শুক্রবার, ১২ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

সাংস্কৃতিক পল্লীতে বদলে যাবে জামালপুর

শফিক জামান, জামালপুর

সাংস্কৃতিক পল্লীতে বদলে যাবে জামালপুর

‘শেখ হাসিনা সাংস্কৃতিক পল্লী’ নামে জামালপুরে হচ্ছে একটি দৃষ্টিনন্দন সাংস্কৃতিক ও বিনোদন কেন্দ্র। ঢাকার বাইরে কোনো জেলা শহরে এমন কেন্দ্র এটিই প্রথম। এটি হবে দেশসেরা অন্যতম একটি সাংস্কৃতিক ও বিনোদন কেন্দ্র। পুরো সাংস্কৃতিক পল্লীকেই সাজানো হচ্ছে নানা দৃষ্টিনন্দন আর্কিটেকচারাল ডিজাইনে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বদলে যাবে জামালপুর শহর। এই সাংস্কৃতিক পল্লী জেলার সব সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড ও বিনোদনের প্রাণকেন্দ্র হয়ে উঠবে। জামালপুরের ইতিহাস ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, মুক্তিযুদ্ধ ও বাঙালি জাতির ইতিহাস-ঐতিহ্যের প্রতিফলন ঘটবে এখানে। এটি এতটাই দৃষ্টিনন্দন হবে যে, শুধু জেলার নয়, এর আকর্ষণ সারা দেশের মানুষকেই টানবে। এখানকার সৌন্দর্য বিমোহিত করবে তাদের। জামালপুর জেলার সবকিছু পাল্টে যাচ্ছে একজন মানুষের নিরন্তর পরিশ্রমে। তিনি একজন স্বপ্নদ্রষ্টা রাজনীতিক মির্জা আজম এমপি। তিনি বড় হয়েছেন জামালপুর শহরের আলো-বাতাসে। শুধু নিজের নির্বাচনী এলাকার উন্নয়ন নয়, নিজের প্রিয় শহরটিকেও বদলে দিতে কাজ করছেন নিরন্তর। তার চেষ্টায় জামালপুর শহরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ, বাইপাস সড়ক। চলছে অসংখ্য উন্নয়ন কাজ। বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজমের ঐকান্তিক চেষ্টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একনেকে ‘জামালপুর কালচারাল ভিলেজ’ প্রকল্পটির অনুমোদন দেন। ১০৫ কোটি টাকার এই প্রকল্পটির দরপত্র হয় গত বছর সেপ্টেম্বরে। প্রকল্পের মূল কাজ শুরু হয় চলতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। ইতিমধ্যে ২৫ শতাংশের বেশি কাজ হয়েছে। এখন পুরোদমে চলছে প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ। ২০১৯ সালের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে বলে আশা করছেন প্রকল্প-সংশ্লিষ্টরা। জামালপুর শহরের প্রাণকেন্দ্র দয়াময়ী এলাকার বিস্তৃত প্রায় ৯ একর জায়গাজুড়ে চলছে এখন শেখ হাসিনা সাংস্কৃতিক পল্লীর কাজ। এই প্রকল্পের ব্যবস্থাপক ইঞ্জিনিয়ার মো. জিল্লুর রহমান জানিয়েছেন, এটি হবে দেশসেরা একটি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। এখানে থাকবে ২০ হাজার বর্গফুটের আন্ডারগ্রাউন্ড মিউজিয়াম। মিউজিয়ামের দুটি ফ্লোর জুড়ে জেলার ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস প্রতিফলিত হবে। থাকবে বাঙালি জাতির ইতিহাস-ঐতিহ্যের সবকিছু। এখানে থাকবে মুক্তিযুদ্ধের বিস্তৃত ইতিহাস। আন্ডারপ্লাস মিউজিয়ামের ছাদের অংশে থাকবে খোলা শহীদ মিনার। শহীদ মিনারের ছাদ ও দেয়ালে থাকবে শহীদদের  মোরাল। শহীদ মিনারে যাওয়ার রাস্তা হবে সুদৃশ্য। অসুস্থ মানুষের শহীদ মিনারে যাওয়ার জন্য থাকবে বিশেষ ব্যবস্থা। শহীদ মিনার ও মিউজিয়ামের পর থাকবে খোলা মাঠ, থাকবে সুদৃশ্য বৃত্তাকার লেক। লেকের চারপাশে ওয়াকওয়ে। লেকের পশ্চিমে থাকবে মুক্ত থিয়েটার মঞ্চ। মঞ্চটি এমনভাবে তৈরি হবে, দেখে মনে হবে এটি পানিতে ভাসছে। লেকের পশ্চিমে থাকবে শিশুদের জন্য চিলড্রেন আর্ট প্লাজা। লেকে থাকবে বোট প্লাজা, রেস্টুরেন্ট। লেকের মাঝখানে থাকবে সুদৃশ্য পায়ে হাঁটার সেতু। পল্লীতে থাকবে দেশের সবচেয়ে বড় ফেরিজ হুইল। এটির ডায়ামিটার হবে ৪৬ মিটার। দেশে এত বড় ফেরিজ হুইল আর কোথাও নেই।  এ ছাড়া পল্লীর মূল কালচারাল ভবন হবে ১০ তলা। অত্যাধুনিক সব সুবিধাসহ এই ১০ তলা ভবনের গ্রাউন্ড ফ্লোর হবে পার্কিং এরিয়া। দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় হবে কনভেনশন হল। এ ছাড়া তৃতীয় তলায় হবে উন্নত মানের রেস্টুরেন্ট। চতুর্থ তলা থেকে দশম তলা পর্যন্ত বরাদ্দ থাকবে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের জন্য। সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো এখানে নিয়মিত সংস্কৃতিচর্চা ও রিহার্সেলের সুযোগ পাবে। এ ছাড়া গৌরীপুর কাচারীমাঠের পূর্বপাশে হবে আটতলা বাণিজ্যিক ভবন। বাণিজ্যিক ভবনে দেশীয় পণ্য প্রসারে প্রাধান্য দেওয়া হবে। পুরো পল্লীতে থাকবে নানা ডিজাইনের বাগান, বসার জায়গা, বিনোদন আর অবসর কাটানোর নানা উপকরণ। এখানে থাকবে বৈশাখী মেলাসহ যে কোনো মেলা করার মতো স্পেস। থাকবে রেস্ট হাউস। প্রকল্প-সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ঐতিহ্যবাহী দয়াময়ী মন্দিরের মূল অংশ আদি রূপ ঠিক রেখে পূর্ব অংশে সুদৃশ্য দেয়াল নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। মন্দিরের সামনে এই দেয়ালকে সাজানো হবে চমৎকার ডিজাইনের সব ম্যুরাল দিয়ে। এটি হলে ঐতিহ্যবাহী মন্দিরটি মূল সড়ক থেকে দৃশ্যমান হবে। জামালপুরের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্য ধরে রেখে মন্দিরের পাশের বর্তমান কাচারী শাহি জামে মসজিদের স্থলে হবে আটতলা মডেল মসজিদ। মূল কালচারাল ভিলেজ স্থানীয় সরকার বিভাগ বাস্তবায়ন করলেও মডেল মসজিদটি বাস্তবায়ন করবে গণপূর্ত বিভাগ। চারতলা এই মসজিদে থাকবে ইসলামী গবেষণা কেন্দ্র, পাঠাগার, হলরুম। এ ছাড়া গৌরীপুর কাচারীমাঠের পশ্চিমে প্রায় ১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে অত্যাধুনিক শিল্পকলা একাডেমি। এখানে ৫০০ আসনের মূল অডিটোরিয়াম ছাড়াও তিনতলা ও চারতলা দুটি ভবনে থাকবে প্রশিক্ষণ কক্ষ, আধুনিক গ্রিনরুম ও আর্ট গ্যালারি। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে এটি বাস্তবায়ন করছে গণপূর্ত বিভাগ। সব মিলিয়ে শেখ হাসিনা সাংস্কৃতিক পল্লী বৃহত্তর জামালপুরের মানুষের জন্য হবে সংস্কৃতি ও বিনোদনের প্রাণকেন্দ্র। জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট বাকী বিল্লাহ বলেন, ‘ঢাকার বাইরে এমন সাংস্কৃতিক কেন্দ্র আর কোথাও নেই। এই কেন্দ্রে আমাদের ঐতিহ্য, আমাদের হাজার বছরের লড়াই-সংগ্রাম, স্বাধীনতা সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধের সব ইতিহাসের প্রতিফলন ঘটবে। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীনতা যুদ্ধের মধ্য দিয়ে যে দেশটি আমরা পেয়েছি, থাকবে তার সঠিক ইতিহাস।’ অ্যাডভোকেট বাকী বিল্লাহ বলেন, সব মিলিয়ে বাঙালি জাতীয়তাবাদের চেতনাসম্পন্ন সাংস্কৃতিক অভিযাত্রায় জামালপুরের ২৬ লাখ মানুষের মিলনকেন্দ্রে পরিণত হবে শেখ হাসিনা সাংস্কৃতিক পল্লী।

সর্বশেষ খবর