শুক্রবার, ২৬ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা
ফখরুলের সঙ্গে ১২ নেতার বৈঠক

সংস্কারপন্থিদের কাছে টানল বিএনপি

নিজস্ব প্রতিবেদক

দলের বাইরে থাকা ‘কথিত সংস্কারপন্থি’ সাবেক মন্ত্রী-এমপি ও নেতাদের কাছে টানল বিএনপি। দীর্ঘ এক যুগ পর তাদের দলে সক্রিয় হওয়ার নির্দেশ দিয়েছে বিএনপি। গতকাল বিকালে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে ১২ সংস্কারপন্থি নেতার সঙ্গে ঘণ্টাব্যাপী রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ওই বৈঠকেই বিএনপি চেয়ারপারসন ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে এই নির্দেশনা দেওয়া হয় বলে দলীয় সূত্রের দাবি। শিগগিরই দলের বাইরে থাকা নেতাদের দলে সক্রিয় করার উদ্যোগও নেওয়া হবে বলে বৈঠকে জানানো হয়। তবে বৈঠকে আগামী নির্বাচনে সংস্কারপন্থিদের প্রার্থিতা করা নিয়ে কোনো কথা হয়নি বলে জানা গেছে। ২০০৭ সালের সেনা সমর্থিত ওয়ান-ইলেভেন সরকারের সময় দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে ‘মাইনাস’ করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার অভিযোগ ছিল কিছু নেতার বিরুদ্ধে। এ অভিযোগে দীর্ঘ এক যুগ তারা দলের বাইরে ছিলেন। তবে দুই-চারজন ছাড়া তাদের কেউই নতুন কোনো দলেও যুক্ত হননি। এরই মধ্যে নানা প্রতিকূল পরিস্থিতিতে পড়ে বিএনপি। দলের প্রধান বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে। তিনি কারাগারে যাওয়ার আগে দল-মত নির্বিশেষে সবাইকে নিয়ে একটি ঐক্যবদ্ধ প্লাটফর্ম তৈরি করতে সবাইকে আহ্বান জানান। এরপর বিএনপি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টও গঠন করে। এরই অংশ হিসেবে গতকাল আনুষ্ঠানিকভাবে ১২ সংস্কারপন্থি  নেতাকে চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে ডেকে পাঠান মির্জা ফখরুল। এ সময় তিনি ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার নির্দেশ দেন। তবে দলের বৃহৎ স্বার্থে হাইকমান্ড সংস্কাপন্থিদের কাছে নেওয়ার উদ্যোগ নিলেও ক্ষুব্ধ তৃণমূল নেতা-কর্মীদের একটি অংশ। গতকাল বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বেগম খালেদা জিয়া দলকে সময়োপযোগী ও ঐক্যবদ্ধ করে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদী ধারার ঐক্য নিশ্চিত করে জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় বিএনপিসহ সব গণতন্ত্রকামী দল ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত হয়েছে ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’। এই প্রেক্ষাপটে বিএনপি দলের সব পর্যায়ের  নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে সক্রিয় করার উদ্যোগ নিয়েছে। দলের স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত ও ভারপ্রাপ্ত  চেয়ারম্যানের নির্দেশে গতকাল গুলশান কার্যালয়ে বেশ কয়েকজন সাবেক সংসদ সদস্যের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। জানা যায়, বৈঠকে চলমান জাতীয় সংকট, খালেদা জিয়ার মুক্তি, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারসহ সব নির্যাতিত নেতা-কর্মীর মুক্তি ও মামলা প্রত্যাহার নিয়ে আলোচনা হয়। এ ছাড়া জনগণের ভোটাধিকার আদায়ের লক্ষ্যে বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়। দলের পক্ষ থেকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সবাইকে সক্রিয় হয়ে দলকে শক্তিশালী করতে সব কর্মসূচি বাস্তবায়ন করার আহ্বান জানান। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সাবেক মন্ত্রী আলমগীর কবির, সাবেক হুইপ আবু ইউসুফ মো. খলিলুর রহমান, আবু হেনা, জিএম সিরাজ, সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুল, নজির হোসেন, ডা. জিয়াউল হক, আতাউর রহমান আঙ্গুর, ইলেন ভুট্টো, শফিকুল ইসলাম তালুকদার, শহিদুল আলম তালুকদার ও জহির উদ্দিন স্বপন। পর্যায়ক্রমে প্রয়োজন অনুযায়ী  নেতাদের সঙ্গে এ ধরনের বৈঠক অব্যাহত থাকবে।  বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, সংস্কারপন্থি ১২ নেতাকে দলের কাজে সক্রিয় হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে তাদের এখনই দলের কোনো পদ দেওয়া হবে না বলেও জানানো হয়েছে। আগামী সপ্তাহে আরও একটি বৈঠক হবে। বৈঠকে অংশ নেওয়া এক নেতা জানান, দলের সাবেক দফতর সম্পাদক মফিকুল হাসান তৃপ্তিসহ কয়েকজনের বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে। বৈঠক শেষে নতুন করে দলে যোগ দেওয়া সরদার সাখাওয়াত  হোসেন বকুল সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা দলে আছি, আগেও ছিলাম, ভবিষ্যতেও থাকব। আজ দল থেকে আরও সক্রিয়ভাবে কাজ করার নির্দেশ পেয়েছি। আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নির্দেশনা দিয়েছেন, সে বিষয়ে অবহিত হয়েছি। আমরা দলের নির্দেশনা অনুযায়ী একযোগে কাজ করব।’ আরেক নেতা শহিদুল আলম তালুকদার বলেন, ‘একটি ঘরের মধ্যে বিভিন্ন রকমের সমস্যা থাকতেই পারে। এখন সবাই এক হয়ে কাজ করব। অনেক সময় অন্য কেউ দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার কারণে নিষ্ক্রিয় ছিলাম, এখন দলের জন্য কাজ করব। আগামী নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়া বা সংসদ সদস্য হওয়া মূল বিষয় নয়, দলকে টিকিয়ে রাখাই আমাদের লক্ষ্য।’

সর্বশেষ খবর