বুধবার, ১৭ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

ব্যাগ দেখলেই ওরা বোঝে টাকা আছে কি নেই

সাখাওয়াত কাওসার

‘ব্যাগ দেখলেই বুঝি টাকা আছে কি নাই।’ ব্যাগ বুঝে ঠিক করা হয় টার্গেট। জানিয়ে দেওয়া হয় টিমের অন্য সদস্যদের। সবাই যার যার মতো প্রস্তুতি নিয়ে নেন। ছক অনুযায়ী ওই ব্যাগের লোককে র‌্যাব কিংবা ডিবির সদস্য পরিচয়ে তুলে নেওয়া হয়। পরে কাজ হাসিল করে সুবিধামতো জায়গায় ফেলে দেওয়া হয়।’ কথাগুলো এক ভুয়া র‌্যাব সদস্য বাদল হোসেনের। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত সোমবার রাতে তাকে মতিঝিল এজিবি কলোনি আলহেলাল জোন ৩নং গেটের সামনে থেকে অস্ত্র ও র‌্যাব-পুলিশের জ্যাকেট, ওয়াকিটকি এবং বিভিন্ন সরঞ্জামসহ গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (পূর্ব) একটি দল। পরে তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী গতকাল বিকাল পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয় তার সহযোগী মো. আলামিন (২৩), মো. বশির (৪২), মো. লিটন (৪০) ও মো. আঃ রব (৫৫)। গতকালই তাদের আদালতের নির্দেশে ১ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, বাদল নিজেকে র‌্যাবের লে. কর্নেল এবং মাঝেমাঝে এসপি (পুলিশ সুপার) পরিচয় দেন। টার্গেট ঠিক করতে তারা বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকে অবস্থান নেয়। গ্রেফতারের আগ মুহূর্তে বাদল একটি ছিনতাইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। বাদল ছাড়াও মতিঝিল, পল্টন, খিলগাঁও, রামপুরা এলাকায় কবীর হোসেন, মিন্টু মিয়া, শাওনের নেতৃত্বে অন্তত ৭/৮টি দল আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পরিচয়ে ভিকটিম টার্গেট করে একের পর এক অপরাধ ঘটিয়ে আসছে। এরা মাইক্রোবাস নিয়ে র‌্যাব-ডিবি পরিচয়ে ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকার বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, শো-রুমসহ রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে ডাকাতি করে আসছিল।

ডিবির জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ কমিশনার আতিকুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বাদল ছাড়াও আরও অন্তত ৭/৮টি চক্র আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের পরিচয়ে বিভিন্ন অপকর্ম করে আসছে এমন তথ্য আমরা পেয়েছি। বাকি চক্রগুলোকেও আইনের আওতায় নিয়ে আসার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। গ্রেফতার ৫ ব্যক্তিকে আদালতের নির্দেশে একদিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। আশা করছি তাদের কাছ থেকে আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আদায় করা সম্ভব হবে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বাদল জানিয়েছে, গত সপ্তাহে বায়তুল মোকাররম মসজিদের এক নম্বর গেটের সামনে থেকে এক ব্যক্তির কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। ওই ব্যক্তি পার্শ্ববর্তী একটি ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করে বাস যোগে যাচ্ছিলেন। ওই বাসে তাদের এক সদস্য তাকে ফলো করে আসছিলেন। তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী বাদল চিটাগাং রোডের একটি জায়গায় র‌্যাবের স্টিকারযুক্ত একটি গাড়িতে অবস্থান করছিলেন। বাসটি ওই স্থানে যাওয়ামাত্রই থামিয়ে ওই ব্যক্তিকে র‌্যাব পরিচয়ে উঠিয়ে নেওয়া হয়। পরে তার টাকার ব্যাগটি হাতিয়ে নেওয়া হয়। রাস্তায় জ্যাম নেই এমন একটি জায়গায় তাকে ফেলে দিয়ে চলে যায় ছিনতাইকারীরা। কোটা আন্দোলন চলাকালীন পুরান ঢাকার আল রাজ্জাক হোটেলের সামনে থেকে আরও ৬৫ লাখ টাকার ব্যাগসহ এক ব্যক্তিকে সিএনজি থেকে উঠিয়ে নেয় এই চক্রটি। 

সূত্র আরও বলছে, ভুক্তভোগী অনেক ব্যক্তির হুন্ডির টাকা হওয়ায় তারা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সহায়তাও নিতে চান না।

বাদলের চক্রের বেশিরভাগ সদস্যই বিভিন্ন সময় গ্রেফতার হয়েছিলেন। তবে তাদের দলের রেখা নামের এক মহিলা তাদের জামিনের ব্যবস্থা করে থাকেন। ওই রেখাকে এখন খুঁজছে পুলিশ।

সর্বশেষ খবর