রবিবার, ২৮ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

খালেদার রায় ঘিরে আজ দৃষ্টি থাকবে উচ্চ আদালতে

আরাফাত মুন্না

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় রায় ঘোষণার জন্য দিন ধার্য রয়েছে আগামীকাল সোমবার। ১৬ অক্টোবর মামলার বিচারকাজ শেষ করে রায় ঘোষণার জন্য এই দিন ঠিক করেন ঢাকার পাঁচ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান। তবে এ মামলায় প্রধান আসামির অনুপস্থিতিতে নিম্ন আদালতে বিচারকাজ চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত প্রশ্নে খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের এক আবেদন শুনানির জন্য আজ আপিল বিভাগে দিন ধার্য রয়েছে। আইনজীবীরা জানান, আজ আপিল বিভাগ যদি নিম্ন আদালতের ওই সিদ্ধান্ত (আসামির অনুপস্থিতিতে বিচার) বাতিল বা স্থগিত করে, তাহলে কাল রায় হবে না। আর যদি খালেদা জিয়ার আবেদন খারিজ হয়ে যায় তবে রায় ঘোষণা করতে বিচারিক আদালতের কোনো বাধা থাকবে না। তাই এসব বিষয় জানতে আজ সবার দৃষ্টি থাকবে উচ্চ আদালতের দিকেই। উল্লেখ্য, নিম্ন আদালতের ওই সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা হাই কোর্টে আবেদন করলেও তা খারিজ হয়ে যায়। পরে হাই কোর্টের ওই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করেন খালেদা জিয়া। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা দায়েরের আট বছর দুই মাস ২১ দিন পর আলোচিত এ মামলাটি রায়ের পর্যায়ে এসেছে। আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য মামলাটিতে ৪৬ কার্যদিবস ব্যয় হলেও সেই যুক্তি গ্রহণ ছাড়াই বিচার শেষ করেছেন বিচারক।

এ মামলার বিচারের শেষ পর্যায়ে এসে কার্যক্রম চলছে রাজধানীর নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের ভিতরে বসানো জজ আদালতের অস্থায়ী এজলাসে। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের সাজা মাথায় নিয়ে এ কারাগারেই আরেকটি ভবনে ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে বন্দী ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। কিছুদিন আগে সেখান থেকে চিকিৎসার জন্য তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে নেওয়া হয়। একটি দুর্নীতি মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত হওয়ার সাড়ে আট মাসের মাথায় খালেদার বিরুদ্ধে দ্বিতীয় দুর্নীতি মামলার রায় হতে যাচ্ছে। এ মামলায় দোষী প্রমাণিত হলে তার সর্বোচ্চ সাত বছরের সাজা হতে পারে বলে বাদী দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কৌঁসুলি মোশাররফ হোসেন কাজল জানিয়েছেন। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে পেরেছি। তাই তাদের সর্বোচ্চ সাজাই হবে।’

রায়ের দিন পরিবর্তন হতে পারে কি না— এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আদালতের রায় ঘোষণার দিন ধার্যের বিষয়টি আইনানুগ ও যথার্থ হয়েছে। এখন পর্যন্ত ২৯ অক্টোবরই মামলার রায় ঘোষণার দিন ঠিক রয়েছে। তবে উচ্চ আদালত থেকে যদি কোনো নির্দেশনা আসে সে ক্ষেত্রে রায়ের ধার্য তারিখে রায় নাও হতে পারে। সবকিছুই নির্ভর করছে রবিবার (আজ) আপিল বিভাগ থেকে কী রায় আসে তার ওপর। এ বিষয়ে খালেদা জিয়ার আইনজীবী এ কে এম এহসানুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিচারিক আদালত বেআইনিভাবে আসামির অনুপস্থিতিতে বিচার চালিয়ে যওয়ার আদেশ দিয়েছে। সেই আদেশের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়া হাই কোর্টে আবেদন করলেও তিনি সেখানে ন্যায়বিচার পাননি। তিনি বলেন, ‘হাই কোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করা হয়েছে। আমরা আশা করছি বিএনপি চেয়ারপারসন আপিল বিভাগে ন্যায়বিচার পাবেন।’ আপিল বিভাগে খালেদা জিয়ার আবেদন মঞ্জুর হলে সোমবার রায় হবে না বলেও জানান সুপ্রিম কোর্টের এই আইনজীবী।

মামলা পরিক্রমা : আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২০১০ সালের ৮ আগস্ট দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক হারুনুর রশিদ সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা করেন। তেজগাঁও থানার এ মামলায় ক্ষমতার অপব্যবহার করে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে আসা ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ আনা হয় আসামিদের বিরুদ্ধে। তদন্ত কর্মকর্তা হারুনুর রশিদ ২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি আসামি চারজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন। পরের বছর ১৯ মার্চ অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে আসামিদের বিচার শুরু হয়।

রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে ২০১৭ সালের ১ ডিসেম্বর আদালতে উপস্থিত হয়ে আত্মপক্ষ সমর্থনে নিজের বক্তব্য উপস্থাপন শুরু করেন খালেদা জিয়া। সেখানে নিজেকে সম্পূর্ণ নির্দোষ দাবি করে তিনি আদালতের কাছে সুবিচার চান। তার আবেদনে কয়েক দফা এ মামলার বিচারক বদলে দেয় হাই কোর্ট। খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা নানাভাবে সময় ক্ষেপণ করে বিচার বিলম্বিত করছেন বলে অভিযোগ করেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা।

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার কার্যক্রম গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বকশীবাজারে ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ আদালতের অস্থায়ী এজলাসে অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার সঙ্গেই চলছিল। ৮ ফেব্রুয়ারি একই বিচারক অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায়ে খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিলে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। এর পরের সাত মাসে কারা কর্তৃপক্ষ খালেদাকে আদালতে উপস্থিত করতে না পারায় জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার যুক্তিতর্ক শুনানি দফায় দফায় পেছানো হয়। প্রতিবারই আদালতকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতার কথা বলা হয়।

এ পরিস্থিতিতে ৪ সেপ্টেম্বর নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে কারাগারের ভিতরেই আদালত বসিয়ে এ মামলার শুনানি শেষ করার ব্যবস্থা করে সরকার। পরদিন ওই অস্থায়ী এজলাসে হাজির করা হলে খালেদা জিয়া বলেন, তিনি বার বার আদালতে আসতে পারবেন না, বিচারক তাকে যত দিন খুশি সাজা দিতে পারেন। এরপর শুনানির দুটি নির্ধারিত দিনে কারা কর্তৃপক্ষ খালেদাকে আদালত কক্ষে আনতে ব্যর্থ হলে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে তার অনুপস্থিতিতেই বিচার চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত দেন বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান। খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা ওই আদেশের বিরুদ্ধে হাই কোর্টে গেলেও তাদের আবেদন ১৫ অক্টোবর খারিজ হয়ে যায়। এদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা যুক্তিতর্কের শুনানিতে অংশ না নিয়ে খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে পাঠানোসহ বিভিন্ন আবেদন নিয়ে শুনানি করতে থাকায় দুদকের আইনজীবী কাজল যুক্তিতর্ক ছাড়াই রায়ের তারিখ নির্ধারণের আবেদন করেন। সেই আবেদনে সাড়া দিয়ে ১৬ অক্টোবর বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান রায়ের জন্য ২৯ অক্টোবর দিন ঠিক করে দেন। আসামিদের মধ্যে খালেদা জিয়া এ মামলায় জামিনে থাকলেও অন্য মামলায় গ্রেফতার থাকায় তার মুক্তি মেলেনি। বর্তমানে তিনি কারা তত্ত্বাবধানে বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে চিকিৎসাধীন। এ মামলার আরেক আসামি খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থার সময় থেকে পলাতক। তিনি দেশের বাইরে আছেন বলে ধারণা করা হয়। অন্য দুই আসামি জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও মনিরুল ইসলাম খান দীর্ঘদিন জামিনে থাকার পর সেপ্টেম্বরে তাদের জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠান বিচারক।

সর্বশেষ খবর