রবিবার, ২১ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

উন্নয়ন যেন অব্যাহত থাকে : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

উন্নয়ন যেন অব্যাহত থাকে : প্রধানমন্ত্রী

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট চেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশে তাঁর সরকার যে উন্নয়নের ধারা শুরু করেছে, সেই ধারাটা যেন অব্যাহত থাকে। তিনি বলেন, ‘আশা করি দেশের জনগণ নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আবারও আমাদের সেবা করার সুযোগ দেবে। আমরা নির্বাচিত হয়ে আসব।’ গতকাল সন্ধ্যায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘নির্বাচনে সবাই ভোট চায়, আমরাও চাই যাতে উন্নয়নের ধারাটা অব্যাহত থাকে। সরকারের ধারাবাহিকতা না থাকলে উন্নয়ন বন্ধ হয়ে যায়। ’৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত যে কাজগুলো করেছিলাম যখন দেখলাম একে একে সব বন্ধ হয়ে যাচ্ছে তখন সত্যিই খুব দুঃখ পেয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘জনগণ যদি ভোট দেয় তাহলে ক্ষমতায় আসব। আর যদি নাও দেয় কোনো আফসোস নেই।’ শিক্ষার ব্যবস্থাপনা ও মানোন্নয়নে সরকার-গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, ‘৯৬ সালে সাক্ষরতার হার ছিল মাত্র ৪৫ শতাংশ। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। এরপর সাক্ষরতা বাড়াতে বিভিন্নভাবে উৎসাহিত করতে থাকি। তার সুফলও আমরা পাই। ৬৫.৫ ভাগে উন্নীত করতে সক্ষম হই। আমাদের দুর্ভাগ্যটা হলো, যখনই সরকার পরিবর্তন হয় তখন সবকিছু পরিবর্তন হয়ে যায়। ২০০১ সালে আমরা ক্ষমতায় আসতে পারিনি তখন সবকিছু পরিবর্তন হয়ে যায়। ২০০৮ সালে যখন ক্ষমতায় আসি তখন দেখি সাক্ষরতার হার আবার নেমে গিয়ে ৪৪ শতাংশে ঠেকেছে। একটা দেশ তো সামনে এগিয়ে যাবে কিন্তু পিছিয়ে কীভাবে যায় তা বুঝতে পারি না।’

পদ্মা সেতু নিয়ে বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের টাকায় পদ্মা সেতু করার একটা সিদ্ধান্ত নিলাম তখন সারা বাংলাদেশ থেকে সাড়া পেয়েছি। হয়তো আমার দুয়েকজন মন্ত্রী, উপদেষ্টা সঙ্গে ছিলেন না। এই একটা সিদ্ধান্তেই বাংলাদেশের ভাবমূর্তি পরিবর্তন হয়ে গেছে। হ্যাঁ, এজন্য আমার পরিবার অনেক অত্যাচার সহ্য করেছে তবু কারও কাছে মাথা নত করিনি। কারণ জাতির পিতা আমাদের মাথা নত করা শেখাননি।’

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই বঙ্গবন্ধুর ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা হিসেবে। আমি বিশ্বাস করি একটা শিক্ষিত জাতি ছাড়া কোনো জাতি ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত হতে পারে না। তাই শিক্ষাকে আমরা সবসময় গুরুত্ব দিই।’ তিনি বলেন, ‘শিক্ষকমণ্ডলী আপনাদের কাছে এটা আমরা চাই— আপনারা তো মানুষ গড়ার কারিগর, আপনারা শিক্ষক। আপনাদের কাছে জাতির অনেক আশা। অবশ্যই আপনারা এ দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। এখন যারা শিক্ষক বয়সে অনেকে আমার চেয়ে ছোট। আপনাদের হাতে দেশের ভবিষ্যৎ। আবার মুরব্বিরাও আছেন। আপনাদের বলব, আপনাদের হাতে দেশের ভবিষ্যৎ।’

সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সবাইকে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশকে জঙ্গি-সন্ত্রাসমুক্ত করতে হবে। এটা শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে হবে না। শিক্ষক, অভিভাবক সবাই মিলে সমাজের দায়িত্ব নিতে হবে। ছেলেমেয়েরা কার সঙ্গে মিশল, কোথায় গেল, তাদের চরিত্র ঠিক আছে কিনা, পড়াশোনায় মনোযোগী কিনা তা কিন্তু বাবা-মাকে দেখতে হবে, শিক্ষকদের দায়িত্ব নিতে হবে। এ কাজে ইমাম-মুয়াজ্জিনদের সম্পৃক্ত করতে হবে।’

নতুন নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় সরকারের উদ্যোগের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের কলেবর বৃদ্ধি না করে আমরা আরও নতুন নতুন বিশ্ববিদ্যালয় করে দেব; যাতে প্রতিটি এলাকায় ছেলেমেয়েরা নিজেদের ঘরে বসে পড়াশোনা করতে পারে।’

মাদ্রাসা শিক্ষার আধুনিকায়নের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘মাদ্রাসা শিক্ষাকে আমরা মেইন স্ট্রিমে নিয়ে এসেছি। ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি পার্থিব শিক্ষার মাধ্যমে তারাও যেন মানুষের মতো মানুষ হয়ে নিজেদের কর্মোপযোগী করতে পারে, আমরা তারও ব্যবস্থা করতে পেরেছি।’ তিনি বলেন, ‘অসাম্প্রদায়িক চেতনা নিয়ে বাংলাদেশ গড়ে উঠেছে। আমরা বাংলাদেশকে সেভাবে গড়ে তুলতে চাই।’

সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামালের সভাপতিত্বে সম্মেলনে বক্তব্য দেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব সোহরাব হোসাইন। সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের মহাসচিব শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম।

সর্বশেষ খবর