মঙ্গলবার, ৯ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরে কার্যকর হলো ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন

সাংবাদিক নেতাদের উদ্বেগ

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ডিজিটাল নিরাপত্তা বিলসহ জাতীয় সংসদে পাস হওয়া সাতটি আইনে সম্মতি স্বাক্ষর দিয়েছেন। ফলে এসব আইন কার্যকর হতে আর কোনো বাধা রইল না। রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের পর বিল আইন হিসেবে গণ্য হয়। এখন এটি গেজেট আকারে প্রকাশ করবে সরকার। সম্পাদক পরিষদ, সাংবাদিক ও বিভিন্ন মহলের আপত্তি ও উদ্বেগ উপেক্ষা করেই ডিজিটাল নিরাপত্তা বিলে সম্মতি দিলেন রাষ্ট্রপতি।

সংসদ সচিবালয় গতকাল এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, রাষ্ট্রপতি দশম জাতীয় সংসদের ২২তম অধিবেশনে জাতীয় সংসদে গৃহীত সাতটি বিলে সদয় সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে বহুল আলোচিত— ডিজিটাল নিরাপত্তা বিল-২০১৮, সড়ক পরিবহন বিল-২০১৮, ‘আল-হাইআতুল উলয়া লিল-জামি’য়া আতিল কওমিয়া বাংলাদেশ’-এর অধীন কওমি মাদ্রাসাসমূহের দাওরায়ে হাদিস (তাকমিল)-এর সনদকে মাস্টার্স ডিগ্রি (ইসলামিক স্টাডিজ ও আরবি)-এর সমমান প্রদান বিল-২০১৮, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ বিল-২০১৮, পণ্য উৎপাদনশীল রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পপ্রতিষ্ঠান শ্রমিক (চাকরির শর্তাবলি) বিল-২০১৮, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট বিল-২০১৮ ও কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট বিল-২০১৮। গত ১৯ সেপ্টেম্বর সংসদে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাস হয়। সম্পাদক পরিষদ ওই আইনের ৮, ২১, ২৫, ২৮, ২৯, ৩১, ৩২, ৪৩ ও ৫৩ ধারা নিয়ে আপত্তি জানায়। পাশাপাশি বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাও এই আইন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে। আইনের এসব ধারায় বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেফতারসহ পুলিশকে দায় মুক্তি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আইনের ধারায় অফিশিয়াল সিক্রেসি অ্যাক্ট যুক্ত করায় ‘বাকস্বাধীনতা এবং সাংবাদিকদের স্বাধীনতা’ হুমকির মুখে পড়বে বলে তারা আশঙ্কা ব্যক্ত করেন। এ বিষয়ে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার গত ৩০ সেপ্টেম্বর বৈঠক করেন। বৈঠকে সম্পাদকরা এই আইন সংশোধনের দাবি জানান। এ সময় আইনটির আপত্তিকৃত ধারাগুলো নিয়ে মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে আলোচনার আশ্বাস দেন। আইনটি সংসদে পাসের আগেও সংসদীয় কমিটির বৈঠকে অংশ নিয়ে সাংবাদিক ও সম্পাদক পরিষদের নেতরা সুনির্দিষ্ট আটটি ধারায় আপত্তি করে তা সংশোধনের সুপারিশ করে। তবে তা আমলে নেওয়া হয়নি। এ আইনের ৩২ ধারা বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি ‘অফিশিয়াল সিক্রেট অ্যাক্ট-১৯২৩ এর আওতাভুক্ত কোনো অপরাধ কম্পিউটার, ডিজিটাল ডিভাইস, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক, ডিজিটাল নেটওয়ার্ক বা অন্য কোনো ডিজিটাল মাধ্যমে সংঘটন করে বা করতে সহায়তা করেন, তা হলে তিনি সর্বোচ্চ ১৪ বছরের কারাদণ্ড বা ২৫ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। এ আইনের অধীনে সংঘটিত অপরাধের জন্য বিনা পরোয়ানায় তল্লাশি, জব্দ ও গ্রেফতারে পুলিশকে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।

এখনো সংশোধনের সুযোগ আছে : যে কয়টি ধারায় উদ্বেগ আছে সেগুলো সংশোধনের সুযোগ আছে। বিশেষ করে ৪৩ ধারা এবং ৩২। এর কতগুলো সংজ্ঞা নিয়ে আমাদের উৎকণ্ঠা আছে। যতটুকু বিধি দিয়ে সংশোধন করা যায় সেটা করার উদ্যোগ নিতে হবে। অথবা বিশেষ বিধান করে সরকার সংশোধন করতে পারে। গতকাল বেসরকারি একটি টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারিত এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন একুশে টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মনজুরুল আহসান বুলবুল। তিনি আরও বলেন, উদ্বেগগুলোকে সামনে নিয়ে সরকার নিজে কিছু করতে পারে। যেমন ৫০১, ৫০২ ধারায় বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। আইনটি ঠিকই থাকবে, কিন্তু সাংবাদিকদের ক্ষেত্রে প্রয়োগের বেলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি না করে সমন জারি করতে হবে। ৫৭ ধারা নিয়ে উৎকণ্ঠার সময় আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে গিয়েছিলাম। তিনি একটা নির্দেশনা দিয়েছিলেন যে, ৫৭ ধারা প্রয়োগের ক্ষেত্রে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিতে হবে। দুর্নীতি দমন আইনে বলা হয়েছে, সরকারি কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যদি দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত হয়, চার্জশিট হয় তাহলে তাকে গ্রেফতারের সময় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিতে হবে। সরকার যদি উৎকণ্ঠা আতঙ্ক চিহ্নিত করতে চায় তাহলে সেটার সুযোগ আছে। তিনি আরও বলেন, সংসদীয় কমিটিতে আমরা যদি তৃতীয় বৈঠকটি করতে পারতাম তাহলে অনেক সমস্যার সমাধান আসত। কেন তারা তৃতীয় বৈঠকটি করলেন না, কেন এত তাড়াহুড়া করলেন সেটা তারাই ভালো বলতে পারবেন।

সর্বশেষ খবর