রবিবার, ১৪ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

বিএনপিকে ক্ষমতায় বসাতে ঐক্য করব না : বি. চৌধুরী

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিএনপিকে ক্ষমতায় বসাতে ঐক্য করব না : বি. চৌধুরী

বিকল্পধারা বাংলাদেশের সভাপতি ও সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ড. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেছেন, ‘দুই শর্তে রাজি হলে আমরাও ঐক্যে রাজি। অন্যথায় বিএনপিকে এককভাবে ক্ষমতায় বসানোর লক্ষ্য নিয়ে বিকল্পধারা কারও সঙ্গে কোনো ঐক্য করবে না। জাতীয় ঐক্য করতে হলে প্রথম শর্ত হলো— স্বাধীনতাবিরোধীদের ত্যাগ করতে হবে এবং দুই. রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ও রাজনীতিতে ভারসাম্য আনয়নের সুস্পষ্ট ঘোষণা থাকতে হবে।’ গতকাল রাতে রাজধানীর বারিধারায় নিজস্ব বাসভবনে দলের পক্ষ থেকে অনুষ্ঠিত এক জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে সাবেক এই রাষ্ট্রপতি এসব কথা বলেন। বিকল্পধারার মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নান, যুগ্ম-মহাসিচব মাহী বি. চৌধুরীও এতে বক্তব্য রাখেন। এ সময় দলের ভাইস চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মুহম্মদ ইউসূফ, মাহবুব আলী, ব্যারিস্টার ওমর ফারুক, হাফিজুর রহমান ঝান্টু, ওবায়দুর রহমান মৃধা, আসাদুজ্জামান বাচ্চু, বি এম নিজাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। অধ্যাপক বি. চৌধুরী বলেন, ‘এক স্বৈরাচার বিদায় করে আরেক স্বৈরাচারকে ক্ষমতায় আনা যাবে না। তাহলে বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য কিংবা দেশের বিদ্যমান এই দুরবস্থার কখনো পরিবর্তন হবে না। কাজেই কোনো দল যাতে আর এককেন্দ্রিকভাবে ক্ষমতায় আরোহণ না করতে পারে, দেশে ও জনজীবনে যাতে পুনরায় আর স্বৈর সরকারের আবির্ভাব না ঘটে, সে জন্যই আমরা রাজনীতিতে ভারসাম্য আনয়নের কথা বলেছি। যতদিন পর্যন্ত ক্ষমতায় ভারসাম্য না আসবে, ততদিন বাংলাদেশে ইতিবাচক কোনো পরিবর্তন আসবে না।’ বি. চৌধুরী বলেন, ‘যারা এ দেশের মানচিত্রে বিশ্বাস করে না, এ দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস করে না, তাদের সঙ্গেও আমাদের কোনো ঐক্য হতে পারে না।’ সংবাদ সম্মেলনে সাবেক এই রাষ্ট্রপতি গণফোরাম নেতা ড. কামাল হোসেনের বিরুদ্ধে অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগের কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আমরা এই ঐক্যের ব্যাপারে অনেক আগে থেকেই প্রক্রিয়া করে যাচ্ছিলাম। তারই ধারাবাহিকতায় গতকাল বিকালে ড. কামাল হোসেনের বেইলি রোডের বাসায় আমন্ত্রণ জানানো হয় বৈঠকের। সেই বৈঠক শেষে জাতীয় ঐক্যের ঘোষণা দেওয়ার কথা। কিন্তু বিকালে আমি তার বাসার সামনে গিয়ে ১৪-১৫ মিনিট অপেক্ষা করেছি। তিনি বাসায় ছিলেন না। এমনকি দরজা খোলারও কোনো লোক ছিল না। ভিতরে নিয়ে বসিয়ে যে এক কাপ চা খাওয়াবে, সে লোকটা পর্যন্ত ছিল না। অপেক্ষা শেষে যখন ফিরে আসছিলাম, তখন তার দলের মহাসচিব মোস্তফা মহসীন মন্টু ফোন দিয়ে বলেন যে, আপনারা মতিঝিলে ড. কামাল হোসেনের চেম্বারে চলে আসেন। কিন্তু ড. কামাল এখনো পর্যন্ত (রাত ৮টা) একটা ফোনও করেননি। তিনি তো বলতে পারতেন যে, স্যরি... আমি একটা জরুরি কাজে চলে এসেছি। বড় ভাই, আপনি বসে এক কাপ চা খান, আমি আসছি। কিন্তু তিনি এটা বলার কোনো প্রয়োজনই মনে করেননি। কাজেই সাধারণভাবেই প্রশ্ন ওঠে যে, এটা কি তাদের পরিকল্পিত?’ মেজর (অব.) আবদুল মান্নান পরিষ্কার ভাষায় বলেন, কোনো একটি নির্দিষ্ট দলকে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতায় রাষ্ট্রক্ষমতায় বসানোর জন্য বৃহত্তর ঐক্য প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠা হলে জনগণের স্বেচ্ছাচারমুক্ত বাংলাদেশ গঠনের প্রত্যাশার সঙ্গে প্রতারণা করা হবে। ড. কামাল হোসেনের শিষ্টাচারবহির্ভূত আচরণের প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আজ দুটো বিষয় স্পষ্ট হয়ে গেছে— ১. জনগণকে ধোঁয়াশার মধ্যে রেখে স্বাধীনতাবিরোধীদের সঙ্গে পরোক্ষভাবে একটি ঐক্য গড়ে তোলার অপচেষ্টা, ২. নীতি ও আদর্শের প্রশ্নে বিকল্পধারার অনড় অবস্থানকে বিবেচনায় রেখে একটি চক্রের জাতির প্রত্যাশিত ও স্বপ্নের জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়াকে বিনষ্ট করা। কারা এই ঐক্যকে বিনষ্ট করতে চায় এটা আজ জাতির সামনে পরিষ্কার।’ তিনি বলেন, আজকের পর থেকে জাতীয় ঐক্যের নামে বিএনপির সঙ্গে কোনো বৈঠকে বসে জাতিকে বিভ্রান্ত করার সুযোগ বিকল্পধারা দেবে না। স্বাধীনতাবিরোধীদের সঙ্গ ত্যাগ করে জাতীয় সংসদে ভারসাম্যের ভিত্তিতে স্বেচ্ছাচারমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার ব্যাপারে কোনো সুস্পষ্ট ঘোষণা বিএনপির পক্ষ থেকে না আসা পর্যন্ত শুধু বিএনপিকে এককভাবে ক্ষমতায় বসানোর জন্য বিকল্পধারা দেশে কোনো চক্রান্তের সঙ্গে সম্পৃক্ত হবে না। মাহী বি. চৌধুরী জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ না করায় বিএনপির সমালোচনা করে বলেন, বিএনপি এখানে জাতীয় ঐক্য করে, আর ২০-দলীয় জোটে জামায়াতের সঙ্গে পরকীয়া করে। মাহী বি. চৌধুরী বলেন, ‘আমরা এখনো জাতীয় ঐক্য থেকে সরে  যাইনি। আর তারা আমাদের বাদ দিয়েছেন কিনা তাও জানি না। যদি বাদ দিয়ে থাকেন, তাহলে তো অবশ্যই পরিষ্কারভাবে জানাবেন। তবে কথা আমাদের পরিষ্কার, বিএনপি বা কোনো দলকে এককভাবে ক্ষমতায় বসানোর লক্ষ্য নিয়ে আমরা কোনো ঐক্য করব না।’   

সর্বশেষ খবর