সোমবার, ১৫ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

ব্যাংক পাচ্ছে পুলিশ

অব্যাহতি কোম্পানি আইন থেকেও

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

‘কমিউনিটি ব্যাংক বাংলাদেশ লি.’ নামে পুলিশকে যে ব্যাংকের অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে, সে ব্যাংকটিকে প্রচলিত ব্যাংক-কোম্পানি আইন থেকেও ‘অব্যাহতি’ দেওয়া হচ্ছে। সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে ‘অব্যাহতি’ দেওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে মতামত পাঠানো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এ বিষয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘কমিউনিটি ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড’-কে ব্যাংক কোম্পানি আইনের ধারা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার বিষয়ে মতামত চেয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আমরা এরই মধ্যে মতামত জানিয়ে দিয়েছি। এর আগেও ট্রাস্টের মাধ্যমে পরিচালিত একাধিক ব্যাংককে আইনের ধারা থেকে এ ধরনের ‘অব্যাহতি’ দেওয়ার নজির রয়েছে বলে জানান তিনি।

সূত্র জানায়, ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১ এর ১৪ক(১) ধারা অনুযায়ী, ‘কোনো ব্যক্তি, কোম্পানি বা একই পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ব্যাংকের শেয়ার কেন্দ্রীভূত করা যায় না। উপরন্তু কোনো ব্যক্তি, কোম্পানি বা পরিবারের কোনো সদস্য একক বা যৌথ বা উভয়ভাবে কোনো ব্যাংকের শতকরা দশ ভাগের বেশি শেয়ার রাখতে পারে না।

কিন্তু প্রস্তাবিত কমিউনিটি ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড প্রতিষ্ঠার জন্য এর মূলধন ৪০০ কোটি টাকা পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে কর্মরত পুলিশ সদস্যদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। সে কারণে এই ব্যাংকটির শেয়ার যাতে ট্রাস্টের মাধ্যমে পুলিশের হাতেই থাকে সেজন্য ব্যাংক কোম্পানি আইনের ওই ধারা থেকে অব্যাহতি চেয়ে গত মে মাসে পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্টের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আবেদন করা হয়।

সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৬ আগস্ট এ বিষয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের মতামত জানতে চেয়ে চিঠি পাঠায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে পাঠানো ওই চিঠিতে বলা হয়, প্রস্তাবিত ‘কমিউনিটি ব্যাংক বাংলাদেশ লি.’-এর পরিশোধিত মূলধন ৪০০ কোটি টাকার শতভাগের ধারক হবে বাংলাদেশ পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্ট। এর পরিচালকরা পাবেন ১০ টাকা অবিহিত মূল্যের শেয়ার। বাংলাদেশ পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্ট প্রস্তাবিত ব্যাংকটিতে শেয়ার ধারণের ক্ষেত্রে ব্যাংক-কোম্পানি আইনের ১৪ক(১) ধারা থেকে অব্যাহতি চাইছে। ব্যাংকটি স্থাপনের বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণসহ লাইসেন্স দেওয়ার প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গৃহীত হয়েছে। সে কারণে এখন ব্যাংকটিকে শেয়ার ধারণ সংক্রান্ত ব্যাংক-কোম্পানি আইনের ধারা থেকে অব্যাহতি দেওয়া প্রয়োজন।

পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্ট) ফেরদৌস আলী চৌধুরী এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত পাওয়ার কথা জানিয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ব্যাংকটি প্রতিষ্ঠার জন্য এর যে মূলধন তা পুলিশ সদস্যদের কাছ থেকেই সংগ্রহ করা হয়েছে। ফলে অন্যান্য ট্রাস্টের মতো এর শেয়ারও পুলিশের হাতেই থাকবে। তিনি বলেন, দেশের পুলিশ বাহিনীর সদস্য ও তাদের পরিবারবর্গের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতে আরও গতিসঞ্চার ও নতুন বিনিয়োগ সৃষ্টির লক্ষ্যে একটি নতুন বাণিজ্যিক ব্যাংক হিসেবে এ ব্যাংকটি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কবেনাগাদ ব্যাংকটি বাণিজ্যিক কার্যক্রম চালু করবে জানতে চাইলে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, আমরা মোটামুটি সব কার্যক্রম সম্পন্ন করেছি এখন বাংলাদেশ ব্যাংক লাইসেন্স দিলেই কার্যক্রম শুরু করা যাবে।

পুলিশ সদর দফতরের কল্যাণ ট্রাস্টের কর্মকর্তারা জানান, শুরুতে ঢাকাসহ সারা দেশে ছয়টি শাখায় ব্যাংকের কার্যক্রম চলবে। পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্টের মালিকানায় ব্যাংকটি প্রতিষ্ঠিত হলেও প্রচলিত অন্য বাণিজ্যিক ব্যাংকের মতোই এর কার্যক্রম পরিচালিত হবে। সব ধরনের গ্রাহক লেনদেন করতে পারবেন এই ব্যাংকে। ব্যাংক লাভজনক হলে তিন বছর পর মূলধন জোগানের ওপর প্রত্যেকে নির্ধারিত হারে লভ্যাংশ পাবেন। তা ছাড়া আরও বেশ কিছু সুবিধা পাবেন পুলিশ সদস্যরা। জমি কেনা, বাড়ি নির্মাণ, ব্যবসা উদ্যোগসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সদস্যরা স্বল্প সুদে ঋণ সুবিধা পাবেন।

প্রসঙ্গত, পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্টের অধীনে একটি ব্যাংক প্রতিষ্ঠার জন্য ২০১৬ সালের পুলিশ সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে প্রস্তাব করেন তখনকার পুলিশের মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক। ওই সময় প্রধানমন্ত্রী মূলধনের টাকা জোগাড় করতে পারলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছিলেন। পরে পুলিশের কল্যাণ ট্রাস্ট বোর্ড সভায় তহবিল গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। এরপর কনস্টেবল থেকে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) পর্যন্ত পদমর্যাদার প্রত্যেকের কাছ থেকে নির্দিষ্ট অংকের তহবিল সংগ্রহ করা হয়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর