রবিবার, ১৪ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা
গ্যাসের লিকেজ থেকে আগুনে শেষ একটি পরিবার

স্বামী ও স্ত্রীর মৃত্যু লড়ছেন পাঁচজন

নিজস্ব প্রতিবেদক

স্বামী ও স্ত্রীর মৃত্যু লড়ছেন পাঁচজন

রাজধানীর উত্তরখানে গ্যাস লাইনের লিকেজ থেকে লাগা আগুনে দগ্ধ আটজনের মধ্যে এক দম্পতির মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন আজিজুল (২৭) ও তার স্ত্রী মোসলেমা (১৮)। গতকাল সকাল সোয়া ১০টার দিকে আজিজুল এবং বিকাল ৫টার দিকে মোসলেমা ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এর আগে গতকাল ভোর ৪টার দিকে উত্তরখান থানার ব্যাপারীপাড়া হেলাল মার্কেটের পাশে ১১০/এ নম্বর বাড়ির নিচতলায় গ্যাস লাইনের লিকেজ থেকে লাগা আগুনে একই পরিবারের আটজন দগ্ধ হন। নিহত দম্পতির পরিবারের অভিযোগ, গ্যাস লাইন লিকেজ থাকা সত্ত্বেও ঠিক করেননি বাড়িওয়ালা। বার্ন ইউনিটের আবাসিক চিকিৎসক ডা. পার্থ শংকর পাল বলেন, আগুনে আজিজুলের শরীরের ৯৯ শতাংশ এবং তার স্ত্রী মোসলেমার শরীরের ৯৮ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল। হাসপাতালে ভর্তি অন্য পাঁচজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এদের মধ্যে সুফিয়ার শরীরের ৯৯ শতাংশ, তার মেয়ে পূর্ণিমার ৮০ শতাংশ, পূর্ণিমার ছেলে সাগরের ৬৬ শতাংশ, ডাবলু মোল্লার ৬৫ শতাংশ এবং তার ছেলে সৌরভের শরীরের ১২ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। এ ছাড়া শিশু সৌরভের মা আঞ্জুয়ারা বেগমের (২৫) শরীরের ৬ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আঞ্জুয়ারা বলেন, আগুন খুব দ্রুত সবার গায়ে ধরে গিয়ে এ হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। শিশু সৌরভ ময়নারটেক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণি এবং সাগর উত্তরা হাইস্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। আগুনে প্রত্যেকের শ্বাসনালি পুড়ে গেছে। দগ্ধদের অধিকাংশই গার্মেন্ট শ্রমিক। তাদের বাড়ি পাবনার ভাঙ্গুড়া থানার রামকানা গ্রামে। দগ্ধ আঞ্জুয়ারা বেগম বলেন, ‘গ্যাস লাইন থেকে দুই সপ্তাহ ধরে গন্ধ বের হচ্ছিল। বাড়িওয়ালাকে গ্যাসের গন্ধ পাওয়ার বিষয়টি বলা হয়েছে। কিন্তু বাড়িওয়ালা কোনো ব্যবস্থা নেননি। শুক্রবার রাতে সবাই ঘুমিয়ে পড়ি। ভোররাতে কেউ একজন চুলার সুইচ দিতেই আগুন ধরে যায়।’ তার দাবি, গ্যাস লাইন লিকেজ থাকায় সেখান থেকে গ্যাস বের হয়ে পুরো কক্ষে ছড়িয়ে পড়ে। আর চুলার সুইচ দিতেই আগুন ধরে যায়। বাড়িওয়ালা মেহেদি হাসান বলেন, আগুনের সময় তিনি দ্বিতীয় তলায় ছিলেন। তাই কীভাবে আগুন লেগেছে তা তিনি নিশ্চিত নন। তবে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার পর তিনি চুলার সুইচ অন দেখতে পান। এতে তার ধারণা, রাতে সুইচ বন্ধ না করায় আগুনের ঘটনা ঘটেছে। উত্তরা ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের ডিউটি অফিসার কামরুল হাসান বলেন, ‘ভোরে খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের চারটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে এনে দগ্ধ আটজনকে উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করে। গ্যাসের চুলা থেকে আগুনের সূত্রপাত। রান্নার জন্য দিয়াশলাই ধরানোর সঙ্গে সঙ্গে আগুন ধরে যায় বলে জানতে পেরেছি।’ উত্তরখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হেলাল উদ্দিন বলেন, অসাবধানতার কারণেই এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। তার ধারণা, রাতের বেলায় বাড়িটির চুলায় গ্যাস ছিল না। অসতর্ক অবস্থায় চুলার সুইচ বন্ধ না করেই তারা ঘুমিয়ে পড়েন। দরজা-জানালা বন্ধ থাকায় গ্যাস বের হতে পারেনি। ভোরে রান্না করতে উঠে আগুন জ্বালানোমাত্র চারপাশে আগুন ধরে সবাই দগ্ধ হয়েছেন।

সর্বশেষ খবর