বুধবার, ১৭ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

হঠাৎ লাগামহীন ডলার, বিরূপ প্রভাবের আশঙ্কা আমদানিতে

আলী রিয়াজ

হঠাৎ লাগামহীন ডলার, বিরূপ প্রভাবের আশঙ্কা আমদানিতে

এক লাফে ২ টাকা বেড়ে ৮৬ টাকায় উঠেছে মার্কিন ডলারের দাম। এতে বিপাকে পড়েছেন আমদানিকারক, ভ্রমণপিপাসুসহ বিদেশে চিকিৎসাসেবা গ্রহীতা এবং শিক্ষার্থীরা। বর্তমানে বাজারে প্রতি ডলার বিক্রি হচ্ছে ৮৬ টাকায়। যদিও গত সপ্তাহেও ৮৪ টাকায় ডলার বিক্রি হয়েছে। এদিকে, টাকার মান রক্ষায় বাংলাদেশ ব্যাংক ৮৩ টাকা ৮০ পয়সা দরে ডলার সরবরাহ করছে। যা এক বছর আগের তুলনায় ৩ টাকা বেশি। গত বছর একই সময়ে ১ ডলারের দাম ছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সরবরাহ করা ৮০ টাকা ৮০ পয়সা। গতকাল কোনো ব্যাংকেই ৮৪ টাকার নিচে ডলার বিক্রি হতে দেখা যায়নি। বেশির ভাগ ব্যাংকে প্রতি ডলারের দর ছিল ৮৫ থেকে ৮৬ টাকায়। সরকারি ব্যাংকের মধ্যে সর্বোচ্চ দর দেখা গেছে বেসিক ব্যাংকে বিক্রি হয়েছে ৮৬ টাকা ৫০ পয়সা, সোনালী ব্যাংকে ৮৫ টাকা, অগ্রণী ব্যাংকে ৮৬ টাকা ও জনতা ব্যাংকে ৮৪ টাকা ২০ পয়সা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ভারতে রুপির মান ধারাবাহিকভাবে অবমূল্যায়ন হচ্ছে। তাতে বাংলাদেশে ডলারের মান কমতে পারে। এজন্য রপ্তানি ও রেমিট্যান্স প্রবাহ ধরে রাখতেই ডলারের বিপরীতে টাকার মান কিছুটা অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। বাংলাদেশ পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও আমদানিকারক হাজী মোহাম্মদ আবুল হাশেম গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ডলারের দাম বাড়লে আমদানি খরচ বাড়বে। স্বাভাবিকভাবেই এর প্রভাব স্থানীয় বাজারে পড়বে। তবে এটা এখন বোঝা যাবে না। এখন যেসব পণ্য আমদানির এলসি খোলা হচ্ছে সেগুলো যখন দেশে এসে পৌঁছাবে তখনই দাম বাড়বে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের নজরদারি বাড়ানো জরুরি। যেন কোনোভাবেই ডলারের বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি না হয় এবং কৃত্রিম সংকট তৈরি করে কেউ যেন ডলারের দাম বাড়াতে না পারে সেদিকেও নজর দেওয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কয়েক মাস ধরেই টাকা-ডলার বিনিময় হার অস্থিতিশীল। ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় মূল্য কমে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে বাজার স্থিতিশীল করতে বাজারে ডলার সরবরাহ করে চলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক চলতি মাসের প্রথম চার কার্যদিবসে ৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার বাজারে ছেড়েছে। আগের দুই মাসে ছাড়া হয়েছিল সাড়ে ৫ কোটি ডলার। জুলাইয়ে ছাড়া হয়েছিল এর প্রায় দ্বিগুণ। ওই মাসে বাজারে ১০ কোটি ডলার বিক্রি করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এর পরও সংকট কাটেনি। দামও নিয়ন্ত্রণে আসেনি। টাকার মানও অনেকটা অভ্যন্তরীণ কারণেই চাপে পড়েছে। গত কয়েক মাসে আমদানি ব্যয় অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে। কিন্তু তার বিপরীতে রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স প্রবাহ সেভাবে বাড়েনি। ফলে বাজারে ডলারের সরবরাহ কমে যাওয়ায় টাকার বিপরীতে তার বিনিময় মূল্য বেড়ে যাচ্ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে চেষ্টা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বিশেষ করে নির্বাচনের আগে টাকার বিপরীতে ডলারের মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে চায় তারা। কারণ টাকার মূল্য কমে গেলে বা ডলারের মূল্য বেড়ে গেলে ভোগ্যপণ্যের মূল্য বেড়ে যেতে পারে। ভোগ্যপণ্যের চাহিদার একটি বড় অংশ আমদানি করে পূরণ করতে হয়। ডলারের মূল্য বাড়লে আমদানি খরচও বেড়ে যায়। আর তার প্রভাব পড়ে স্থানীয় বাজারে। এদিকে আমদানি ব্যয়ের উচ্চ প্রবৃদ্ধির বিপরীতে রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স প্রবাহ ততটা না বাড়ায় দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও ক্রমান্বয়ে কমছে। এক বছরের ব্যবধানে রিজার্ভ ৩২ দশমিক ৯৩ বিলিয়ন থেকে ৩১ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। এই রিজার্ভ আমাদের পাঁচ মাসের আমদানি ব্যয় পূরণ করতে পারবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গত ১৬ অক্টোবরের তথ্যানুযায়ী, দেশের ব্যাংকগুলোতে নগদ ডলারের মূল্য সর্বোচ্চ ৮৬ টাকা উঠেছে। আমদানি পর্যায়ে ডলারের দর উঠেছে ৮৩ দশমিক ৮০ টাকায়। আর ব্রিটিশ পাউন্ডের দাম সোমবার দাঁড়িয়েছে ১১২ টাকা ২৯ পয়সা। এদিকে চলতি বছরের ২৮ জুন থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডলারের দাম একটি জায়গায় স্থিতিশীল রেখেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এই সময়ে বাজারের ডলারের সংকট সামাল দিতে ব্যাংকগুলোর কাছে ২০ কোটি ডলার বিক্রি করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। ৩ অক্টোবর পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৩১ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ডলারের দর নিয়ে অস্থিরতার কোনো কারণ নেই। দেশে কোনো সংকট নেই। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে ডলারের দর কিছুটা বেড়েছে। এর প্রভাব আমাদের এখানে পড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক পুরো বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছে। ডলারের দর যাতে কোনোভাবে নিয়ন্ত্রণহীন বা অস্থিরতা ছড়াতে না পারে সেজন্য আমরা বাজারে নগদ ডলার সরবরাহ করছি। আশা করি দ্রুত দর কমবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ডলারের দাম বাড়লে টাকার মান ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। এতে আমদান-রপ্তানির ওপর একটা প্রভাব পড়ে। কৃত্রিম কোনো সংকট রয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নজরদারি বাড়ানোর প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।

সর্বশেষ খবর