বৃহস্পতিবার, ২৫ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

জিম্বাবুয়েকে উড়িয়ে সিরিজ টাইগারদের

মেজবাহ্-উল-হক, চট্টগ্রাম থেকে

জিম্বাবুয়েকে উড়িয়ে সিরিজ টাইগারদের

৯০ রান করে সাজঘরে ফেরেন ইমরুল

চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের উইকেট এমনিতেই ব্যাটিং সহায়ক। শিশির পড়ায় দ্বিতীয় ইনিংসে বাইশগজ যেন ব্যাটসম্যানদের জন্য স্বর্গরাজ্য হয়ে যায়। টস জিতে কাল সেই রাজ্যে রাজত্ব করলেন মাশরাফিরা। ৭ উইকেটের উড়ন্ত জয়ে এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ নিশ্চিত করল বাংলাদেশ। আফ্রিকা মহাদেশের দলটির বিরুদ্ধে টানা নবম সিরিজ জয়। গতকাল জিম্বাবুয়েকে মাত্র ২৪৬ রানে আটকে দিয়ে বাংলাদেশের জয়ের ভিতটা গড়ে দিয়েছিলেন আসলে বোলাররাই। তারপর ওপেনিং জুটিতে লিটন দাস ও ইমরুল কায়েস মিলে ১৪৮ রান করার পর ম্যাচের আকর্ষণ যেন নষ্ট হয়ে যায়! যদিও ৪ রানের ব্যবধানে দুই উইকেট নিয়ে জিম্বাবুয়ের বোলার সিকান্দার রাজা একটুখানি উত্তাপ ছড়ানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু মিস্টার ডিপেন্ডেবল মুশফিকুর রহিম উইকেটে গিয়ে আর কোনো সুযোগই দিলেন না। কালকের ম্যাচে টাইগারদের বড় প্রাপ্তি বোধহয় ‘পারফেক্ট’ পেস অলরাউন্ডার হিসেবে মোহাম্মদ সাইফুদ্দিনকে ফিরে পাওয়া। আগের ম্যাচে দলের ব্যাটিং বিপর্যয়ের সময় ব্যাট হাতে নেমে খেলেছিলেন ৫০ রানের অসাধারণ এক ইনিংস। আর গতকাল ৪৫ রানে ৩ উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরা হয়ে গেলেন। বাকি দুই পেসার মাশরাফি ও মুস্তাফিজও দারুণ বোলিং করেছেন। কাটার মাস্টার উইকেট একটি পেলেও ১০ ওভারের বোলিং কোটায় রান দিয়েছেন মাত্র ৩৫। মাশরাফি ৪৯ রান দিয়ে নিয়েছেন এক উইকেট। কাল সফরকারীদের ব্যাটিংয়ের শুরুটা মোটেও খারাপ ছিল না। ২০.৪ ওভারেই জিম্বাবুয়ে মাত্র দুই উইকেট হারিয়ে দলগতভাবে সেঞ্চুরি স্পর্শ করে। তারপরও বড় স্কোর করতে পারেনি ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায়। জিম্বাবুয়ের হয়ে সর্বোচ্চ ৭৫ রান করেছেন অভিজ্ঞ ব্রেন্ডর টেলর। এ ছাড়া সিকান্দার রাজা ৪৯ এবং সিন উইলিয়ামস করেছেন ৪৭ রান। ব্যাটিংয়ের মতো বোলিংয়েও দাপট দেখিয়েছেন রাজা। বাংলাদেশের পতন ঘটা তিন উইকেটই নিয়েছেন পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত এই জিম্বাবুইয়ান। অন্য বোলারদের পাত্তাই দেননি টাইগার-ব্যাটসম্যানরা। লিটন দাস ৭৭ বলে খেলেছেন ৮৩ রান। আরেক ওপেনার ইমরুলের ব্যাট থেকে এসেছে ৯০ রান। একটু ধৈর্য ধরলে টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরিটাও পেয়ে যেতেন মেহেরপুরের এই তারকা ক্রিকেটাররা। আগের ম্যাচে তিনি খেলেছিলেন ১৪৪ রানের মহাকাব্যিক ইনিংস। তাই ১০ রানের আক্ষেপটা যে থেকেই গেল। আফসোস হতে পারে লিটন দাসেরও। হঠাৎই রাজার বলে বিভ্রান্ত হয়ে ক্যাচ তুলে দিলেন। মুহূর্তের ভুলে সেঞ্চুরিটা মিস করলেন লিটন। তাই দুরন্ত এই জয়ের দিনেও সঙ্গী হলো খানিকটা অতৃপ্তি। তবে দলীয় সাফল্যের দিনে ব্যক্তিগত হতাশার জায়গা কোথায়! অন্য দিয়ে এক ম্যাচ আগে সিরিজ হারের মধ্য দিয়ে জিম্বাবুয়েও বুঝে গেল বাংলাদেশ কতটা ভয়ঙ্কর! দেশের মাটিতে টাইগাররা নিউজিল্যান্ডের মতো ক্রিকেট পরাশক্তিকে একাধিকবার বাংলাওয়াশ করেছে। অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, পাকিস্তান কিংবা ভারতের মতো বড় দলগুলোও বাংলাদেশে আসলে কাঁপতে থাকে। সেখানে ক্ষয়িষ্ণু এই জিম্বাবুয়ের আর কি-ই বা করার আছে! বরং সামর্থ্য অনুযায়ী সেরাটা উজাড় করে দিয়েই খেলেছে আফ্রিকার দলটি। এমন পরিস্থিতিতে জিম্বাবুয়ে হতাশ না হয়ে বরং সান্ত্বনা খুঁজে নিতে পারে আমেরিকার কিংবদন্তি গায়ক ফ্রাঙ্ক সিনাত্রার কালজয়ী ‘মাই ওয়ে’ গানে— ‘সান্ত্বনা এটাই, আমি আমার কাজ আমার মতো করে করেছি।’

সর্বশেষ খবর