শুক্রবার, ২৬ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

ইভিএমের আশা ছাড়ছে না ইসি

ডিসেম্বরেই নির্বাচন, আরপিও সংসদে পাস না হলে অধ্যাদেশ

গোলাম রাব্বানী

ইভিএমের আশা ছাড়ছে না ইসি

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের আশা ছাড়ছে না নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এজন্য নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। প্রয়োজনীয়সংখ্যক ইভিএমও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এ ছাড়া ভোটারের কাছে ইভিএমের পরিচিতি তুলে ধরতে ঢাকা ও দেশের আট অঞ্চলে ইভিএম মেলার আয়োজন করছে ইসি। ইভিএম ব্যবহার করতে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন বিল জাতীয় সংসদের চলতি অধিবেশনে উপস্থাপন ও পাস করা হবে বলে আশা করছে নির্বাচন কমিশন। আর শেষ মুহূর্তে যদি সংসদে এ আইন পাস না হয়, তবে এটি অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে কার্যকর করা হবে বলে প্রত্যাশা করছে কমিশন।

এদিকে আগামী ১ নভেম্বর বিকালে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে বঙ্গভবনে সাক্ষাৎ করবে নির্বাচন কমিশন। পরে ৪ নভেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার চিন্তাভাবনা রয়েছে তাদের। কোনো কারণে তা না হলে ৮ নভেম্বরের মধ্যে সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে বলে মনে করেন ইসির কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, ১ নভেম্বর বিকাল ৪টায় রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে পরের সভায় তফসিল চূড়ান্ত করবে কমিশন। ৪ নভেম্বর কমিশন সভা অনুষ্ঠানের প্রাথমিক চিন্তা চলছে। তবে সবকিছু নির্ভর করছে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনার ওপর। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা জাতির উদ্দেশে ভাষণের মধ্য দিয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক তফসিল ঘোষণা করবেন। এজন্য বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারকে তার ভাষণ রেকর্ড ও প্রচারের জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

ভোটের তারিখের বিষয়ে ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, প্রথা অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেই কমিশন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে। জানা গেছে, ভোট অনুষ্ঠনের সম্ভাব্য কয়েকটি তারিখও রাষ্ট্রপতির কাছে উপস্থাপন করা হাতে পারে। এ ক্ষেত্রে একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণের জন্য ১৮ বা ২০ ডিসেম্বর, ২৩ বা ২৪ ডিসেম্বর ও ২৭ ডিসেম্বর বা ৩০/৩১ ডিসেম্বর প্রাথমিক তারিখ চিন্তা করা হচ্ছে। আর ২০ ডিসেম্বরের মধ্যে ভোট হলে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাতের পরে ৪ বা ৮ নভেম্বরের মধ্যে তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে। তবে কমিশন ভোটের তারিখ হিসেবে ২০ ডিসেম্বরকেই বেশি উপযোগী মনে করছে।

ইভিএম ব্যবহারের আশা ইসির : বিদ্যমান পরিস্থিতিতে আরপিও সংশোধন নিয়ে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, আরপিও সংশোধন করার জন্য আইন মন্ত্রণালয় থেকে ভেটিং সম্পন্ন হয়ে তা এখন মন্ত্রিপরিষদে আছে। আশা করছি সংসদের চলতি অধিবেশেনে তা উপস্থাপন ও পাস করা হবে। আইনি ভিত্তি পেলে কিছু কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহারের প্রস্তুতিও রয়েছে কমিশনের। এক প্রশ্নের উত্তরে সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, সংসদে যদি আরপিও সংশোধনী উপস্থাপন বা পাস করা না হয়, তবে এটি পরবর্তীতে সংসদের অবর্তমানে অধ্যাদেশ জারি করে কার্যকর করা যেতে পারে। পরবর্তী সংসদের প্রথম অধিবেশনে এটা আইনে পরিণত হতে পারে। উল্লেখ্য, দেড় মাস আগে এ-সংক্রান্ত প্রস্তাব আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এখনো তা মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন হয়নি। মন্ত্রিসভার অনুমোদনসাপেক্ষে বিল আকারে সংসদে উপস্থাপন করতে হবে। সংসদীয় স্থায়ী কমিটির যাচাই-বাছাই শেষে বিলটি পাসের জন্য উত্থাপন করতে হবে।

অধিবেশন না থাকলে রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশ আকারে বিলটি জারি করতে পারেন। নিজের আকাঙ্ক্ষার কথা তুলে ধরে সচিব বলেন, তবে আমরা এখনো আশা করছি এটি চলতি সংসদ অধিবেশনে উপস্থাপন করা হবে। যেহেতু অধিবেশন ২৯ তারিখ পর্যন্ত চলবে, সেখানেই এটি পাস হওয়ার সম্ভাবনা আছে। সচিব জানান, ইভিএমে খুব সহজেই ভোট প্রদান করা যায়। স্মার্টকার্ড না থাকলেও এনআইডি কার্ডের নম্বর দেওয়ার পর আঙ্গুলের ছাপ দিলেই ভোট দেওয়া যাবে। তিনি জানান, ইভিএমের প্রচার এবং জনপ্রিয়তা বাড়ানোর জন্য ২৭ অক্টোবর দেশের আটটি অঞ্চলে ইভিএম প্রদর্শনী মেলা করা হবে। সেখানে সিইসি, নির্বাচন কমিশনাররা এবং ইসির কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।

টার্গেট ডিসেম্বর— ইসি সচিব : নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, আমরা চাচ্ছি ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন শেষ করতে। এটাই আমাদের টার্গেট। গতকাল আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে এ কথা জানান তিনি। মধ্য ডিসেম্বরে ভোট কিনা— জানতে চাইলে সচিব বলেন, এটা আমরা এখন বলতে পারি না; আগাম বলা ঠিকও হবে না। সংবিধান অনুযায়ী ৩০ অক্টোবর থেকে ২৮ জানুয়ারির মধ্যে একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে ডিসেম্বরের মধ্যে ভোট করার প্রস্তুতির মধ্যে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে তফসিলের ঘোষণার কথাও ইতিমধ্যে জানান ইসি সচিব।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর