রবিবার, ৭ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগসহ পুরোদমে কাজ করছে ইসি

তফসিল এখনো ঠিক হয়নি : সিইসি

গোলাম রাব্বানী

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের কাজ গোছানো পুরোদমে শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগ। নির্বাচনে প্রায় সাত লাখ কর্মকর্তার প্রয়োজন। ইসি সচিবালয় ইতিমধ্যে সারা দেশে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার প্যানেল তৈরির কাজ করছে। এ ছাড়া তফসিল ঘোষণার আগে-পরে দুই ধাপের অন্তত ৯০টি কাজ চিহ্নিত করে সে অনুযায়ী এগোচ্ছে সাংবিধানিক সংস্থাটি।

আসছে ৩০ অক্টোবর থেকে ২৮ জানুয়ারির মধ্যে একাদশ সংসদ নির্বাচন করার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা ইতিমধ্যে বলেছেন, ডিসেম্বরের শেষ দিকে ভোটের জন্য নভেম্বরের শুরুতে তফসিল দেওয়া হতে পারে। কমিশনের বৈঠকে ভোটের তারিখ চূড়ান্ত করা হবে। সেক্ষেত্রে ডিসেম্বরের শেষে অথবা জানুয়ারির শুরুতে ভোট হবে। শিক্ষার্থীদের সমাপনী পরীক্ষা ও বিশ্ব ইজতেমার সময়কেও বিবেচনায় নেবে কমিশন। ইসি কর্মকর্তারা জানান, নির্বাচনে ১০ কোটি ৪১ লাখেরও বেশি ভোটার থাকবে। ভোটকেন্দ্র হবে ৪০ হাজার ১৯৯টি। প্রতিটি কেন্দ্রে একজন করে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, প্রতি ভোটকক্ষে একজন করে সহকারী প্রিসাইডিং এবং প্রতিটি ভোটকক্ষে দুজন করে পোলিং কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়। সব মিলিয়ে সাত লাখের বেশি ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োজিত থাকবেন। প্রতি কেন্দ্রে থাকবে ১৫-১৮ জন নিরাপত্তা সদস্য। নির্বাহী ও বিচারিক হাকিমের নেতৃত্বে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কয়েক লাখ সদস্য। নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেছেন, ৩০ অক্টোবর থেকে নির্বাচনের দিন গণনা শুরু হবে। তাই ৩০ অক্টোবরের পর যে কোনো দিন তফসিল ঘোষণা হতে পারে। নির্বাচনের প্রস্তুতির ৮০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা প্রস্তুতি হিসেবে ভোটকেন্দ্রের তালিকা পেয়েছি। এ নির্বাচনের জন্য ৪০ হাজার ১৯৯টি কেন্দ্রের তালিকা পেয়েছি। এগুলো মোটামুটি ফাইনাল হয়ে গেছে। তফসিল ঘোষণার পর রিটার্নিং কর্মকর্তার দেওয়া তালিকা গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে। সচিব বলেন, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা, জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে যারা কাজ করবেন, তাদের তথ্যগুলো আমরা সংগ্রহ করছি। তফসিল ঘোষণার পরপরই তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ অঞ্চলভিত্তিক বা জেলাতে হবে। তিনি বলেন, তফসিল ঘোষণার পর ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের তালিকা প্রকাশ ও তাদের প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হবে, কারণ নির্বাচনের আগে অনেকের বদলি হতে পারে বা অবসরে যেতে পারেন। আমরা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরে আপডেট পাব।

ক্ষণ গণনা : ইসি সচিব হেলালুদ্দীন বলেন, গত সংসদের প্রথম অধিবেশন হয়েছিল ২৯ জানুয়ারি। সে হিসাবে এবার ভোটের ৯০ দিনের ক্ষণ গণনা শুরু হবে ৩০ অক্টোবর থেকে। এর আগে তিনি বলেন, নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে তফসিল ঘোষণা করার মতো প্রস্তুতি আছে আমাদের। নির্বাচন কমিশন এখনো ওইভাবে আলোচনা করেনি তারিখ নিয়ে। তবে ধারণা করা হচ্ছে, ডিসেম্বরের শেষার্ধে অথবা জানুয়ারির প্রথম দিকে জাতীয় নির্বাচন হবে।

ইসির কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রথম ধাপে ভোটকেন্দ্রের তালিকা, পুনর্নির্ধারিত সীমানা অনুযায়ী আসনভিত্তিক ভোটার তালিকা চূড়ান্ত করা, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স প্রস্তুত, নির্বাচন সামগ্রী কেনাকাটা, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্যানেল প্রস্তুত, প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ,  নির্বাচনী ম্যানুয়াল তৈরি, মনোনয়নপত্র মুদ্রণসহ আনুষঙ্গিক কাজ সেপ্টেম্বরে-অক্টোবরে শেষ করা হবে। তফসিল ঘোষণার পর শুরু হবে দ্বিতীয় ধাপের কাজ।

নির্বাচন ব্যবস্থাপনা ও সমন্বয় শাখার কর্মকর্তারা জানান, তফসিল ঘোষণার পর কর্মকর্তা নিয়োগ, মন্ত্রিপরিষদসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা, রিটার্নিং কর্মকর্তার জন্য পরিপত্র জারি, আচরণবিধি প্রতিপালন, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগ, নির্বাচনী তদন্ত কমিটি গঠন, নির্বাহী ও বিচারিক হাকিম নিয়োগে ব্যবস্থা, ভোটকেন্দ্রের গেজেট প্রকাশ, সাংবাদিক-পর্যবেক্ষকদের অনুমতি, মাঠপর্যায়ে সামগ্রী বিতরণ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে বৈঠক থাকবে। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা পাওয়ার পর ব্যালট পেপার মুদ্রণের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তা, রিটার্নিং কর্মকর্তা, মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে সভা এবং আইনশৃঙ্খলা প্রধানদের সঙ্গে ‘বিশেষ পর্যালোচনা বৈঠক’ কমিশন নির্ধারণ করবে। দ্বিতীয় দফা বৈঠক করে সেনাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েনের ‘টাইমফ্রেম’ নির্ধারণ করা হয়। আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের জন্য সেনাবাহিনী নিয়োগের সিদ্ধান্ত হলে সশস্ত্রবাহিনী বিভাগকে অনুরোধ করবে ইসি।

নির্বাচনের তফসিল এখনো ঠিক হয়নি : সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা বলেছেন, ‘নির্বাচনের তফসিল এখনো ঠিক হয়নি। এটা আরও পরে ঘোষণা করা হবে।’ ডিসেম্বরে নির্বাচন হবে— সরকারের জনৈক মন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ‘এমনটা আমরা বলিনি। উনারা যদি বলেন সেটা তাদের হিসাবমতো বলেছেন।’ গতকাল বিকালে সুনামগঞ্জ সরকারি জুবিলি উচ্চবিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত উন্নয়ন মেলায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) প্রদর্শনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। নির্বাচনে ইভিএমের ব্যবহার প্রসঙ্গে সিইসি বলেন, ‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা হবে, তবে সব কেন্দ্রে নয়, সীমিত আকারে শুরু করতে চাই। এ ক্ষেত্রে কোনো ত্রুটি পরিলক্ষিত হলে সে অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যারা নির্বাচনে ইভিএমের ব্যবহার নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছেন তারা এসে এর ব্যবহার দেখুক। আমার বিশ্বাস, দেখার পর তারা আশ্বস্ত হবেন।’ এ সময় জেলা প্রশাসক মো. আবদুল আহাদ, পুলিশ সুপার মো. বরকতুল্লাহ খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এর আগে উন্নয়ন মেলা উপলক্ষে সুনামগঞ্জ স্টেডিয়ামে আয়োজিত ঐতিহ্যবাহী কুস্তি খেলার উদ্বোধন করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। খেলায় গৌরারং ইউনিয়নকে হারিয়ে বিজয়ী হয় সাচনাবাজার ইউনিয়ন কুস্তি দল।

সর্বশেষ খবর