামেও বড় ধরনের হামলার পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নেমেছিল নব্য জেএমবি। এর অংশ হিসেবে দেশের অর্থনীতির লাইফলাইনখ্যাত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের মাঝামাঝিতে অবস্থান নিয়েছিল জঙ্গিরা। কয়েক দিনের মধ্যে চট্টগ্রাম আদালত ভবনসহ গুরুত্বপূর্ণ কিছু স্থাপনায় হামলার লক্ষ্য ছিল তাদের। কিন্তু র‌্যাবের তৎপরতায় চট্টগ্রামে বড় ধরনের হামলার সেই পরিকল্পনা নস্যাৎ হয়ে গেছে। সূত্রের তথ্যানুযায়ী, গত বৃহস্পতিবার রাতে মীরসরাই উপজেলার জোরারগঞ্জ সদরের উত্তর সোনাপাহাড় এলাকায় এ আস্তানাটির খবর পেয়ে অভিযান পরিচালনা করে র‌্যাব। অভিযানে নব্য জেএমবির সদস্যদের সঙ্গে গোলাগুলি ও বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় আত্মঘাতী বোমায় নিহত হয় দুই জঙ্গি। বাড়ির মালিক মাজহার চৌধুরী ও কেয়ার টেকার ‘হক সাব’কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করার পর র‌্যাব এই জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পায়। স্থানীয় ও র‌্যাব সূত্রে জানা গেছে, আস্তানাটির অবস্থান উত্তর সোনাপাহাড় এলাকার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ও ঢাকা-চট্টগ্রাম রেললাইনের কয়েক শ গজের মধ্যে। টিনশেডের বাড়িটির নাম ‘চৌধুরী ম্যানশন’। বাড়ির মালিক মাজহারুল হক পাঁচ কক্ষের বাড়িটি ভাড়া দিয়ে পার্শ্ববর্তী এলাকায় ভাড়া থাকেন। ‘হক সাব’ নামে এক ব্যক্তি বাড়িটির তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্ব পালন করেন। গতকাল রাত ৩টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের এক লেন বন্ধ করে দিয়ে র‌্যাব অভিযান শুরু করে। প্রথমে তারা মাইকে জঙ্গিদের আত্মসমর্পণের অনুরোধ জানায়। কিন্তু জঙ্গিরা আত্মসমর্পণ না করে গুলি ছুড়তে শুরু করে। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে প্রচণ্ড গোলাগুলি হয়। ভোর ৪টা ২২ মিনিটের দিকে ভিতরে কয়েকটি বিস্ফোরণ ঘটে। এতে বাড়ির টিনের চাল উড়ে যায় এবং বাড়ির ভিতরাংশ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। এ অবস্থায় র‌্যাবের অভিযান সাময়িক বন্ধ রাখা হয়। সকাল ৯টায় ঢাকা থেকে বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দল এলে ফের অভিযান শুরু হয়। বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দলের সদস্যরা ঘটনাস্থলে তল্লাশি চালিয়ে দুটি আইইডি (ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) পান। বাড়ির ভিতরে তল্লাশি চালিয়ে পাওয়া যায় আরও তিনটি আইইডি। দুপুর দেড়টার দিকে বাড়ি থেকে নিহতদের লাশ উদ্ধার করে প্রথমে জোরারগঞ্জ থানায় এবং পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য নেওয়া হয়। র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান জানান, ওই বাড়িতে অবস্থান নিয়ে চট্টগ্রামে বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা ছিল নব্য জেএমবির সদস্যদের। তাদের হামলার পরিকল্পনায় চট্টগ্রাম আদালত ভবন ছাড়াও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ছিল। চৌধুরী ম্যানশনে যেসব অস্ত্র ও বিস্ফোরক পাওয়া গেছে, তার মধ্যে একে টোয়েন্টি-টু রাইফেল গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলায় ব্যবহূত হয়েছিল। অভিযানে ছিলেন র‌্যাবের এমন এক কর্মকর্তা জানান, সেখানে জঙ্গিদের শক্তিশালী যে অবস্থান দেখেছেন, যা এর আগে দেখেননি। জঙ্গিরা বলেছিল, যদি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অগ্রসর হয়, তাহলে বাসস্থানকে কবরস্থান বানিয়ে ফেলা হবে। শেষ পর্যন্ত তাই হয়েছে। তারা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে বাড়িটিকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। পরে দুজনের ছিন্নভিন্ন লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আমাদের মীরসরাই প্রতিনিধি আনোয়ার হোসেন জানান, সোহেল নামের এক যুবক তার স্ত্রী ও শাশুড়িকে নিয়ে থাকবেন বলে গত ২৯ সেপ্টেম্বর ৩টি কক্ষ ৫ হাজার টাকায় ভাড়া নেন। তারা বাড়িটি ঘেঁষে অবস্থিত বিএসআইএম স্টিল মিল কারখানায় চাকরি করেন বলে জানিয়েছিলেন। নাঈম নামের অপর একজন অপর দুটি কক্ষ ভাড়া নেন। তবে অভিযানের সময় সেখানে মাত্র দুজন ছিলেন। নারী জঙ্গিসহ জেএমবির ৪ সদস্য ওই বাড়িতে উঠেছিল বলে র‌্যাবের কাছে গোয়েন্দা তথ্য থাকলেও তাদের পাওয়া যায়নি। বাড়িতে ওঠার পরই ওই নারী সেখান থেকে চলে যান। এ ভবনে বসবাস করা পুরুষরা স্থানীয় কারও সঙ্গেই কথা বলতেন না বলে স্থানীয়রা জানান। এদিকে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের উচ্চ পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা গতকাল বিকালে বলেন, সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে যে কোনো সময় নাশকতার মাধ্যমে জঙ্গি সংগঠনগুলো নিজেদের শক্তির জানান দিতে পারে— এমন আশঙ্কা করে সম্প্রতি নগর পুলিশকে বার্তা পাঠিয়েছে সদর দফতর। এ পরিপ্রেক্ষিতে আগের চেয়ে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।

সর্বশেষ খবর