শুক্রবার, ১২ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ, সম্পাদক পরিষদের উৎকণ্ঠা অব্যাহত

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে কাল সংবাদ সম্মেলন

নিজস্ব প্রতিবেদক

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে সম্পাদক পরিষদের উৎকণ্ঠা অব্যাহত রয়েছে। এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সে দেশের পররাষ্ট্র দফতরের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এতে করে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও উন্নয়ন।

গতকাল ঢাকায় অনুষ্ঠিত পরিষদের সভায় সাইবার স্পেস ও ডিজিটাল নিরাপত্তায় আইনের প্রয়োজনীয়তার কথা সম্পাদক পরিষদ সমর্থন করার বিষয়টি তুলে ধরা হয়। তবে সম্প্রতি রাষ্ট্রপতি স্বাক্ষরিত ডিজিটাল নিরাপত্তা বিলে ৮, ২১, ২৫, ২৮, ২৯, ৩১, ৩২, ৪৩ ও ৫৩-এর মতো বিতর্কিত ধারাগুলোকে মুক্ত সংবাদমাধ্যমের পরিপন্থী, বাকস্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার বিরোধী এবং গণতন্ত্রের সঙ্গে বিরোধাত্মক বলে মনে করে সম্পাদক পরিষদ। এ ছাড়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সম্পর্কে সম্পাদক পরিষদের উদ্বেগ মন্ত্রিসভার বৈঠকে উত্থাপনে তিনজন মন্ত্রীর দেওয়া সুনির্দিষ্ট প্রতিশ্রুতি পূরণ না হওয়ায় সভায় গভীর হতাশা ব্যক্ত করে।

রাজধানীর দ্য ডেইলি স্টার সেন্টারে ইত্তেফাক সম্পাদক তাসমিমা হোসেনের সভাপতিত্বে সম্পাদক পরিষদের সভা শেষে এক বিবৃতিতে বলা হয়, সম্পাদক পরিষদের উদ্বেগের কথা মন্ত্রিসভায় উত্থাপন ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের একটি সংশোধিত খসড়া প্রণয়নের ব্যাপারে তিনজন মন্ত্রীর দেওয়া সুনির্দিষ্ট প্রতিশ্রুতি রক্ষা না হওয়ায় সম্পাদক পরিষদ গভীর হতাশা প্রকাশ করছে। সম্পাদক পরিষদ বিষয়টিকে তিনজন জ্যেষ্ঠ মন্ত্রীর দেওয়া প্রতিশ্রুতিতে সংগঠনের আস্থা ও বিশ্বাসের লঙ্ঘন মনে করে। স্মর্তব্য, সম্পাদক পরিষদের সঙ্গে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর উদ্যোগে, যিনি প্রস্তাবিত আইন নিয়ে নতুন এক দফা আলোচনা শুরুর প্রতিশ্রুতি দেন এবং সম্পাদক পরিষদকে তাতে আমন্ত্রণ জানান। একই প্রতিশ্রুতি ওই সভায় আইনমন্ত্রী এবং তথ্য ও যোগাযোগমন্ত্রীর পক্ষ থেকেও দেওয়া হয়েছিল।

সম্পাদক পরিষদ মনে করে, প্রতিশ্রুত আলোচনা শুরুর একটি সুযোগ ডিজিটাল নিরাপত্তা বিলে রাষ্ট্রপতির সম্মতির মাধ্যমে হারিয়ে গেছে। সাংবিধানিক এখতিয়ার বলে রাষ্ট্রপতি বিলটি পুনর্বিবেচনার জন্য পাঠালে ওই আলোচনা হতে পারত।

সম্পাদক পরিষদ অচিরেই শুরু হতে যাওয়া বর্তমান সংসদের শেষ অধিবেশনে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধনের দাবি জানাচ্ছে। সম্পাদক পরিষদের মতে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটিকে বাকস্বাধীনতার প্রতি গুরুতর হুমকি বিবেচনা করে সাংবাদিক ও নাগরিক সম্প্রদায় যে উদ্বেগ জানিয়েছে, তা নিরসনের এটাই শেষ সুযোগ।

পুলিশি হস্তক্ষেপ ও খেয়াল-খুশিমতো গ্রেফতারের কবল থেকে বাকস্বাধীনতা এবং স্বাধীন সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যমের সুরক্ষায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধনের দাবি পুনর্ব্যক্ত করতে সম্পাদক পরিষদের সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আগামী শনিবার, ১৩ অক্টোবর, ২০১৮ তারিখে জাতীয় প্রেস ক্লাবে দুপুর ১২টায় সংবাদ সম্মেলন করা হবে। এতে উপরোক্ত বিষয়গুলো বিবেচনা করে সম্পাদক পরিষদ তাদের অবস্থান এবং উদ্বেগ গণমাধ্যমকে জানাবে। বিবৃতিতে পরিষদ বলে, আমরা আগেও বলেছি এবং আবারও বলছি, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটিকে আমরা ১. সংবিধানের ৩৯ (ক) ও (খ) ধারায় প্রদত্ত বাকস্বাধীনতা ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা, ২. আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় জড়িয়ে থাকা মূল্যবোধ ও স্বাধীন মতপ্রকাশের অধিকার; ৩. জাতিসংঘ সনদ এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক আইন ও চুক্তিতে সুরক্ষিত গণতন্ত্র, মুক্ত সমাজ ব্যবস্থা ও মৌলিক অধিকারের নীতি; এবং ৪. নৈতিক ও স্বাধীন সাংবাদিকতার মৌল মূল্যবোধগুলোর সঙ্গে সাংঘর্ষিক মনে করছি। বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন ইত্তেফাক সম্পাদক তাসমিমা হোসেন, নিউজ টুডে প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক রিয়াজউদ্দিন আহমেদ, মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, নিউএজ সম্পাদক নুরুল কবীর, প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান, দ্য ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম, ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, কালের কণ্ঠ সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন, নয়া দিগন্ত সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দীন, আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক, করতোয়া সম্পাদক মো. মোজাম্মেল হক, ইনকিলাব সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দীন, দ্য ইনডিপেনডেন্ট সম্পাদক এম শামসুর রহমান, সংবাদের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক খন্দকার মুনীরুজ্জামান, যুগান্তরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সাইফুল আলম, বণিক বার্তা সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ, ঢাকা ট্রিবিউন সম্পাদক জাফর সোবহান, সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মুস্তাফিজ শফি, ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক শহীদুজ্জামান খান, বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম।

যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ : ‘বাংলা ট্রিবিউন’ জানায়, বাংলাদেশে পাস হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে গভীর উদ্বগ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। আন্তর্জাতিক আইন, মানবাধিকার, নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারের প্রতি বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আইনে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করার জন্য আহ্বান জানিয়েছে দেশটি। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের এক মুখপাত্র বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমরা ডিজিটাল নিরাপত্তার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে একমত। তবে সারা বিশ্বের সঙ্গে আমরাও মনে করি বাংলাদেশের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন কণ্ঠরোধে ও বাকস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করতে পারে। এতে করে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও উন্নয়ন।

মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের ওই মুখপাত্র বলেন, আমরা বাংলাদেশ সরকারকে এই আইন পুনরায় পর্যালোচনার আহ্বান জানাই। আন্তর্জাতিক আইন, মানবাধিকার, নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারের প্রতি অঙ্গীকার অটুট রেখে যেন বাংলাদেশ বিষয়টি বিবেচনা করে বৈধ বাকস্বাধীনতার চর্চা যেন ব্যাহত না হয় সে বিষয়টি খেয়াল রাখে। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সবসময়ই অনলাইনে মতপ্রকাশসহ সব ধরনের বাকস্বাধীনতায় বিশ্বাস করে। এটি গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় অন্যতম চাবিকাঠি।

সর্বশেষ খবর