বৃহস্পতিবার, ১৮ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

নতুন ধারার রাজনীতির আহ্বান বিএনপির

মাহমুদ আজহার

ভিশন-২০৩০-এর পথ ধরেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ইশতেহার দেবে বিএনপি। প্রতিহিংসাকে ‘না’ জানিয়ে নতুন ধারার রাজনীতির ইশতেহার তৈরি করছে দলটি। তারুণ্যনির্ভর এ ইশতেহারে যুগোপযোগী স্লোগানের পাশাপাশি থাকবে প্রযুক্তির ছোঁয়া। নারীদেরও প্রাধান্য থাকবে ইশতেহারে। সমসাময়িক ইস্যুগুলোও ইশতেহারে যুক্ত করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। বিশেষ করে নিরাপদ সড়ক, মেধার ভিত্তিকে কোটাসহ চলমান ইস্যুগুলোও যুক্ত করা হবে। এরই মধ্যে ইশতেহার তৈরির কাজ অনেক দূর এগিয়েছে বলে জানা গেছে। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া জেলে যাওয়ার আগে ভিশন-২০৩০ ঘোষণার সময় জানান, ‘ভিশন ধরেই ইশতেহার তৈরি করা হবে।’ এর পরই দলের স্থায়ী কমিটি ও দলসমর্থিত বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে ইশতেহার তৈরির কাজ শুরু করে বিএনপি। সংসদ নির্বাচনে অংশ নিলে ভোটের আগমুহূর্তে এ ইশতেহার ঘোষণা করা হবে। বিএনপির সিনিয়র এক নেতা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, বিভাজন, প্রতিশোধ-প্রতিহিংসা নয়, গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সব রাজনৈতিক দলসহ সংশ্লিষ্ট সবার মতামত নিয়েই বিএনপি আগামী দিনের রাজনীতি করতে চায়। ইশতেহারে এ বিষয়ে সুস্পষ্ট ধারণা থাকবে। জানা জানায়, ইশতেহারের জন্য একটা ভালো স্লোগানও খোঁজা হচ্ছে। এজন্য বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মতামত নেওয়া হচ্ছে। বিশ্বায়নের নানা দিক তুলে ধরার পাশাপাশি তরুণ ও নারীদের আকৃষ্ট করতে নানামুখী উদ্যোগ থাকছে ইশতেহারে। সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে প্রযুক্তিকে। ইশতেহারে প্রতিহিংসা নয়, প্রতিশ্রুতি দেওয়া হবে ‘নতুন ধারার’ রাজনীতির। এসব বিষয়ে ভিশনেও কিছু তথ্য তুলে ধরেছে বিএনপি। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, বিএনপির ইশতেহারে থাকছে ‘নতুন ধারা’র পূর্ণাঙ্গ ধারণা। সরকার, সংসদ, রাজনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষা, কৃষি, পররাষ্ট্রনীতিসহ সরকারের প্রতিটি বিভাগে নতুন ধারার ধারণার আলোকে পরিকল্পনাসমূহ সন্নিবেশিত করা হচ্ছে। মেধার পরিপূর্ণ ব্যবহারের লক্ষ্যে চাকরিতে কোটা পদ্ধতি কমিয়ে আনা, প্রশাসন ও বিচার বিভাগে দলীয়করণের অবসান ঘটিয়ে মেধা, যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা থাকবে। শিক্ষা ও কৃষি খাতে যুগোপযোগী সংস্কারের মাধ্যমে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনা, কৃষকদের সহজশর্তে ঋণদান, বাস্তবমুখী শিক্ষাব্যবস্থা, হানাহানি, বিভক্তি ও বিভাজনের রাজনীতির অবসান, বিরোধী দলকে সত্যিকার অর্থেই বিকল্প সরকারের মর্যাদা দেওয়ার কথা বলা হবে। এ ছাড়া ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসার ক্ষেত্রে সহজে ঋণপ্রাপ্তির নিশ্চয়তাসহ ইতিবাচক সব অঙ্গীকার থাকছে এ নির্বাচনী ইশতেহারে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা এখন দলের প্রধান বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলন নিয়ে ব্যস্ত আছি। মুক্ত খালেদা জিয়াকে সঙ্গে নিয়েই নির্বাচনে যেতে চাই। তবে বিএনপি একটি নির্বাচনমুখী দল। নির্বাচনের জন্য ইশতেহার অবশ্যই দেওয়া হবে। ইশতেহারে ভিশন-২০৩০-এর নানা দিক গুরুত্ব পাবে।’

বিএনপি নেতারা মনে করেন, ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সময় বিএনপি যে ইশতেহার ঘোষণা করেছিল, তা যুগোপযোগী ছিল না। সেই ইশতেহার তরুণদের আকৃষ্ট করার মতো ছিল না। অন্যদিকে পরিবর্তনের স্লোগান দিয়ে আওয়ামী লীগ নির্বাচনী ইশতেহারে রূপকল্প-২০২১ তুলে ধরে। এতে তরুণরা বেশ আকৃষ্ট হয়। ‘ডিজিটাল’ বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখায় আওয়ামী লীগ। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা নির্বাচনে যাব কিনা তা নির্ভর করছে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির ওপর। বেগম জিয়া মুক্তি পেলে যদি নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি হয়, তাহলে ইশতেহার তৈরি করতে খুব একটা কঠিন হবে না। এ নিয়ে কাজও অনেক দূর এগিয়েছে।’ জানা যায়, ভিশনে যুক্ত থাকা বিএনপির স্থায়ী কমিটি ছাড়াও দলসমর্থিত বুদ্ধিজীবীরাই ইশতেহার তৈরির কাজ করছেন। এ ক্ষেত্রে মতামত নেওয়া হচ্ছে অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ, ড. মাহবুব উল্লাহ, মাহফুজ উল্লাহ, ইসমাইল জবিউল্লাহসহ সাবেক আমলাদের। দলের বাইরেও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত নেওয়া হচ্ছে। এগুলো যুক্ত হবে ইশতেহারে। পরে দলের স্থায়ী কমিটিতে তা চূড়ান্ত হবে।

সর্বশেষ খবর