বৃহস্পতিবার, ১১ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা
দুই দলের প্রতিক্রিয়া

ফরমায়েসি রায় প্রত্যাখ্যান করেছে বিএনপি : ফখরুল

সাত দিনের কর্মসূচি ঘোষণা

নিজস্ব প্রতিবেদক

একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় ‘সরকারের ফরমায়েসি’ বলে অভিহিত করে তা প্রত্যাখ্যান করেছে বিএনপি। একই সঙ্গে দলটি আজ দেশব্যাপী বিক্ষোভ ও ১৬ অক্টোবর কালো পতাকা মিছিল কর্মসূচি ঘোষণা করে। গতকাল দুপুরে রায় ঘোষণার পরপরই বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘বিএনপি মনে করে এই রায় রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ক্ষমতাসীন সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার নগ্ন প্রকাশ। আমরা এই ফরমায়েসি রায় প্রত্যাখ্যান করছি। রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী, কেন্দ্রীয় নেতা শিরিন সুলতানা, আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী, তাইফুল ইসলাম টিপু, মুনির হোসেন, সুলতানা আহমেদ, ফরিদা ইয়াসমীন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সরকার তার প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্যই আদালতকে ব্যবহার করে আরেকটি মন্দ দৃষ্টান্ত স্থাপন করল। যেমনটি করেছে মিথ্যা মামলায় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কারাদণ্ড দিয়ে। আমরা সরকারের এহেন প্রতিহিংসামূলক আচরণ ও আদালতের মাধ্যমে তা কার্যকর করার নোংরা কৌশল সজাগ হয়ে অনির্বাচিত এ সরকারকে হটিয়ে জনগণের নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’ বিএনপি মহাসচিব জানান, রায়ের প্রতিবাদে তার দলের রাজনৈতিক কর্মসূচি থাকবে এবং আইনি লড়াই চলবে। মির্জা ফখরুল বলেন, ‘গ্রেনেড হামলা মামলা তারেক রহমানের আর কোনো সম্পৃক্ততা না থাকা সত্ত্বেও আজকে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়ার মাধ্যমে পুনরায় প্রমাণিত হলো, এদেশে কোনো নাগরিকেরই আর সুবিচার পাওয়ার সুযোগ নেই। সরকারের বিরুদ্ধে রায় দেওয়া ও পদত্যাগে বাধ্য হওয়া সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার কথাই সঠিক প্রমাণিত হলো, যে দেশে প্রধান বিচারপতি সুবিচার পায় না, সেদেশে কোনো নাগরিকেরই সুবিচার পাওয়ার সুযোগ নেই।’ ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর মামলাটিকে রাজনৈতিক মামলায় রূপান্তরিত করা হয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘সরকার বিএনপিকে হেয় ক্ষতিগ্রস্ত ও বিপদগ্রস্ত করার লক্ষ্যে অবসরপ্রাপ্ত ও বিতর্কিত পুলিশ কর্মকর্তা আবদুল কাহার আকন্দকে চাকরিতে পুনরায় নিয়োগ দিয়ে এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নিযুক্ত করার মধ্য দিয়ে এটিকে একটি রাজনৈতিক মামলায় রূপান্তরিত করে। এই নতুন তদন্ত কর্মকর্তাই মামলার অন্যতম আসামি মুফতি হান্নানকে দীর্ঘদিন রিমান্ডে নিয়ে, সীমাহীন ও অকথ্য অত্যাচার করে তারেক রহমানকে জড়ায়। এক জবানবন্দিতে মুফতি হান্নানের স্বাক্ষর নিয়ে তারেক রহমানকে আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে। পরবর্তিতে মুফতি হান্নান আদালতে লিখিতভাবে তার সেই কথিত জবানবন্দি এই মর্মে প্রত্যাহার করেন যে, তিনি তারেক রহমানকে চেনেন না, তার সঙ্গে কোনো কথা হয়নি এবং অত্যাচার করে তাকে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করেছে।’ স্থায়ী কমিটির ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ‘এই মামলায় তারেক রহমানের বিরুদ্ধে কোনো প্রত্যক্ষ সাক্ষ্য প্রমাণ, উপাত্ত-তথ্য প্রমাণ আদালতে উপস্থাপন করা হয়নি। তা সত্ত্বেও তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধন করার জন্য।’

কর্মসূচি ঘোষণা : ২১ আগস্ট গ্রেনেড হত্যা মামলায় রায়কে প্রত্যাখ্যান করে দেশব্যাপী আজ বৃহস্পতিবার বিক্ষোভ সমাবেশ ও রবিবার ‘কালো পতাকা’ মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। গতকাল দুপুরে নয়াপল্টনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তিনি জানান, রায়ের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগরসহ সারা দেশে জেলা-থানায় বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল হবে। ১৬ অক্টোবর ঢাকা মহানগরীসহ সারা দেশে জেলা-মহানগরে কালো পতাকা মিছিল হবে। রিজভী আহমেদ একই সঙ্গে অঙ্গসংগঠনের পাঁচ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এ রায়ের প্রতিবাদে ১৩ অক্টোবর ছাত্রদল, ১৪ অক্টোবর যু্ব দল, ১৫ অক্টোবর স্বেচ্ছাসেবক দল বিক্ষোভ সমাবেশ এবং ১৭ অক্টোবর মহিলা দল এবং ১৮ অক্টোবর শ্রমিক দলের মানববন্ধন কর্মসূচি হবে।

বিএনপি অফিসের সামনে পুলিশি নিরাপত্তাবলয় : রায়কে কেন্দ্র করে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ও এর আশপাশে এলাকায় কঠোর নিরাপত্তার বলয় গড়ে তুলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যারা। গতকাল সকাল থেকেই নয়াপল্টন বিএনপি কার্যালয়ের সামনে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। কার্যালয় ঘিরে জলকামান ও প্রিজনভ্যান ও এপিসি রাখা হয়। তবে বড় ধরনের কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, সকাল ১০টার পরপরই বিজয়নগর মোড় থেকে ফকিরাপুল মোড়, কাকরাইল, জোনাকি সিনেমা হলের গলি, মসজিদ গলি ও আশপাশের বিপুল সংখ্যক পোশাকদারি পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশের সদস্য অবস্থান নিয়েছে। সন্দেহভাজনদের তল্লাশি করতেও দেখা যায়। কার্যালয়ের সামনে গণমাধ্যমকর্মী ছাড়া কাউকে দাঁড়াতেও দেওয়া হয়নি। পুলিশের মতিঝিল জোনের এডিসি শিবলী নোমান সাংবাদিকদের জানান, জননিরাপত্তার বিষয়টি দেখা পুলিশের দায়িত্ব। সেই দায়িত্ব থেকে পুলিশ সতর্ক রয়েছে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা রক্ষার জন্য।’

সর্বশেষ খবর