শনিবার, ২০ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

ভাঙল বিকল্পধারা

একাংশ থাকছে ঐক্যফ্রন্টে মাহী বললেন ‘হাস্যকর’

নিজস্ব প্রতিবেদক

অবশেষে ভেঙে গেল সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর দল বিকল্পধারা বাংলাদেশ। বিকল্পধারার নতুন অংশটির সভাপতি করা হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক নুরুল আমিন বেপারীকে এবং মহাসচিব হয়েছেন অ্যাডভোকেট শাহ আহম্মেদ বাদল। গতকাল সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করতে না পেরে মূল ফটকের ভিতরে দাঁড়িয়ে এ কমিটি ঘোষণা দেন নতুন কমিটির মহাসচিব শাহ আহম্মেদ বাদল। তিনি বলেন, ড. কামাল হোসেন নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গেই থাকছেন তারা। এ সময় নিজেদের ‘মূল স্রোতের’ বিকল্পধারা দাবি করে বাদল বলেন, ‘আজ থেকে বর্তমান সভাপতি বি. চৌধুরী, মহাসচিব আবদুল মান্নান ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাহী বি. চৌধুরীকে পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হলো।’ অন্যদিকে বিকল্পধারার যুগ্ম মহাসচিব মাহী বি চৌধুরী এ ঘটনাকে হাস্যকর বলে মন্তব্য করেছেন।

বিকল্পধারার নতুন নেতৃত্ব দাবি করেন, ‘বি. চৌধুরীর পিছুটান রয়েছে। তিনি গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েও সরে গেছেন। আর মহাসচিব আবদুল মান্নান একজন দুর্নীতিবাজ। তার বিরুদ্ধে ১২শ’ কোটি টাকার ঋণখেলাপির অভিযোগ রয়েছে। আর মাহি বি. চৌধুরীর বিরুদ্ধে অবৈধ ভিওআইপির ব্যবসার অভিযোগ রয়েছে।’ সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের মূল গেটের সামনে দাঁড়িয়ে বিকল্পধারার নতুন নেতৃত্বের ঘোষণা দেন দলটির মহাসচিব দাবি করা অ্যাডভোকেট শাহ আহম্মেদ বাদল। অধ্যাপক নুরুল আমিন বেপারীকে পাশে রেখে বাদল বলেন, ‘আজ থেকে বিকল্প ধারার সভাপতি নুরুল আমিন বেপারী ও আমি মহাসচিব। অন্যান্য পদে কয়েকদিনের মধ্যে আমরা মনোনয়ন দেব।’ তিনি বলেন, ‘১৪ বছর ধরে বাবা-ছেলে মিলে বিকল্পধারাকে পারিবারিক ক্লাবে পরিণত করেছেন। এটা আর চলতে দেওয়া যায় না। ৭১ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটিতে সক্রিয় ২৬ জনের মতো। এর মধ্যে আমাদের সঙ্গেই রয়েছেন ১৭জন।’ প্রেস ক্লাব চত্বরে এ সময় বিকল্পধারার কৃষিবিষয়ক সম্পাদক জানে আলম হাওলাদার, কেন্দ্রীয় নেতা এল কে চৌধুরী, অ্যাডভোকেট এম এ মতিন, এম এ কাইয়ুম, আজমেরি বেগম ছন্দা, বাবু সুবিনয় সাহা, মিজান চৌধুরী, শাহজাহান সাজুসহ দুই শতাধিক নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন। এক পর্যায়ে পরিস্থিতি বেগতিক দেখে কিছু নেতা-কর্মী সরে যান। এ সময় বেশকিছু অপরিচিত লোক এসে ধাক্কাধাক্কি করে বলেও জানান উদ্যোক্তারা। নতুন অংশের সভাপতি নুরুল আমিন বেপারী বলেন, ‘বাংলাদেশকে একটি গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে দেখতে চাই। অধ্যাপক বি. চৌধুরী একজন বিজ্ঞ রাজনীতিবিদ ছিলেন। তিনি অনেক বিনয়ী। কিন্তু পিছুটানের জন্য তিনি হয়তো ভূমিকা রাখতে পারছেন না।  এ কারণে জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে বিকল্পধারার সক্রিয় ভূমিকা জরুরি। তাই ড. কামালের নেতৃত্বে যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সৃষ্টি হয়েছে তার সঙ্গে কাজ করব। আমরা চাই, সাংবিধানিকভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকেও সক্রিয় করতে হবে।’ মহাসচিব অ্যাডভোকেট শাহ আহম্মেদ বাদল বলেন, ‘আমরা বিকল্পধারার মূল স্রোত। আজকের বিরাজমান জাতীয় সংকটে কর্তৃত্ববাদি সরকারের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা জাতীয় ঐক্যের সঙ্গে আমরা থাকব। যারা ঐক্য প্রক্রিয়া থেকে আমাদের দলকে বিচ্ছিন্ন করেছেন তারা শুধু বিকল্পধারার সঙ্গেই নয়, পুরো জাতির সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতৃত্বে একটি গ্রহণযোগ্য সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের সংগ্রাম চলছে, আমরা তার সঙ্গে অংশীদার হতে চাই।’ তিনি বলেন, ‘গতকাল সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে আমাদের সংবাদ সম্মেলন করার কথা ছিল। কিন্তু যখন আমরা সেখানে গেলাম, আমাদের বুকিং বাতিল করা হয়েছে জানিয়ে কর্তৃপক্ষ অনুষ্ঠান আয়োজন করতে দেয়নি। এমনকি বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে কে বা কারা আমাকে ফোন করে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে। প্রেস ক্লাবে গেলে আমাকে ও আমার পরিবারকে মেরে ফেলার হুমকিও দেওয়া হয়। তারপরও দেশ-গণতন্ত্রের স্বার্থে আমরা প্রেস ক্লাবের ভিতরে থেকেই সংবাদ সম্মেলন করেছি। বাদল বলেন, ‘শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে পার্টির গঠনতন্ত্রের ৫/২ ধারায় আমরা অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী, আবদুল মান্নান ও মাহী বি.  চৌধুরীকে দল থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

বিকল্পধারার নামে দল গঠন হাস্যকর-মাহী বি চৌধুরী : বিকল্পধারার যুগ্ম মহাসচিব ও দলের মুখপাত্র মাহী বি চৌধুরী বলেছেন, ‘যারা বিকল্পধারার  প্রেসিডেন্ট ও মহাসচিবকে বহিষ্কার করেছেন তারা বহিষ্কৃত হয়েছেন এক মাস আগেই। এরা বিকল্পধারার কেউ নন। সুতরাং বিকল্পধারার নামে দল গঠন ঘৃণিত ও হাস্যকর। এর পিছনে একটি বড় রাজনৈতিক দলের ষড়যন্ত্র থাকতে পারে। সেখান থেকে হয়ে থাকলে এটা খুবই দুঃখজনক।’ গতকাল সন্ধ্যায় রাজধানীর বারিধারায় বি চৌধুরীর বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিকল্পধারার নেতা মুহাম্মদ ইউসুফ, আবদুর রউফ মান্নান, মাহবুব আলী, ব্যারিস্টার ওমর ফারুক, হাফিজুর রহমান ঝান্টু প্রমুখ।

মাহী বি চৌধুরী বলেন, ‘আমরা বিএনপিকে আগেই বলেছি, স্বাধীনতাবিরোধীদের ছাড়লে এবং ভারসাম্যের রাজনীতি মেনে নিলে তাদের সঙ্গে ঐক্য করতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। এখনো বিএনপির ৭০/৮০ ভাগ মানুষ স্বাধীনতা বিরোধীদের সঙ্গে ঐক্যের বিরোধী। আমরা জাতীয়তাবাদী শক্তির বৃহৎ ঐক্য চাই। এ লক্ষ্যে ইতিমধ্যে বাংলাদেশ ন্যাপ এবং এনডিপি যুক্তফ্রন্টে কাজ করতে সম্মত হয়েছে। আরও অনেক দল এবং বিশিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তি আমাদের সঙ্গে  যোগাযোগ করছেন।’

তিনি বলেন, ‘২০০১ সালে বিএনপি স্বাধীনতাবিরোধীদের সঙ্গে জোট করেছে, সে সময় থেকে বিএনপিতে ভাঙনের সূত্রপাত। বি  চৌধুরী ৭ মাস  প্রেসিডেন্ট থাকার পর পদত্যাগ করেন। ২০০৪ সালে সংসদ সদস্যপদ  থেকে পদত্যাগ করেন  মেজর (অব.) মান্নান ও মাহী বি চৌধুরী। তারপর কর্নেল অলির নেতৃত্বে মন্ত্রী এমপিসহ আরও পদত্যাগ করেন ৩০/৩৫ জন। এরপর বিএনপির মহাসচিব মান্নান ভূইয়ার নেতৃত্বে সব ভাঙনই হয় স্বাধীনতাবিরোধীদের  জোটে  নেওয়ার কারণে।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর