রবিবার, ৭ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

আসুন সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সমৃদ্ধ দেশ গড়ি : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

আসুন সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সমৃদ্ধ দেশ গড়ি : প্রধানমন্ত্রী

নিজের জীবনটাকে বাংলার জনগণের জন্য উৎসর্গ করেছেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘মানুষের সেবা করার চেয়ে বড় কাজ কিছু হতে পারে না। আমরা স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছি। এটা আমাদের ধরে রাখতে হবে। দেশের অগ্রযাত্রা, এই উন্নয়নের ধারাটা অব্যাহত রাখতে হবে। সবাই একসঙ্গে কাজ করে দেশকে উন্নত, সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলব। তাই আসুন, দেশকে আমরা সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় গড়ে তুলি।’ গতকাল বিকালে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসবভন গণভবনে লায়ন ও লিও মহাসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘মানুষের সেবা করা— এটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় কথা। মানুষের সেবা করা, মানুষের পাশে দাঁড়ানো— এর চেয়ে বড় কাজ আর কী হতে পারে! আমি আমার জীবনটাকে উৎসর্গ করেছি বাংলার জনগণের জন্য। এখানে আমার নিজের কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই। আর বাবা-মা, ভাই সবই হারিয়েছি। হারানোরও কিছু নেই।’ বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘শুধু একটা জিনিসই চাই, যে দেশকে আমার বাবা স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন, যে স্বপ্নটা তাঁর ছিল যে বাংলাদেশ হবে ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত বাংলাদেশ, এই বাংলাদেশকে সেভাবে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে আমরা গড়ে তুলতে চাই। আর সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করছি।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে বাংলাদেশ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। আজকে বাংলাদেশ বিশ্বে সম্মান পাচ্ছে, স্বীকৃতি পাচ্ছে। আগে আমরা বাঙালিরা বিদেশে গেলে সবাই বলত, ওহ্, বাংলাদেশ? ঘূর্ণিঝড়, দুর্ভিক্ষ ইত্যাদি ইত্যাদি। এখন আর সে কথা কেউ বলে না। বিদেশে গেলে নিশ্চয়ই আপনারা তা উপলব্ধি করতে পারেন। এখন বলে, বাংলাদেশ তো উন্নয়নের রোল মডেল।’ ৩ জুলাই আমেরিকার লাস ভেগাসে বিশ্বের সর্ববৃহৎ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন লায়ন্স ক্লাবস ইন্টারন্যাশনালের ১০১তম আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে ২১০টি দেশের ডেলিগেটদের ভোটে লায়ন কাজী আকরাম উদ্দিন আহমদ (পিএমজেএফ) আন্তর্জাতিক পরিচালক নির্বাচিত হন। অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন কাউন্সিল চেয়ারপারসন লায়ন মো. আমিনুল ইসলাম লিটন এমজেএফ। এ ছাড়া বক্তব্য রাখেন সাবেক আন্তর্জাতিক পরিচালক শেখ কবীর হোসেন। অনুষ্ঠানে লায়ন্স ক্লাবস্ ইন্টারন্যাশনালের নবনির্বাচিত ‘আন্তর্জাতিক পরিচালক’ লায়ন কাজী আকরাম উদ্দিন আহমদকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অগ্রগতির কথা তুলে ধরে বলেন, ‘আমাদের বাজেট সাতগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ বাজেট আগে করতে গেলে বিদেশিদের কাছে হাত পাততে হতো। আল্লাহর রহমতে এখন আর হাত পাততে হয় না। বাজেটের ৯০ ভাগ নিজস্ব অর্থায়নে আমরা করে থাকি। আগে আমাদের উন্নয়ন বাজেট যা হয়তো ২৫-৩০ হাজার কোটি টাকা ছিল, এখন ১ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন বাজেট আমরা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।’ বাংলাদেশের অগ্রগতি ধরে রাখতে লায়ন্স ক্লাবস ইন্টারন্যাশন্যালের সদস্যদের দায়িত্বের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে আমাদের লায়ন ও লিও সবার একটা দায়িত্ব রয়েছে। আপনারা যেমন সমাজসেবামূলক কাজ করেন, এ কাজের মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের দেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে পারি। আমরা একসঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করব সেটাই আমাদের লক্ষ্য। দেশকে আমাদের উন্নত করতেই হবে।’ লায়ন্স ক্লাবস ইন্টারন্যাশনালের প্রশংসা করে শেখ হাসিনা বলেন, লায়ন্স ক্লাবস ইন্টারন্যাশনাল জাতিসংঘের কনসালটেটিভ স্ট্যাটাস পাওয়া বিশ্বের সর্ববৃহৎ মানবসেবামূলক সংগঠন। সমাজের দুস্থ ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর কল্যাণে নিবেদিত এই সংগঠন ১০০ বছরের বেশি সময় ধরে বিশ্বের ২০০টিরও অধিক দেশে মানবসেবায় কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে একটি মাল্টিপল জেলার আওতায় ছয়টি জেলার মাধ্যমে প্রায় ২০ হাজার লায়ন এবং পাঁচ হাজার লিও সদস্য দুস্থ মানবতার কল্যাণে কাজ করে চলেছেন। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিশেষ করে অন্ধত্ব দূরীকরণ, ডায়াবেটিস ও শিশুক্যান্সার প্রতিরোধ কর্মসূচির পাশাপাশি প্রাকৃতিক দুর্যোগে এবং বিভিন্ন জনকল্যাণে লায়ন ও লিও সদস্যরা দেশের দুস্থ মানুষের পাশে এসে দাঁড়ান। তাই একটি আধুনিক সমাজ বিনির্মাণে লায়নদের কার্যক্রম প্রশংসার দাবিদার।

রোহিঙ্গারা বোঝা, তাদের ফিরিয়ে দেওয়ার কাজ শুরু হবে : বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া জোরপূর্বক বিতাড়িত মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিকদের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে আমাদের ওপর একটা বোঝা এসেছে, মিয়ানমারের শরণার্থী। প্রায় ১১ লাখ শরণার্থী আজকে আমাদের দেশে আশ্রয় নিয়েছে। ’৭১ সালে ভারতে আশ্রয় নেওয়া আমাদের শরণার্থীদের কথা যখন স্মরণ করি, তখন তাদের আশ্রয় না দিয়ে পারিনি।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার ছোট বোন রেহানা এখানে ছিল। সে আমাকে বলল, ১৬ কোটি মানুষকে ভাত খাওয়াও তুমি। আর এই যে নির্যাতিত মানুষগুলো, একাত্তরে আমাদের বাঙালিরা যেভাবে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী দ্বারা নির্যাতিত হয়েছিলাম, এরাও ঠিক একই রকম নির্যাতনের শিকার। আজকে তাদের তুমি খাওয়াতে পারবে না? আমি বললাম, নিশ্চয়ই পারব। প্রয়োজনে নিজেদের খাবার ভাগ করে খাব।’ রোহিঙ্গা সংকটে কূটনৈতিক সফলতার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে তাদের আমরা আশ্রয় দিয়েছি। পাশাপাশি আমাদের কূটনৈতিক সাফল্য এইটুকুই, আমরা প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে ঝগড়া করিনি, তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। আলোচনার মাধ্যমে চুক্তি সই করেছি। তারা রাজি হয়েছে ফিরিয়ে নেবে। যদিও এখনো ফিরিয়ে নেওয়া শুরু করেনি, এর পরও আমরা আলোচনা করে চাইছি এদের ফিরিয়ে দিতে।’ তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিকভাবে আজকে যে সমর্থন বাংলাদেশ পেয়েছে এবং সেই সঙ্গে (মিয়ানমারকে) চাপ প্রয়োগ করেছে, আমরা আশা করি তাদের (রোহিঙ্গা) ফিরিয়ে দেওয়ার কাজ শুরু করতে পারব।’

সর্বশেষ খবর