মঙ্গলবার, ৯ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

জলবায়ুর পরিবর্তনে মহাবিপর্যয়ে পৃথিবী

আছে আর ১২ বছর : জাতিসংঘের প্রতিবেদন

প্রতিদিন ডেস্ক

জলবায়ুর পরিবর্তনে মহাবিপর্যয়ে পৃথিবী

পদ্মার ভাঙনের মুখে বাড়িঘর অন্যত্র নিয়ে গেছে এখানে থাকা পরিবারটি। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে বিপুল মানুষ ক্ষতির মুখে —এএফপি

বিশ্বের নেতৃস্থানীয় বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন, কার্বন নিঃসরণের বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে ১২ বছরের মধ্যে পৃথিবীতে খরা, বন্যা আর ভয়াবহ তাপপ্রবাহের মতো মহাবিপর্যয় নেমে আসতে পারে। তাই ২০৫০ সালের মধ্যে ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পড়বে বাংলাদেশ। সূত্র : রয়টার্স।

জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক আন্তরাষ্ট্রীয় প্যানেল (আইপিসিসি) তাদের এক বিশেষ প্রতিবেদনে এই সতর্কবাণী দিয়েছে। গতকাল প্রকাশ করা ‘গ্লোবাল ওয়ার্মিং অব ১.৫ ডিগ্রি’ শিরোনামে ৭২৮ পৃষ্ঠার এ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এক্ষুনি পদক্ষেপ না নিলে ২০৩০ থেকে ২০৫২ সালের মধ্যে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির হার ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করবে। উষ্ণতা বৃদ্ধির বিপর্যয়পূর্ণ এই মাত্রা এড়াতে ‘সমাজের সবক্ষেত্রে দ্রুত, বহুদূরপ্রসারিত ও নজিরবিহীন পরিবর্তন’র অপরিহার্যতা তুলে ধরেছেন ওই বিজ্ঞানীরা। তবে উষ্ণতা বৃদ্ধির হার ঠেকানোর ওই চ্যালেঞ্জ বিশ্ব আদৌ মেটাতে পারবে কিনা তা নিয়ে নিঃসংশয়ী হতে পারছে না জাতিসংঘের প্যানেল। প্রতিবেদন বলছে, ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশেও উষ্ণতা বৃদ্ধির প্রভাব ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। মিঠা পানির মাছ চাষের ওপর নির্ভরশীল পরিবারগুলো বিপাকে পড়বে। জায়গার অভাব ও স্থানীয় ব্যবস্থায় নির্ভরশীল হয়ে পড়ায় তাদের অন্যত্র সরে যাওয়াও কঠিন। উন্নয়নশীল দ্বীপ রাষ্ট্রগুলো (সিডস) সবচেয়ে  বেশি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। মূলত অভ্যন্তরীণ স্থানান্তর ও বাস্তুচ্যুত হওয়া এবং মানিয়ে নেওয়ার সীমাবদ্ধতার কারণে চ্যালেঞ্জ বেশি থাকবে। প্রতি ডিগ্রি উষ্ণতা বৃদ্ধিতে সামুদ্রিক মাছ চাষের শিল্প ৩০ লাখ মেট্রিক টন কম মাছ  পেতে পারে। আর এর প্রভাব বেশি পড়বে আর্কটিক ও ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে। ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির হার সর্বোচ্চ দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসে ধরে রাখার জন্য খুব  বেশি সময় হাতে নেই। গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণের বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে ২০৩০ থেকে ২০৫২ সালের মধ্যে উষ্ণতা বৃদ্ধির হার শিল্প বিপ্লব পূর্ববর্তী সময়ের সাপেক্ষে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করবে। এই ভয়াবহ পরিস্থিতি এড়াতে ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণের হার ২০১০ সালের তুলনায় ৪৫ শতাংশ কমিয়ে আনতে হবে। আর ২০৫০ সাল নাগাদ কার্বন নিঃসরণের হার শূন্যে নামিয়ে আনতে হবে। এক্ষেত্রে জ্বালানি, শিল্প, ভবন, পরিবহন ও শহরগুলোতে ব্যাপক পরিবর্তন আনতে হবে।’ বিশ্ব এখনো ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস হারে উষ্ণ হচ্ছে। উষ্ণতা বৃদ্ধির এ হার যেন স্থিতিশীল থাকে, তা নিশ্চিত করতে আগামী কয়েক বছরে তাৎপর্যপূর্ণ ব্যবস্থা নেওয়ার ওপর  জোর দিয়েছেন জলবায়ু বিজ্ঞানীরা। মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের জলবায়ু বিজ্ঞানবিষয়ক শিক্ষক অ্যান্ড্রু কিং এক বিবৃতিতে বলেন, ‘এটা উদ্বেগের, কারণ আমরা জানি, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির হার ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করলে অনেক সমস্যা হবে। বিশ্বের অনেক জায়গায় তাপদাহ দেখা দেবে, উত্তপ্ত গ্রীষ্ম দেখা যাবে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাবে এবং ভয়াবহ খরা ও ভারি বর্ষণ হবে।

সর্বশেষ খবর