মঙ্গলবার, ১৬ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা
মানববন্ধনে সম্পাদক পরিষদ

আলোচনার নামে যেন প্রহসন না হয়

নিজস্ব প্রতিবেদক

আলোচনার নামে যেন প্রহসন না হয়

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে গতকাল ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিভিন্ন ধারা বাতিলের দাবিতে সম্পাদক পরিষদের মানববন্ধন —বাংলাদেশ প্রতিদিন

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিতর্কিত ৯টি ধারাকে সাংবাদিকতা ও মুক্ত গণমাধ্যমের পরিপন্থী উল্লেখ করে সেগুলো সংসদের আগামী অধিবেশনেই সংশোধনের দাবি জানিয়েছে দেশের শীর্ষস্থানীয় পত্রিকার সম্পাদকদের সংগঠন সম্পাদক পরিষদ। গতকাল সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত মানববন্ধনে সম্পাদক পরিষদের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক ও ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্্ফুজ আনাম। সংগঠনের সাত দফা দাবিও তুলে ধরেন তিনি। মাহ্্ফুজ আনাম বলেন, বিভিন্ন মন্ত্রী বলেছেন— আলোচনার দরজা বন্ধ হয়নি। আমরাও মনে করি না আলোচনার দরজা বন্ধ। তবে আলোচনার নামে প্রহসন যেন না হয়। তিনি বলেন, আমরা আলোচনায় গিয়েছি, আমরা বিশ্বাস নিয়ে গিয়েছি। কিন্তু সেই বিশ্বাসের প্রতিফলন এখনো দেখিনি। একটি গ্রহণযোগ্য সমাধানের দিকে নিয়ে যেতে আলোচনায় আপত্তি নেই বলেও জানান তিনি। মাহ্্ফুজ আনাম বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাস হওয়ার আগ থেকেই এ আইনের বিভিন্ন ধারা নিয়ে সম্পাদক পরিষদের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ করে আসা হচ্ছিল। তারা মনে করেন, আইনটি স্বাধীন সাংবাদিকতা ও মুক্ত গণমাধ্যমের পরিপন্থী। সম্পাদক পরিষদ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিরোধী নয়। পরিষদ আইনের বিশেষ কতগুলো ধারা সংশোধনের দাবি করছে। বর্তমান আইনটি শুধু সাইবার জগৎ নয়, স্বাধীন গণমাধ্যমেরও কণ্ঠরোধ করবে। সম্পাদক পরিষদ চায়, আগামী সংসদ অধিবেশনেই এই আইন সংশোধনের মাধ্যমে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও স্বাধীন সাংবাদিকতা নিশ্চিত করা হবে। পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী মানববন্ধনে আরও অংশ নেন মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান, বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম, কালের কণ্ঠের সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন, নিউএজের সম্পাদক নূরুল কবির, সংবাদের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক খন্দকার মুনীরুজ্জামান, ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, যুগান্তরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সাইফুল আলম, করতোয়ার সম্পাদক মো. মোজাম্মেল হক, ইনকিলাব সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দীন, ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক শহীদুজ্জামান খান, ঢাকা ট্রিবিউনের সম্পাদক জাফর সোবহান, সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মুস্তাফিজ শফি, বণিক বার্তার সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ, ইন্ডিপেনডেন্টের সম্পাদক এম শামসুর রহমান প্রমুখ।

সংগঠনটির সাত দফা দাবিগুলো হলো— ১. সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও বাক?স্বাধীনতা সুরক্ষার লক্ষ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৮, ২১, ২৫, ২৮, ২৯, ৩১, ৩২, ৪৩ ও ৫৩ ধারাগুলো অবশ্যই যথাযথভাবে সংশোধন করতে হবে, ২. এসব সংশোধনী বর্তমান সংসদের শেষ অধিবেশনেই আনতে হবে, ৩. পুলিশ বা অন্য কোনো সংস্থার মাধ্যমে কোনো সংবাদমাধ্যম প্রতিষ্ঠানে তল্লাশি চালানোর ক্ষেত্রে তাদের শুধু নির্দিষ্ট বিষয়বস্তু আটকে দেওয়ার অনুমতি দেওয়া যেতে পারে, তবে কোনো কম্পিউটার ব্যবস্থা বন্ধ করার অনুমতি দেওয়া যাবে না। শুধু তখনই প্রকাশের বিষয়বস্তু আটকাতে পারবে, যখন সংশ্লিষ্ট সংবাদ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা করে কেন ওই বিষয়বস্তু আটকে দেওয়া উচিত, সেই বিষয়ে যৌক্তিকতা প্রমাণ করতে পারবে, ৪. কোনো সংবাদমাধ্যমের কোনো কম্পিউটার ব্যবস্থা আটকে দেওয়া বা জব্দ করার ক্ষেত্রে অবশ্যই আদালতের আগাম নির্দেশ নিতে হবে, ৫. সংবাদমাধ্যমের পেশাজীবীদের সাংবাদিকতা দায়িত্বের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অপরাধের ক্ষেত্রে প্রথমেই আদালতে হাজির হওয়ার জন্য তাদের বিরুদ্ধে সমন জারি করতে হবে এবং সংবাদমাধ্যমের পেশাজীবীদের কোনো অবস্থাতেই পরোয়ানা ছাড়া ও যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া ছাড়া আটক বা গ্রেফতার করা যাবে না, ৬. সংবাদমাধ্যমের পেশাজীবীর দ্বারা সংঘটিত অপরাধের ক্ষেত্রে তাদের বিরুদ্ধেও মামলা দায়েরের গ্রহণযোগ্যতা আছে কিনা, তার প্রাথমিক তদন্ত প্রেস কাউন্সিলের মাধ্যমে করতে হবে। ওই লক্ষ্যে প্রেস কাউন্সিলকে যথাযথভাবে শক্তিশালী করা যেতে পারে এবং ৭. এই সরকারের পাস করা তথ্য অধিকার আইন দ্ব্যর্থহীনভাবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ওপর প্রাধান্য দেওয়া উচিত। এই আইনে নাগরিক ও সংবাদমাধ্যমের জন্য যেসব স্বাধীনতা ও অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে, সেগুলোর সুরক্ষা অত্যাবশ্যকভাবে করতে হবে।

সর্বশেষ খবর