বুধবার, ১০ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

যেভাবে জজ মিয়া নাটক মঞ্চস্থ হয়েছিল

নিজস্ব প্রতিবেদক

যেভাবে জজ মিয়া নাটক মঞ্চস্থ হয়েছিল

একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার অন্যতম আলোচিত জজ মিয়া এখন জালাল নামে পরিচিত। জাতীয় পরিচয়পত্রে তার নাম মো. জালাল আহমেদ। গাড়ি চালানোর লাইসেন্সেও ব্যবহার করেছেন এই নাম। তবে জজ মিয়া পরিচয় প্রকাশ পেলেই বদল করেন ঠিকানা। জজ মিয়া বলেন, এ নামটি শুনলে এখনো ভয়ে আঁতকে উঠি। গ্রামের সহজ-সরল এই যুবককে ক্রসফায়ারের ভয়  দেখিয়ে স্বীকারোক্তি    আদায় করে জজ মিয়া নাটকের জন্ম দেওয়া হয়। কিন্তু পরবর্তী সময়ে মামলাটি অধিক তদন্তের পর এর রহস্য উন্মোচিত হয়। বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে আলাপকালে জজ মিয়া বলেন, ‘ভাই, ‘জজ মিয়া’ নামটি শুনলেই আমার ভয় লাগে। জজ মিয়া নাম শুনলেই মানুষ আমারে সন্দেহ করে। সবাই আমারে এড়াইয়া যাইত। আপনাগো কাছে আমি কৃতজ্ঞ। আপনারা আমারে স্বাভাবিক জীবনে ফিরাইয়া আনছেন।’

বর্তমানে জজ মিয়া তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে রাজধানীর কদমতলী থানা এলাকার রায়েরবাগে বসবাস করছেন। আগে সাইনবোর্ড এলাকায় থাকলেও জজ মিয়া নামটি মানুষ জেনে  ফেলার কারণে ওই এলাকা ছেড়ে দেন তিনি। ওই সময়ের দুঃসহ স্মৃতি মনে করে জজ মিয়া বলেন, ‘ওই দিন (২১ আগস্ট ২০০৪) আমি বাড়িতে বাবুলের চায়ের দোকানে ছিলাম। টেলিভিশনে দেখে এলাকার লোকজনের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলি। সেখানে গ্রামের মুরব্বিরা সবাই ছিলেন। কিন্তু  সেই আমাকেই কি না বানানো হয় গ্রেনেড হামলাকারী! সেনবাগ থানায় এসপি রশীদ সাব (সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার আবদুর রশিদ) ক্রসফায়ারে মারার ভয় দেখিয়ে বলেন, যা শিখিয়ে দিব সেগুলো কোর্টে বলতে হবে। তাই প্রাণভয়ে কোর্টে স্বীকারোক্তি দিই।’ জজ মিয়া বলেন, ‘ওই সময় আমি মতিঝিল শাপলা চত্বর এলাকায় হকারি করে ফল বিক্রি করতাম। মাঝেমধ্যে স্টেডিয়াম মার্কেট এলাকায় পোস্টার বিক্রি করতাম। দুই-তিন মাস পর পর বাড়িতে  যেতাম। ২১ আগস্টের সাত-আট মাস পর আমাকে বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রামের চৌকিদার বাড়িতে এসে বলেন,  তোমার নামে থানায় মামলা আছে। থানা থেকে কবির দারোগা (ওই সময় সেনবাগ থানার এসআই কবির হোসেন) আসতেছে। তুমি এখানে বসো। এরপর সেনবাগ থানার কবির দারোগা এসে আমাকে হ্যান্ডকাফ লাগান। আমার এলাকার জামাল মেম্বার (ইউপি মেম্বার) কবির দারোগাকে জিজ্ঞেস করেন, কী হয়েছে? কিন্তু তিনি কোনো জবাব দেননি। থানায় নেওয়ার পর কবির দারোগা বলেন, তোমার নামে এখানে কোনো মামলা নেই। ঢাকা  থেকে সিআইডির এসপি রশিদ সাব আসতেছেন। ঢাকায় তোমার নামে বড় মামলা আছে। এসপি রশিদ সাব (সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার আবদুর রশিদ) আমাকে বলেন, আমরা যা বলি তা-ই হবে। আমারে থানার মধ্যে ব্যাপক মারধর করেন। একপর্যায়ে বলেন, আমাদের কথা না শুনলে তোরে ক্রসফায়ারে দিব। আর কথা শুনলে তোরে বাঁচাইয়া আনব। তোর ফ্যামিলিকে নগদ আড়াই হাজার টাকা দিব। মাইরের চোটে আমার হাতের হাড্ডি  ভেঙে যায়। এরপর আমারে নোয়াখালীর সেনবাগ থানা থেকে ঢাকায় নিয়ে আসে। ক্রসফায়ারে মারার ভয় দেখিয়ে তারা যা শিখিয়ে দেন সেগুলো কোর্টে বলতে বলেন। আমি সেভাবেই বলি।’ ২০০৪ সালে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে  গ্রেনেড হামলার পর তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুত্ফুজ্জামান বাবর  গ্রেনেড হামলাকারীদের ধরিয়ে দেওয়ার জন্য কোটি টাকার পুরস্কার ঘোষণা করেন। ২০০৫ সালের ৯ জুন নিজ বাড়ি থেকে  গ্রেফতার করা হয় জজ মিয়াকে। জজ মিয়া নাটক সাজিয়ে দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় পুরস্কার এক কোটি টাকা হাতিয়ে নেন সিআইডির তৎকালীন তিন কর্মকর্তা বিশেষ পুলিশ সুপার রুহুল আমিন, এএসপি আবদুর রশিদ ও মুন্সি আতিকুর রহমান।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর