সোমবার, ২২ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

কাশবনে রাস্তার পাশে ছয় লাশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর তুরাগের দিয়াবাড়ীতে দুটি এবং নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে মিলেছে চার ব্যক্তির লাশ। গত শনিবার মধ্যরাত থেকে গতকাল ভোর পর্যন্ত তিন ঘণ্টার ব্যবধানে এ ছয় লাশ উদ্ধারের ঘটনা ঘটেছে। এত লাশ পড়ার ঘটনা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ভাবনায় ফেলেছে। পুলিশ জানিয়েছে, ছয়জনকেই হত্যা করা হয়েছে। শনিবার মধ্যরাতে তুরাগের দিয়াবাড়ীতে পচে গলে যাওয়া দুটি লাশ উদ্ধার করা হয় কাশবনের ভিতর থেকে। পুলিশের ধারণা, কয়েক দিন আগে হত্যার পর লাশ দুটি ফেলে যাওয়া হয়। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে গাজীপুরের বাসিন্দা মিজান লাশ শনাক্ত করে বলেন, নিহত দুজনের মধ্যে একজন তার ভাই বেলাল হোসেন বাবু। অপরজন বাবুর বন্ধু সাইদুর রহমান বিপ্লব। দুজনই ঝুট ব্যবসায়ী। মিজান জানিয়েছেন, ১১ অক্টোবর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তার ভাইসহ দুজনকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর তাদের আর খোঁজ মেলেনি। এ ব্যাপারে মিজান টঙ্গী পূর্ব থানায় একটি জিডি করেন। তুরাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূরুল মুক্তাকিন বলেন, স্থানীয়দের কাছে খবর পেয়ে রাজউকের উত্তরা আবাসিক এলাকার ১৬ নম্বর সেক্টরের ফাঁকা জায়গা থেকে দুটি লাশ উদ্ধার করা হয়। লাশ দুটি ময়নাতদন্তের জন্য গতকাল ভোরে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। নিহত একজনের পরনে প্যান্ট ও শার্ট এবং অপরজনের প্যান্ট ও গেঞ্জি ছিল। তাদের বয়স ৩০ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে। জানা গেছে, নিহত সাইদুর রহমান বিপ্লব এবং বেলাল হোসেন বাবুর গ্রামের বাড়ি গাজীপুরের টঙ্গী থানার দত্তপাড়া এলাকায়। পুলিশ বলছে, তারা ঝুট ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তাদের বিরুদ্ধে মাদকের মামলাও রয়েছে। সরেজমিন দিয়াবাড়ী এলাকায় দেখা গেছে, ঘটনাস্থল উত্তরার ১৬ নম্বর সেক্টর এলাকায়। ঘটনাস্থলের পাশে তুরাগ থানার নির্মাণাধীন পাঁচতলা স্থায়ী ভবনের কাজ চলছে। তার পাশে ১০ তলা পাসপোর্ট অফিস ভবন রয়েছে। তবে আশপাশে কোনো দোকান নেই। অনেকটা নির্জন এলাকা। পাশেই বেড়িবাঁধ। রয়েছে এনডিই গেট। ঘটনাস্থলের আশপাশে পাকা রাস্তা, কাশবন এবং সবজির মাচা রয়েছে। নির্মাণাধীন ভবনের এক শ্রমিক জানান, শনিবার বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে এক নারী কাশবনের মধ্যে লাশ পড়ে থাকার কথা জানান। এরপরই তিনি তুরাগ থানায় খবর দেন।

আড়াইহাজারে চার লাশ : আড়াইহাজারে চার লাশের মধ্যে তিনজনের মাথার পেছনে গুলি করা হয়। চারজনেরই মুখ ছিল থেঁতলানো। তাদের একজনের পরিচয় মিলেছে। তার নাম লুত্ফর মোল্লা। তাকে নিজের স্বামী বলে শনাক্ত করেন রামপুরার বাসিন্দা রেশমা বেগম। তিনি বলেন, তার স্বামী পেশায় গাড়িচালক। বৃহস্পতিবার বাসা থেকে বেরিয়ে যান। ট্রিপ নিয়ে রাজশাহী যাওয়ার কথা ছিল। বাসায় না ফেরায় তিনি রামপুরা থানায় জিডি করেন। অপর তিনজনের পরিচয় পাওয়া যায়নি। পুলিশ জানায়, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের আড়াইহাজারের পাঁচরুখী ঘিদিরপাড়া নামক স্থানে সড়কের দুই পাশে দুটি করে লাশ পড়ে ছিল। তিনজনকে মাথার পেছন থেকে গুলি করা হয়েছে। ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক জানিয়েছেন, খুব কাছ থেকে একটি শটগান দিয়ে তাদের গুলি করা হয়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে গুলিসহ দুটি পিস্তল ও একটি মাইক্রোবাস উদ্ধার করে। নিহত চারজনের মধ্যে একজনের পরিচয় মিলেছে। তবে কারা হত্যাকারী, পুলিশ নিশ্চিত হতে পারেনি।  

নারায়ণগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, পাঁচরুখী এলাকায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে চারটি লাশ পড়েছিল। পুলিশ খবর পেয়ে ভোর ৫টার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশগুলো উদ্ধার করে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, দুই দল সন্ত্রাসী গ্রুপের দ্বন্দ্ব্বে এ ঘটনা ঘটতে পারে। ঘটনাস্থল থেকে দুটি পিস্তল, এক রাউন্ড তাজা গুলি, একটি নোয়া ব্র্যান্ডের সাদা মাইক্রোবাস উদ্ধার করা হয়েছে। মরদেহগুলোর মুখমণ্ডলে আঘাতের চিহ্ন ছিল। নিহতদের বয়স ৩০ থেকে ৪৫ এর মধ্যে। ঘটনা তদন্তের কথা উল্লেখ করে তিনি জানান, ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হওয়া মাইক্রোবাসটি চেসিস নং দিয়ে বিআরটিএ থেকে জানা গেছে রফিক আকন্দ নামে এক ব্যক্তি এর মালিক।

সর্বশেষ খবর