শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ১১ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা
আদালতের পর্যবেক্ষণ

রাষ্ট্রীয় সহায়তায় বর্বর হামলা রাজনীতি কি পৈশাচিকতা

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাষ্ট্রীয় সহায়তায় বর্বর হামলা রাজনীতি কি পৈশাচিকতা

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট তৎকালীন রাষ্ট্রযন্ত্রের সহায়তায় প্রকাশ্য দিবালোকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে যুদ্ধে ব্যবহৃত মারণাস্ত্র আর্জেস গ্রেনেড বিস্ফোরণের মাধ্যমে হামলা চালানো হয়। প্রশ্ন ওঠে, কেন এই মারণাস্ত্রের ব্যবহার? রাজনীতি মানেই কি বিরোধী দলের ওপর পৈশাচিক আক্রমণ? বহুল আলোচিত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার রায়ে এমন পর্যবেক্ষণ এসেছে বিচারকের বক্তব্যে। গতকাল পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে অবস্থিত বিশেষ এজলাসে ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন এ রায় ঘোষণা করেন।

পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যা করার পর জাতীয় চার নেতাকে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় কারাগারে হত্যা করা হয়। কিন্তু ষড়যন্ত্র থেমে না গিয়ে বহমান থাকে। ইনডেমনিটি বিলের মাধ্যমে শুরু হয় বিভিন্ন ষড়যন্ত্র। পরবর্তী সময়ে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট শনিবার আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করার হীন প্রচেষ্টা চালানো হয়। ‘শেখ হাসিনাকে হালকা নাস্তা করানো হবে’ এই উদ্ধৃতি দিয়ে দেশীয় জঙ্গি সংগঠনের কতিপয় সদস্য আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনের সহায়তায় এ হামলা চালায়। পর্যবেক্ষণে বলা হয়, ‘তৎকালীন রাষ্ট্রযন্ত্রের সহায়তায় প্রকাশ্য দিবালোকে ঘটনাস্থল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের সামনে যুদ্ধে ব্যবহৃত স্পেশালাইজড মারণাস্ত্র আর্জেস গ্রেনেড বিস্ফোরণের মাধ্যমে ঘটনা ঘটানো হয়। প্রশ্ন ওঠে, কেন এই মারণাস্ত্রের ব্যবহার? রাজনীতি মানেই কি বিরোধী দলের ওপর পৈশাচিক আক্রমণ? শুধু আক্রমণই নয়, দলকে নেতৃত্বশূন্য করার ঘৃণ্য অপচেষ্টা। রাজনীতিতে অবশ্যম্ভাবীভাবে ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী দলের মধ্যে শত বিরোধ থাকবে। তাই বলে বিরোধী দলকে নেতৃত্বশূন্য করার প্রয়াস চালানো হবে? এটা কাম্য নয়। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের ক্ষমতায় যে দলই থাকবে, বিরোধী দলের প্রতি তাদের উদার নীতি প্রয়োগের মাধ্যমে গণতন্ত্র সুপ্রতিষ্ঠিত করার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা থাকতে হবে। বিরোধীদলীয় নেতৃবৃন্দকে হত্যা করে ক্ষমতাসীনদের রাজনৈতিক ফায়দা অর্জন করা মোটেই গণতান্ত্রিক চিন্তার বহিঃপ্রকাশ নয়।’ সাধারণ মানুষ এমন রাজনীতি চায় না মন্তব্য করে বিচারক বলেন, ‘সাধারণ জনগণ চায়, কোনো রাজনৈতিক দলের সভা, সমাবেশে যোগ দিয়ে সেই দলের নীতি, আদর্শ ও পরিকল্পনা সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান ধারণ করতে। আর সেই সভা-সমাবেশে আর্জেস গ্রেনেড বিস্ফোরণ করে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও সাধারণ জনগণকে হত্যার এ ধারা চালু থাকলে পরবর্তীতে দেশের সাধারণ জনগণ রাজনীতিবিমুখ হয়ে পড়বে।’ আদালত এমন হামলার পুনরাবৃত্তি চায় না উদ্ধৃত করে পর্যবেক্ষণে বলা হয়, ‘সিলেটে হযরত শাহজালাল (রহ.)-এর দরগা শরিফের ঘটনার, সাবেক অর্থমন্ত্রী এস এম কিবরিয়ার ওপর নৃশংস হামলার, রমনা বটমূলে সংঘটিত বোমা হামলার এবং আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনার ওপর নৃশংস বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলার পুনরাবৃত্তি চাই না। আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিয়ে নৃশংস হামলার পুনরাবৃত্তি ঠেকানো সম্ভব।’

সর্বশেষ খবর