রবিবার, ১৪ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন দ্রুত সংশোধনের দাবি

সংবাদ সম্মেলনে সম্পাদক পরিষদ, কাল মানববন্ধন

নিজস্ব প্রতিবেদক

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন দ্রুত সংশোধনের দাবি

সম্পাদক পরিষদের সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য পড়ে শোনান ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত। এ সময় অন্য সম্পাদকরা উপস্থিত ছিলেন —বাংলাদেশ প্রতিদিন

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিতর্কিত ৯টি ধারা সংশোধনের বিষয়ে তিন মন্ত্রীর দেওয়া প্রতিশ্রুতি বরখেলাপ করার প্রতিবাদে সম্পাদক পরিষদ আগামীকাল সোমবার বেলা ১১টায় মানববন্ধন করবে। দেশের শীর্ষস্থানীয় পত্রিকার সম্পাদকদের সংগঠনটি গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচি ঘোষণা করে। কর্মসূচি ঘোষণা করেন ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত। এ-সংক্রান্ত বিলটি সংসদে পাসের পরই এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছিল  সম্পাদক পরিষদ। সে সময় আইনটির বিষয়ে সম্পাদক পরিষদের মতামত মন্ত্রিসভায় নিয়ে যাওয়া হবে— তথ্যমন্ত্রীসহ সরকারের তিন মন্ত্রী এমন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু গত দুটি মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। এরই মধ্যে রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের পর বিলটি আইনেও কার্যকর হয়েছে।

লিখিত বক্তব্যে শ্যামল দত্ত বলেন, ‘একই দাবিতে গত ২৯ সেপ্টেম্বরে আমাদের মানববন্ধন কর্মসূচি ছিল। কিন্তু তথ্যমন্ত্রীর অনুরোধে তা স্থগিত করা হয়। তারপর ৩০ সেপ্টেম্বর তিনজন মন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা প্রকাশ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, আমাদের উদ্বেগের বিষয়গুলো ৩ অক্টোবর অথবা ১০ অক্টোবরের মন্ত্রিসভার বৈঠকে উত্থাপন করে আমাদের সঙ্গে নতুন করে আলোচনা শুরু করার জন্য মন্ত্রিসভার অনুমোদন চাইবেন।’ তিনি বলেন, ‘তিন মন্ত্রী আমাদের আশ্বাস দেন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনেরএমন একটি সংস্কারের সর্বাত্মক চেষ্টা করা হবে, যেটি সংশ্লিষ্ট সব মহলের গ্রহণযোগ্য হবে। দুঃখের বিষয় সে রকম কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। তিন মন্ত্রী কেন তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে ব্যর্থ হলেন, তা কোনো একজনের মাধ্যমে আমাদের জানানোর সৌজন্যটুকু দেখানোও হয়নি।’ তিনি আরও বলেন, ‘সম্পাদক পরিষদকে তিনজন মন্ত্রী যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তা রাখা হয়নি। আমরা মনে করি এটি সেই প্রতিশ্রুতির বরখেলাপ। তাই আমরা আমাদের স্থগিত কর্মসূচি আবারও ঘোষণা করলাম।’ তিনি বলেন, এটি শুধু সম্পাদক পরিষদেরই কর্মসূচি।

সম্পাদক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনামের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান, মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম, কালের কণ্ঠ সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন, সংবাদের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক খন্দকার মুনীরুজ্জামান, নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবীর, ইনকিলাব সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দিন, নয়া দিগন্তের সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দিন, আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক, করতোয়া সম্পাদক মোজাম্মেল হক, যুগান্তরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সাইফুল আলম, বণিক বার্তা সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ, ঢাকা ট্রিবিউন সম্পাদক জাফর সোবহান, সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মুস্তাফিজ শফি, ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের যুগ্মসম্পাদক শামসুল হক জাহিদ প্রমুখ। সংবাদ সম্মেলনে সম্পাদক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মাহফুজ আনাম বলেন, ‘আমরা মনে করি বাংলাদেশে সাইবার সিকিউরিটি আরও সুসংগঠিত, সমৃদ্ধ, আরও শক্তিশালী হওয়া উচিত। সাইবার সিকিউরিটির ব্যাপারে বাংলাদেশের আরও শক্ত অবস্থানে যাওয়া উচিত। আমরা এটাও মনে করি সাইবার সিকিউর করার ব্যাপারে একটি গ্রহণযোগ্য আইনও প্রয়োজন।’ সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মাহফুজ আনাম বলেন, ‘আইনের যেসব ধারা নিয়ে আমরা বক্তব্য দিয়েছি, সেগুলো সাংবাদিকদের জন্য সংকটের সৃষ্টি করবে। তাই আমরা বার বার যে ধারাগুলোর কথা বলে আসছি, সেগুলোর আমূল সংশোধন চাই। সংসদের এই অধিবেশন শেষ হওয়ার আগে এটি সংশোধনের সুযোগ আছে।’ সম্পাদক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘বাকস্বাধীনতা রক্ষাও আমাদের উদ্দেশ্য, তবে আমরা সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের স্বাধীনতা নিয়েই বক্তব্য রেখেছি। আমরা সব সময় মনে করছি আমাদের দাবি বাস্তবায়ন হবে। এ ধরনের একটি আইন ভারতে হওয়ার পরে সেখানকার উচ্চ আদালত আইনটি সংবিধানবিরোধী বলে রায় দিয়েছে। আমরা গভীরভাবে উপলব্ধি করি, আইনের সংশোধন করা সম্ভব। সরকার সিরিয়াস হলে সংশোধন আনতে পারেন। আমাদের সঙ্গে বৈঠকে আইনমন্ত্রী বলেছিলেন রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষর করার পরও সরকার চাইলে এ আইন সংশোধন করা যেতে পারে। এটি খুব সুস্পষ্ট প্রক্রিয়া।’ সরকার সংশোধন না করলে উচ্চ আদালতে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে মাহফুজ আনাম বলেন, ‘আমরা পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করব।’

সর্বশেষ খবর