রবিবার, ৭ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

অর্থনীতিতে নির্বাচনী পাঁচ চ্যালেঞ্জ

খেলাপি ঋণ কমানো, বিনিয়োগ পরিস্থিতির উন্নয়ন, বৈদেশিক শ্রমবাজার ও দেশীয় কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, সরকারের দেশি-বিদেশি ঋণ নিয়ন্ত্রণ ও প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা

মানিক মুনতাসির

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ও নির্বাচনের পর দেশের আর্থিক খাতে স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে এ মুহূর্তে বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতিতে পাঁচটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে বলে মনে করে বিশ্বব্যাংক। চ্যালেঞ্জগুলো হচ্ছে-উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জনের বর্তমান ধারা অব্যাহত রাখা। সংকটে পড়া ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ যে কোনো উপায়ে কমিয়ে আনা। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ পরিস্থিতির উন্নয়ন। বৈদেশিক শ্রমবাজার সম্প্রসারণ ও রেমিট্যান্সের নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি থেকে বেরিয়ে আসার পাশাপাশি  অভ্যন্তরীণ কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করা। চলমান উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন কাজ অব্যাহত রাখা। সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের প্রকাশিত বাংলাদেশের অর্থনীতির হালনাগাদ চালচিত্র (বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট) এ এসব চ্যালেঞ্জের কথা বলা হয়েছে। এছাড়া প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রভাব বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও পড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। সেসঙ্গে ডলারের বাজারে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা অস্থিরতার অবসান ঘটাতে না পারলে আমদানি-রপ্তানিতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করে বিশ্বব্যাংক।

বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন এ প্রসঙ্গে বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি মোটামুটি স্থিতিশীল রয়েছে। এ অবস্থা ধরে রাখতে হলে অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধি করতে হবে। বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। বাংলাদেশের জিডিপির পরিমাণ ৭ বা ৬ শতাংশ বড় কথা নয়, আসলে এই উচ্চ প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে হবে। মূল্যস্ফীতি কিছুটা নিম্নগামী, এটাও ধরে রাখতে হবে।  বিশ্বব্যাংক স্থানীয় পরিসংখ্যান ও উপাত্তের ভিত্তিতে মনে করে, দেশের ব্যাংক খাতে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ৬ ব্যাংকেই  খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৪৮ শতাংশ। এতে দেশে মূলধন ঘাটতি দেখা দেবে। এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে সতর্ক থাকতে হবে। বিশ্ববাংকের মতে, খেলাপি ঋণের পরিমাণ যে কোনো উপায়ে কমিয়ে আনতে হবে। বিশাল পরিমাণ এই খেলাপি ঋণের কারণে আগামী জাতীয় বাজেটে চাপ আসবে। বিশ্বব্যাংকের মতে, বাংলাদেশে মূলধন ঘাটতি মোকাবিলায় ব্যাংক ঋণের সুদহার কমানো, সঞ্চয়পত্রের সুদহার কমানো ও রাজস্ব ব্যবস্থায় প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে রেমিটেন্স ধরে রাখতে হবে, যেটা গত কয়েক বছর কিছুটা কমে গেছে। তাছাড়া রপ্তানি আয় ও ব্যক্তি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাধাগুলো দূর করতে হবে। সরকার চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে ৭ দশমিক ৮ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরেছে। এটা অর্জন করা সম্ভব হবে না। তবে সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হতে পারে বলে মনে করে বিশ্বব্যাংক। ২০২১ সালের মধ্যে উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি পেতে হলে বাংলাদেশকে আরও অনেকগুলো লক্ষ্য অর্জন করতে হবে। যদিও মাথাপিছু আয়সহ তিনটি মানদণ্ডে ইতিমধ্যে বাংলাদেশ উন্নীত হয়েছে। বিশ্ব সংস্থাটি মনে করে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হলে বাংলাদেশের অর্থনীতির উচ্চতর প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা হবে আরও চ্যালেঞ্জের। কেননা বিশ্ব বাণিজ্যে বাংলাদেশ বিভিন্ন দেশে যে ডিউটি ও কোটামুক্ত সুবিধায় রপ্তানি করে তা সীমিত হয়ে যাবে। পাশাপাশি বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীর কাছ থেকে পাওয়া নমনীয় ঋণের পরিমাণও কমে আসবে। তখন আরও অনেক বেশি সুদ গুনতে হবে বাংলাদেশকে। যার প্রভাব পড়বে বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে। ফলে দেশি-বিদেশি ঋণের ক্ষেত্রে আরও সতর্ক থাকতে হবে। বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের শ্রমবাজার নানা ঘাত-প্রতিঘাত অতিক্রম করছে। ফলে চলতি অর্থবছরেও রেমিট্যান্স প্রবৃদ্ধি কমেছে আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায়। এ জন্য বহির্বিশ্বে বাংলাদেশি শ্রমিকদের নতুন বাজার অনুসন্ধান করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে রপ্তানি আয় বাড়ানোর জন্য রপ্তানির নতুন বাজারও অনুসন্ধানের পরামর্শ দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। এর পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ কর্মসংস্থানের ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। দ্রুত বেকার সমস্যার সমাধান করতে না পারলে উন্নয়নশীল দেশ হওয়া সত্ত্ব্বেও এটা একটা বড় বোঝা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য। সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেলের দাম বাড়ছে। বাংলাদেশের অর্থনীতিও এর প্রভাবমুক্ত নয়। ফলে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হলে অন্য সব ধরনের জিনিসপত্রের দামও বাড়তে পারে। যা মূল্যস্ফীতির চাপকে উস্কে দিতে পারে বলে মনে করে বিশ্বব্যাংক। এদিকে প্রায় বছরব্যাপী ডলারের দাম বৃদ্ধি ও সরবরাহ সংকট আরও দীর্ঘায়িত হচ্ছে। ৮১-৮২ টাকার ডলার ছয় মাসের ব্যবধানে ৮৪-৮৫ টাকায় উঠেছে। যা দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে  দেশের আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার তাগিদ দিয়েছে বিশ্বব্যাংক।

সর্বশেষ খবর