পুরনো ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ীই চিকিৎসা চলছে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার। নতুন করে কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা গতকাল পর্যন্ত করা হয়নি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল ইউনিভার্সিটি (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে বেগম জিয়ার চিকিৎসার সব কাগজপত্র পরীক্ষা শেষে আগের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ীই চিকিৎসা চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে পাঁচ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড। গতকাল দুপুরে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে এক সংবাদ সম্মেলনে জানান বিএসএমএমইউর পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হারুন অর রশীদ। এর আগে মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চাইলে তিনি বিশ্রামে থাকায় তা সম্ভব হয়নি। ফলে আজ তার সঙ্গে দেখা করে কথা বলবেন বলে আশা করছেন তারা। বিস্তারিত জানার পর চাহিদামতো নতুন চিকিৎসা প্রদানেরও সিদ্ধান্ত নেবে বোর্ড। এদিকে গতকাল পাঁচ সদস্যের মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ডা. সজল কুমার ব্যানার্জির স্থলে হৃদরোগ বিভাগের চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. তানজিনা পারভীনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের সাজাপ্রাপ্ত বেগম খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য গত শনিবার বিএসএমএমইউতে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি কেবিন ব্লকের ছয়তলার একটি কক্ষে রয়েছেন। পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হারুন অর রশীদ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, মেডিকেল বোর্ডের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল জলিল চৌধুরী শনিবার তাকে (খালেদা জিয়া) দেখেছেন। আজ (রবিবার) পাঁচ সদস্যের বোর্ড সদস্যরা বেলা সাড়ে ১১টা থেকে পৌনে ১২টার পর্যন্ত সেখানে ছিলেন এবং তার সব ডকুমেন্ট, কাগজপত্র, দলিল-দস্তাবেজ দেখে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তার চিকিৎসা বোর্ড পুনরায় না বসা পর্যন্ত আগে যে চিকিৎসাগুলো চলছিল তা-ই অব্যাহত থাকবে।
ব্যারিস্টার মওদুদের আপত্তি : গতকাল দুপুরের পর খালেদা জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের নেতৃত্বে আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী, অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার কায়সার কামালসহ চার সদস্যের একটি আইনজীবী প্রতিনিধি দল বিএসএমএমইউর পরিচালকের সঙ্গে দেখা করেন। এ সময় তারা বেগম জিয়ার চিকিৎসা যেন আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী হয় সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ জানান। একই সঙ্গে পুনর্গঠিত মেডিকেল বোর্ডের দুজন সদস্যের বিষয়ে তাদের আপত্তির কথা জানান। পরে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ হাসপাতালে সাংবাদিকদের বলেন, আমরা উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী মেডিকেল বোর্ড পুনর্গঠন করাসহ বেগম খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে পরিচালককে বলেছি। এটা না হলে আমরা আবার আদালতের কাছে যাব।
জামিন বহাল প্রশ্নে আদেশ ১৪ অক্টোবর : জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন বহাল থাকবে কি-না, এ বিষয়ে আদেশের জন্য ১৪ অক্টোবর দিন ঠিক করেছে আদালত। গতকাল খালেদা জিয়ার আইনবীজীদের বক্তব্য শুনে ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান আদেশের জন্য নতুন এ দিন ঠিক করেন। রাজধানীর পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থাপিত অস্থায়ী এজলাসে মামলাটির বিচার চলছে। অসুস্থতার কারণে খালেদা জিয়াকে সাত মাসে একবারও আদালতে হাজির করতে না পারায় কারাগারের ভিতরে বিশেষ এজলাস বসিয়ে তার বিচারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু তারপরও খালেদা জিয়াকে আদালতে আনতে না পেরে গত ২০ সেপ্টেম্বর তার অনুপস্থিতিতেই বিচার চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত দেন বিচারক। খালেদা জিয়া উপস্থিত না থাকলেও তার আইনজীবীরা প্রতিটি ধার্য তারিখে জামিন বাড়ানোর আবেদন করে আসছেন এবং বিচারকও তা মঞ্জুর করে আসছিলেন। এ নিয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর আপত্তিতে গত ৩০ সেপ্টেম্বর আদালত ‘খালেদা জিয়ার জামিন কেন বাতিল করা হবে না’— সেই ব্যাখ্যা জানতে চেয়ে তার আইনজীবীদের নোটিস দেয়। এ বিষয়ে শুনানি ও আদেশের জন্য ৭ অক্টোবর দিন রাখা হয়। এর মধ্যে শনিবার খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য কারাগার থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গতকাল খালেদা জিয়ার আইনজীবী অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া ও মাসুদ আহমেদ তালুকদার আদালতের নোটিসের বিষয়ে তাদের জবাব দেন। আর রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন মামলার বাদী দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল। শুনানি শেষে বিচারক বিষয়টি ১৪ অক্টোবর আদেশের জন্য রাখেন।এই বিচারকের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে হাই কোর্টে যেতে দুই আসামির আইনজীবীরা যে সময়ের আবেদন করেছিলেন এবং আসামিপক্ষের আইনজীবীরা যুক্তিতর্কে অংশ না নেওয়ায় বিচারের ওই অংশটি বাদ রেখেই রায়ের তারিখ নির্ধারণের জন্য রাষ্ট্রপক্ষ যে আবেদন কমরছিল— সেসব আবেদনের আদেশও ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত পিছিয়ে দেন বিচারক। এ ছাড়া খালেদার অনুপস্থিতিতে বিচারকাজ চালানোর বিষয় বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামানের দেওয়া আদেশ চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে খালেদা জিয়ার আবেদনের বিষয়ে আদেশ আনার জন্য তার আইনজীবীদের ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়। কারাগারে খালেদার অবস্থানকে কেন্দ্র করে অন্যান্য দিন নাজিম উদ্দিন রোডে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকলেও গতকাল তা অনেকটা শিথিল দেখা যায়। পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে দিয়ে শুনানির অন্য দিন যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখা হলেও এদিন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তা করেনি।