বৃহস্পতিবার, ১ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

সুপ্রিম কোর্টে হাতাহাতি বিক্ষোভ বর্জন তালা

নিজস্ব প্রতিবেদক

সুপ্রিম কোর্টে হাতাহাতি বিক্ষোভ বর্জন তালা

সুপ্রিম কোর্টে গতকাল দুই পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে —বাংলাদেশ প্রতিদিন

সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে গতকাল বিএনপিপন্থি ও আওয়ামী লীগপন্থি আইনজীবীরা পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালন করেছেন। কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সাজা বৃদ্ধি করে হাই কোর্টের দেওয়া রায়ের প্রতিবাদে বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের আদালত বর্জন কর্মসূচির মধ্যে আওয়ামী সমর্থকদের সঙ্গে হতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। গতকাল সকাল থেকে দেশের সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে বিএনপি সমর্থক আইনজীবীদের এ কর্মবিরতি আর বিক্ষোভের মধ্যেই সুপ্রিম কোর্টের বিচারিক কার্যক্রমও চলেছে। চলেছে আপিল বিভগের কার্যক্রম। প্রতিদিনকার মতো কালও প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন সাত বিচারকের আপিল বেঞ্চ সকাল ৯টায় আদালতের নিয়মিত কার্যক্রম শুরু করেন। অ্যাটর্নি জেনারেলসহ মামলা-সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা সে সময় উপস্থিত ছিলেন। আপিল বিভাগের কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির দোতলায় সভাপতির কক্ষের সামনে গ্যাংওয়ের গেটে (সুপ্রিম কোর্টের মূল ভবনে যাওয়ার সংযোগপথ) তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা। ফলে অন্য আইনজীবীদের নিচতলার সিঁড়ি দিয়ে আপিল বিভাগে যাতায়াত করতে হয়। বিক্ষোভ চলাকালে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান জয়নুল আবেদীন দাবি করেন, সাধারণ আইনজীবীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে আদালত বর্জন কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছেন। তারাই গেটে তালা দিয়েছেন। তিনি বলেন, বন্দুকের মুখে রেখে রায় দেওয়ানো হয়েছে। সরকারের চাপে মাথা নত করে খালেদা জিয়ার সাজা বাড়ানোর রায় দেওয়া হয়েছে। সরকার বিচারিক আদালতকে করায়ত্ত করেছে, উচ্চ আদালতকেও করায়ত্ত করার চেষ্টা করছে। বিচার বিভাগের ওপর হস্তক্ষেপ বন্ধ না হলে সারা দেশেই আদালত বর্জনের ঘোষণা দেওয়া হবে।

জয়নুল বলেন, মঙ্গলবার রায় ঘোষণা করার সময় ওই আদালতের ডিএজি, এএজি ও সরকার সমর্থক আইনজীবী ছাড়া কোনো সাধারণ আইনজীবীকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আদালতটি ঘিরে রেখেছিল। এতে এটাই প্রমাণ করে, চাপে মাথা নত করে এ রায় দেওয়া হয়েছে। তাদের এ বিক্ষোভ চলাকালে বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ইউসুফ হোসেন হুমায়ুনের নেতৃত্বে আওয়ামীপন্থি আইনজীবীরা বেলা সাড়ে ১০টার দিকে বারের সভাপতির কক্ষের সামনে যান গেটের তালা ভাঙার জন্য। এ সময় সেখানে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়; দুই পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন সাংবাদিকদের বলেন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিকে রাজনৈতিক মঞ্চ বানিয়ে ফেলা হয়েছে। রায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হলে আইনিভাবেই করতে হবে। আদালত বর্জনের সিদ্ধান্ত আইনজীবী সমিতির সিদ্ধান্ত নয়। আদালত বর্জন করলে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা করতে পারেন। গেটে তালা দিয়ে সাধারণ আইনজীবীদের তারা বাধ্য করতে পারেন না। এ তালা ভাঙতে হবে। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের নামে আসা দুই কোটি ১০ লাখ টাকা আত্মসাতের মামলায় বিচারিক আদালত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিল। তিন আসামির আপিল এবং দুদকের একটি রিভিশন আবেদনের শুনানি শেষে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাই কোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার খালেদা জিয়ার সাজা বাড়িয়ে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেয়। ওই রায়ের পর সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ব্যানারে সংবাদ সম্মেলন করে গতকাল সকাল ৯টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত সর্বোচ্চ আদালতের দুই বিভাগে (হাই কোর্ট ও আপিল) কর্মবিরতি পালনের ঘোষণা দেন বিএনপি-সমর্থক আইনজীবীরা। তাদের আদালত বর্জনের এ কর্মসূচিতে জাতীয় আইনজীবী ঐক্যফ্রন্টও সমর্থন জানায়। উল্লেখ্য, সুপ্রিম কোর্ট বারের ১৪ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির সভাপতি-সম্পাদকসহ ১২ পদেই রয়েছেন বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা।

 

সর্বশেষ খবর