বৃহস্পতিবার, ১ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

খালেদা-তারেক নন বিএনপির নেতৃত্বে

সংশোধিত গঠনতন্ত্র গ্রহণ না করতে নির্দেশ হাই কোর্টের

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিএনপির গঠনতন্ত্রের ‘কমিটির সদস্যপদের অযোগ্যতা’ শীর্ষক ৭ ধারার সংশোধিত অংশ গ্রহণ না করার জন্য নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট। একইসঙ্গে ওই বিধান সংশোধন বাদ দেওয়া কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুলও জারি করেছে আদালত। গতকাল গঠনতন্ত্র সংশোধনের ওই সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে মোজাম্মেল হোসেনের করা এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেয়। নয় মাস আগে আনা ওই সংশোধনী চ্যালেঞ্জ করে মোজাম্মেল হোসেন নামে এক ব্যক্তি নির্বাচন কমিশনে একটি আবেদন করেছিলেন। ওই আবেদন এক মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে বলেছে হাই কোর্ট। আর ওই আবেদন নিষ্পত্তি হওয়ার আগ পর্যন্ত বিএনপির সংশোধিত গঠনতন্ত্র গ্রহণ না করতে নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে স্থানীয় সরকার সচিব, প্রধান নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশন সচিব, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও মহাসচিবকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। হাই কোর্টের অন্তর্বর্তীকালীন ওই আদেশের ফলে বিএনপির গঠনতন্ত্রের ওই সংশোধনী আপাতত কার্যকর থাকছে না। তাতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দলীয় নেতৃত্বে রাখা এবং নির্বাচনে তাদের দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার সুযোগও আটকে যাচ্ছে বলেই মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। আদালতে রিটকারীর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মমতাজ উদ্দিন মেহেদী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল কে এম মাসুদ রুমি। আদেশের পর মাসুদ রুমি সাংবাদিকদের বলেন, মোজাম্মেল হোসেন বলেছেন, তিনি একজন বিএনপি কর্মী। তিনি ইসিতে একটি আবেদন দিয়েছেন যাতে বিএনপির সংশোধিত গঠনতন্ত্র গ্রহণ করা না হয়। রুমি বলেন, মোজাম্মেল জানিয়েছেন এ গঠনতন্ত্র গ্রহণ করা হলে বিএনপিতে দুর্নীতিবাজ ও অযোগ্য ব্যক্তিরা নেতা হওয়ার সুযোগ পাবেন। আদালত তার বক্তব্যে সন্তুষ্ট হয়ে রুল ও আদেশ দিয়েছে। দুর্নীতির দায়ে দণ্ডিত ব্যক্তিদের দলীয় কমিটিতে না রাখার যে বিধান বিএনপির গঠনতন্ত্রে ছিল, সংশোধনীতে তা বাদ দেওয়া কেন বেআইনি হবে না এবং সংবিধানের ৬৬ (২) ঘ অনুচ্ছেদের পরিপন্থী হবে না— রুলে তা জানতে চেয়েছে আদালত। খালেদা জিয়া ও তাঁর ছেলে তারেক রহমান দুর্নীতির দুই মামলায় ১০ বছর ও সাত বছর সাজাপ্রাপ্ত। খালেদা জিয়া বন্দী থাকলেও তারেক রহমান পলাতক। দুর্নীতির দুই মামলার সঙ্গে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায়ও তারেক রহমানের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী, কোনো রাজনৈতিক দল নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত হওয়ার সময় দলীয় গঠনতন্ত্র জমা দিতে হয়। আর সংশোধন করা হলে তা নির্বাচন কমিশনকে জানাতে হয়। কোনো দলের গঠনতন্ত্র সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হলো কিনা, তা দেখা ইসির দায়িত্ব।

আমি বিস্মিত ও হতবাক : বিএনপির নেতৃত্বে ‘দুর্নীতিপরায়ণ ও কুখ্যাত’ ব্যক্তিদের রাখতে দলের গঠনতন্ত্র সংশোধন করায় ‘বিস্মিত ও হতবাক’ হয়েছেন বিএনপির কর্মী মোজাম্মেল হোসেন। এজন্য তিনি প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবর একটি চিঠিও লিখেছেন। চিঠিতে ‘বিএনপির সংশোধিত গঠনতন্ত্র অনুমোদন না করার’ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধ করেন তিনি। বিএনপির গঠনতন্ত্রে আনা সংশোধনীর বিষয়ে হাই কোর্টে রিটকারী এই মোজাম্মেল হোসেন নিজেকে বিএনপির কর্মী দাবি করে ৩০ অক্টোবর নির্বাচন কমিশনে গিয়ে ‘ডেসপাসে’ প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবর ওই চিঠি জমা দেন। মোজাম্মেল হোসেন চিঠিতে বলেছেন, ‘বাংলাদেশ জাতীয়বতাবাদী দল (বিএনপি)-এর নীতি ও আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে আমি বিএনপিতে যোগদান করি। বিএনপির গঠনতন্ত্রের ৭ ধারায় সমাজের দুর্নীতিপরায়ণ ও কুখ্যাত বলে পরিচিত কোনো ব্যক্তি বিএনপির জাতীয়, কেন্দ্রীয়, নির্বাহী, স্থায়ী কমিটি বা যে কোনো পর্যায়ের কমিটিতে বা কমিটির সদস্যপদে কিংবা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের প্রার্থী বলে বিবেচিত হবে না মর্মে উল্লেখ ছিল। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হওয়ার আশঙ্কায় বিএনপির গঠনতন্ত্রের ৭ ধারা সংশোধিত আকারে উপস্থাপন করে নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়।

 এ পরিবর্তনে জাতীয়তাবাদী আদর্শে উজ্জীবিত কর্মী হিসেবে আমি বিস্মিত ও হতবাক।’

উল্লেখ্য, জানুয়ারিতে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতি মামলায় রায়ের দিন ঠিক হওয়ার পর বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক হয়। এরপর ২৮ জানুয়ারি স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানসহ একটি প্রতিনিধি দল ইসিতে গিয়ে সিইসির সঙ্গে বৈঠক করে সংশোধিত গঠনতন্ত্র জমা দেন।

নয় মাস আগে আনা ওই সংশোধনী চ্যালেঞ্জ করে মোজাম্মেল হোসেন নির্বাচন কমিশনে একটি আবেদন করেছিলেন। ওই আবেদন এক মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে বলেছে হাই কোর্ট। আর ওই আবেদন নিষ্পত্তি হওয়ার আগ পর্যন্ত বিএনপির সংশোধিত গঠনতন্ত্র গ্রহণ না করতে নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, ‘আমরা এখনো এ-সংক্রান্ত আদেশ পাইনি। আমরা জেনে পরবর্তী করণীয় দেখব।’ ইসি কর্মকর্তারা জানান, আদালতের আদেশের পর এ-সংক্রান্ত আবেদনের ফাইলটি কমিশন থেকে চাওয়া হয়েছে। খুব দ্রুত এ নিয়ে পর্যালোচনায় বসা হবে।

সর্বশেষ খবর