মঙ্গলবার, ২৩ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা
সংবাদ সম্মেলনে ড. কামাল হোসেন

প্রার্থিতা বা রাষ্ট্রীয় পদের ইচ্ছা নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রার্থিতা বা রাষ্ট্রীয় পদের ইচ্ছা নেই

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষনেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছেন, ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার বা কোনো রাষ্ট্রীয় পদ পাওয়ার ইচ্ছে আমার নেই। যারা ক্রমাগতভাবে আমার বিরুদ্ধে বিদ্বেষপূর্ণ ভিত্তিহীন ব্যক্তিগত আক্রমণ করে চলেছেন,  তাদের প্রতি আমার এই পরিষ্কার বার্তা। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার ভিত্তি হিসেবে একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টাকে ভুল ব্যাখ্যা করা হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘একটি গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ ও বহুমাত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য আমি কাজ করে যাব। জামায়াতে ইসলামী বা তারেক রহমানসহ অন্য কোনো বিশেষ নেতার প্রতি সমর্থন হিসেবে এ উদ্যোগকে দেখার কোনো সুযোগ নেই।’ গতকাল বিকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে গণফোরামের  জনাকীর্ণ এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত রায় চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু, কেন্দ্রীয় নেতা মফিজুল ইসলাম খান কামাল, অ্যাডভোকেট জগলুল হায়দার আফ্রিক, আওম শফিকউল্লাহ, জামাল উদ্দিন আহম্মেদ, অ্যাডভোকেট আলতাফ হোসেন, মোকাব্বির খান, মোস্তাক হোসেন, রফিকুল ইসলাম পথিক, ফরিদা ইয়াসমিন প্রমুখ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। এক প্রশ্নের জবাবে বর্ষীয়ান এই রাজনীতিক বলেন, ‘আমাদের এই ঐক্যের সঙ্গে জামায়াতের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। এটা আগেও পরিষ্কার করে বলা হয়েছে। এখনো বলছি, স্বাধীনতাবিরোধী কোনো শক্তির সঙ্গে আমাদের ঐক্য নয়। আর একটি বিষয় পরিষ্কার করে বলতে চাই, আমরা ঐক্য করেছি কয়েকটি রাজনৈতিক দল মিলে। কিন্তু কোনো ব্যক্তিবিশেষের সঙ্গে আমাদের ঐক্যের কোনো সম্পর্ক নেই।’ ড. কামাল হোসেন স্পষ্ট ভাষায় বলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট তার সাতটি দাবি ও ১১টি লক্ষ্যের প্রতি সংকল্পবদ্ধ। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে এই লক্ষ্যগুলো অর্জনে কাজ করে যাওয়া ছাড়া অন্য কোনো বিষয়ে এই প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত দলগুলোর কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। সংবিধানপ্রণেতা ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘যারা ক্রমাগতভাবে আমার বিরুদ্ধে বিদ্বেষপূর্ণ ভিত্তিহীন ব্যক্তিগত আক্রমণ করে চলেছেন, তাদের আমি এ বিষয়টি স্পষ্ট করে দিতে চাই যে, নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার বা কোনো রাষ্ট্রীয় পদ পাওয়ার কোনো ইচ্ছা আমার নেই। একটি গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ ও বহুমাত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য আমি কাজ করে যাব।’ বিশিষ্ট এই আইনজীবী বলেন, ‘জনগণের উদ্বেগ ও আগ্রহের পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের কয়েকজন প্রতিনিধির সঙ্গে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টির জন্য ব্যাপক আলোচনার ভিত্তিতে গণফোরাম সাতটি দাবির ব্যাপারে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে। দাবিগুলো হচ্ছে—নির্বাচনের আগে বর্তমান সংসদ ভেঙে দেওয়া, মন্ত্রিসভার পদত্যাগ, সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে একটি নিরপেক্ষ নির্দলীয় নির্বাহী বিভাগ বা সরকার গঠন, রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তি দেওয়া, বাকস্বাধীনতা ও রাজনৈতিক সভা-সমাবেশের অধিকার নিশ্চিত করা, জনগণের আস্থা আছে এমন ব্যক্তিদের সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন এবং নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করা। সাবেক এই পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমি উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, একটি গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার ভিত্তি হিসেবে একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টাকে ভুল ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। আমাদের সাত দফা দাবি প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে আমরা বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও দেশের নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা জাতীয় পর্যায়ে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে মতৈক্যে পৌঁছেছি। ফলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নামে একটি উদ্যোগ প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে।’ তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের ঐক্য বজায় রাখার লক্ষ্যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট কাজ করে যাবে, যাতে রাষ্ট্র ও সমাজের সর্বত্র গণতান্ত্রিক চর্চার জন্য একটি কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়। সুষ্ঠু ও অবাধ জাতীয় নির্বাচনের লক্ষ্যে আমাদের দাবিগুলো আদায়ের জন্য আমরা এমন ব্যক্তি ও দলের সঙ্গে কাজ করব, যারা একটি গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় সংকল্পবদ্ধ এবং যারা এমন একটি সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে চান, যেখানে ধর্ম, জাতিগত পরিচয় ও লিঙ্গের ভিত্তিতে কারও বিরুদ্ধে বৈষম্য করা হবে না। আমরা বিভাগ ও জেলা পর্যায়ে সমাবেশ করব। আগামী ২৪ অক্টোবর সিলেটে এবং ২৭ অক্টোবর চট্টগ্রামে সমাবেশ করার কথা রয়েছে। এরপর পর্যায়ক্রমে আরও কর্মসূচি দেওয়া হবে। পরবর্তী সময়ে ঢাকায়ও মহাসমাবেশ করার পরিকল্পনা রয়েছে।’

গণফোরাম সভাপতি কামাল হোসেন বলেন, ‘আমরা দল হিসেবে বিএনপির সঙ্গে ঐক্য করেছি। কিন্তু ব্যক্তি তারেক রহমানের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। তার সঙ্গে আমার কোনো কথাবার্তা বা যোগাযোগও হয়নি। আমরা কয়েকটি দল নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে ঐক্য করেছি। আর সেই জন্য জনমত গঠনে কাজ করছি।’

রবিবার জাতীয় সংসদে ড. কামাল হোসেনকে নিয়ে যেসব মন্তব্য করা হয়েছে সে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এসব নিয়ে মন্তব্য করার প্রয়োজন মনে করছি না। যদি কখনো প্রয়োজন মনে করি তাহলে তখন মন্তব্য করব। আর সংসদে তারা অনেক কিছু নিয়ে আলোচনা করতেই পারে। স্বাধীনতার ৪৭ বছরের মাথায় এসে কে কী বলল তাতে কিছু যায়-আসে না।’ ‘সংবিধানের বাইরে কোনো দাবি মানা হবে না’—আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এই সংবিধান তো তারাই সংশোধন করেছে। আগের সংবিধানে আমাদের দাবিগুলো ছিল। আমরা আগের সংবিধানে যেগুলো ছিল সেগুলোর কথাই বলেছি।’

দাবি মানা না হলে কর্মসূচি কেমন হবে জানতে চাইলে ড. কামাল বলেন, ‘আমরা আপাতত সারা দেশে যে জনমত গঠন করব তার মাধ্যমে আশা করি দাবি আদায় হবে। এর পরও যদি দাবি আদায় না হয়, তাহলে গভীরভাবে ভেবে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন না হলে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। শুধু তা-ই নয়, দেশের নাগরিকরা তাদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে থাকে। তাই জনমত গড়তে মঙ্গলবার সিলেট যাব। তারপর চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও খুলনা সফর করব।

‘বর্তমান নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে একটি সার্চ কমিটির মধ্য দিয়ে। ওখানে আপনারও মতামত ছিল। এখন কেন নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের কথা বলছেন?’—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন তাদের সততা ও নিরপেক্ষতা দেখাতে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে। চিফ ইলেকশন কমিশনার নিজেই তার এই ব্যর্থতার কথা স্বীকার করে বলেছেন, নির্বাচনে যে অনিয়ম হবে না তার নিশ্চয়তা তারা দিতে পারেন না। সে জন্যই আমাদের এই দাবি।’

সর্বশেষ খবর