শুক্রবার, ২ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা
গণভবনে সাড়ে ৩ ঘণ্টা দুই পক্ষ

নতুন হিসাব-নিকাশ আলাপে সংলাপে

ঐক্যফ্রন্টের দাবি নির্বাচন পেছানো ও পরিবেশ তৈরিতে সাত দফা বাস্তবায়নের, জবাবে সাংবিধানিক বিধিবিধানের কথা ১৪ দলের সবাই মিলে দেশ গড়তে হবে : শেখ হাসিনা, আলোচনা ভালো হয়েছে : ড. কামাল, অব্যাহত থাকবে : কাদের, সন্তুষ্ট নই : ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক

নতুন হিসাব-নিকাশ আলাপে সংলাপে

সংলাপে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৪ দলের প্রতিনিধিরা (বামে)। ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ঐক্যফ্রন্টের নেতারা (ডানে) —বাংলাদেশ প্রতিদিন

অবশেষে খুলল সংলাপের বন্ধ দুয়ার। শুরু হলো বহুল প্রতীক্ষিত সংলাপ। বিপরীত মেরুতে অবস্থান নেওয়া প্রধান দুই জোটের শীর্ষ ৪৩ নেতা এক টেবিলে। গণভবনে এক অন্যরকম পরিবেশ। হাস্যোজ্জ্বল সালাম ও কুশল বিনিময়। সন্ধ্যা ৭টার দিকে শুরু হয় বহুল কাঙ্ক্ষিত সংলাপ। শেষ হয় রাত সাড়ে ১০টার দিকে। প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টাব্যাপী এ সংলাপে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোটের নেতৃত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অন্যদিকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতৃত্ব দেন গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন। দুই জোটের মিলনমেলা বসে গণভবনে।

সংলাপে স্বাগত বক্তব্যে শেখ হাসিনা ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমি এটার বিচার আপনাদের ওপরই ছেড়ে দেব। (আমাদের ক্ষমতা গ্রহণের পর) নয় বছর ১০ মাস হতে চলল আমরা সরকারে, এই সময়ের মধ্যে দেশের কতটুকু উন্নয়ন করতে পেরেছি, তা নিশ্চয়ই আপনারা বিবেচনা করে দেখবেন। তবে এটুকু বলতে পারি, বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ ভালো আছে, তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটেছে। দিন বদলের যে সূচনা আমরা করেছিলাম, দিন বদল হচ্ছে এটাকে আরও সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।’ সংলাপ শেষে বেরিয়ে এসে ড. কামাল হোসেন গণভবনের সামনে সাংবাদিকদের বলেন, ‘ভালো আলোচনা হয়েছে।’ আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে বলে কি আপনি মনে করেন— জবাবে তিনি বলেন, ‘ফলপ্রসূ হবে।’ তবে ঐক্যফ্রন্টের সবচেয়ে বড় দল বিএনপির মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর গাড়িতে ওঠার সময় বলেন ভিন্ন কথা। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা (আলোচনায়) সন্তুষ্ট নই।’ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে আরও আলোচনা হতে পারে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘সেটা ৮ নভেম্বরের পর জানা যাবে। খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মনোযোগ দিয়ে সবার কথা শুনেছেন। একটুও অধৈর্য হননি। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) আধুনিক পদ্ধতি, আমরা একে সাপোর্ট করছি। তবে এবার ইভিএম হয়তো ইসি সীমিতভাবে ব্যবহার করবে। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাপারে সবাইকে আশ্বস্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।’ সংলাপে অংশ নেওয়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, কিছু দাবি মানলেও ক্ষমতাসীন দল সংলাপ নিয়ে কোনো কিছুই স্পষ্ট করেনি। বিশেষ করে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে ইতিবাচক কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। বরং সংবিধান ও আইনগত বিষয়টিই সামনে এনেছেন প্রধানমন্ত্রী। তবে হাল ছাড়ছেন না নেতারা। সংলাপে নির্বাচন ও তফসিল পেছানোর দাবি জানানো হয়। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা পৌঁছানোর পর ব্যাংকোয়েট হলে বসেন। সংলাপের নির্ধারিত সময় সন্ধ্যা ৭টায় সেখানে উপস্থিত হন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। তিনি শুরুতেই সবাইকে সালাম জানিয়ে একটি সূচনা বক্তব্য দেন। এরপর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ২০ নেতার সঙ্গে রুদ্ধদ্বার আলোচনা করেন শেখ হাসিনা। তাঁর সঙ্গে ছিলেন ক্ষমতাসীন জোটের ২২ নেতা। রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত এ সংলাপ চলে। সংলাপ শেষে প্রথমেই বেরিয়ে যান ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। এরপর একে একে অন্য নেতারা বেরিয়ে আসেন। গণভবনে রওনা হওয়ার আগে বিকাল সাড়ে ৪টায় কামাল হোসেনের বাড়িতে পৌঁছে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন ঐক্যফ্রন্টের নেতারা। এর পৌনে এক ঘণ্টা পর তারা রওনা হন। ড. কামালের বাড়িতে বৈঠকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর থাকলেও প্রতিনিধি দলে থাকা বিএনপির অন্য নেতারা ছিলেন না। তারা আলাদাভাবে গণভবনে পৌঁছান। এর আগে সংলাপে যোগ দিতে কামাল হোসেনের নেতৃত্বে বেইলি রোডে তার বাসা থেকে গতকাল সন্ধ্যা সোয়া ৫টার দিকে রওনা হয় ঐক্যফ্রন্টের প্রতিনিধি দলটি। কেউ কেউ পৃথকভাবে গণভবনে যান। সন্ধ্যা পৌনে ৭টার মধ্যেই গণভবনে পৌঁছান ঐক্যফ্রন্টের নেতারা। জাতীয় যুব দিবসের অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে সন্ধ্যা ৬টায় গণভবনে ফেরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সন্ধ্যা ৬টা ১২ মিনিটে প্রথমে গণভবনে প্রবেশ করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান। এরপর একে একে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা গণভবনে যেতে শুরু করেন। সব শেষে আসেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। তবে ২৩ সদস্যের নাম দিলেও সংলাপে দেখা যায়নি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে। ঐক্যফ্রন্টের নেতারা যখন প্রবেশ করেন, প্রায় একই সময়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলের নেতাদের গণভবনে প্রবেশ করতে দেখা যায়। অবশ্য আওয়ামী লীগের কোনো কোনো নেতা আগে থেকেই গণভবনে ছিলেন। গণভবনের সামনে বিএনপি নেতাদের স্বাগত জানান প্রধানমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব সাইফুজ্জামান শিখর। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা গণভবনে প্রবেশের কিছুক্ষণ পরই আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রবেশ করতে দেখা যায়। এ সময় আওয়ামী লীগ সভানেত্রীকে হাস্যোজ্জ্বল দেখাচ্ছিল। সংলাপ টেবিলে তার ডান পাশে ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। বাঁ পাশে ছিলেন উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু। বিপরীত দিকে বসেন গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন। তার বাঁ পাশে ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ডান পাশে দেখা যায় গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরীকে। সংলাপের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের স্বাগত জানান। এ সময় স্বাগত বক্তব্যে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, ‘দীর্ঘ ৯ বছর ১০ মাস হতে চলল আমরা সরকারে। এই সময়ের মধ্যে দেশে কত উন্নয়ন করতে পেরেছি সেটা নিশ্চয়ই আপনারা বিবেচনা করে দেখবেন। এটুকু বলতে পারি, বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ ভালো আছে। তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটছে। দিনবদলের যে সূচনা করেছিলাম, সেই দিনবদল হচ্ছে। এটাকে আরও সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমাদের মহান নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। আজকে সেই স্বাধীনতার সুফল যেন প্রতিটি মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছাতে পারে, সেটাই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করছি।’ বৈঠক সূত্র জানায়, সংলাপ শেষে বেরিয়ে যাওয়ার সময় গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনকে উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘নির্দলীয় সরকারের দাবি করছেন, নিরপেক্ষ সরকারের দাবি করছেন, আমাকে সরিয়ে কাকে বসাবেন?’ এর জবাবে ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘আপনাকে তো সরাতে চাই না, আপনি আগামীতে পাঁচ বছর থাকবেন, আমরাও থাকব।’ বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগের দুই যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও সম্পাদক পরিষদের আরেক সদস্য অফ রেকর্ডে আলোচনায় গণমাধ্যমকর্মীদের এ কথা বলেন। এ ছাড়া খোলামেলা আলোচনায় ড. কামাল হোসেন আরও ছোট পরিসরে আলোচনা করার দাবি জানিয়েছেন। জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আপনারা যখনই চাইবেন তখনই আলোচনা হবে।’ নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না বারবার করে জিজ্ঞেস করেছেন, ‘আমরা কী নিশ্চয়তা পেলাম? কী নিয়ে ফিরে যাব?’ একই সুরে কথা বলেন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ। খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে নির্বাচনে আনার দাবি করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘দলের চেয়ারপারসনকে মুক্ত করে নির্বাচনের সুযোগ দিতে হবে।’ জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘এটা তো আইনি প্রক্রিয়া। আমার কী করার আছে?’ তখন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ আরও কয়েকজন বিএনপি নেতা প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, ‘রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিলে অনেক কিছুই সম্ভব। আপনি চাইলেই এটা করা যায়।’ জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘না, আইন তার নিজস্ব গতিতে চলে।’ এ প্রসঙ্গে তিনি নিজের নামে ১৪টির বেশি মামলার কথা উল্লেখ করেন। দাবিগুলো নিয়েও আলোচনা করেন নেতারা। সেনাবাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতা দেওয়া প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশের ইতিহাসে একমাত্র ২০০১ সালের নির্বাচন ছাড়া কখনো এই ক্ষমতা সেনাবাহিনীকে দেওয়া হয়নি। আর এটা নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ার।’ এ ছাড়া আলোচনা সভায় নির্বাচনের আগে বিএনপি যাতে ঠিকমতো সভা-সমাবেশ করতে পারে সে বিষয়ে নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে। বিএনপি নেতারা ‘রাজবন্দী’দের নির্বাচনের আগে মুক্তি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আপনারা তালিকা দিন। আমি দেখব।’ জবাবে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনার কাছে দেব?’ প্রধানমন্ত্রী বললেন, ‘হ্যাঁ, আমাকে দিন।’ ঐক্যফ্রন্টের নেতারা ইভিএম ব্যবহার নিয়ে আপত্তি জাানালেও আওয়ামী লীগ নেতারা বলেছেন, ‘যুগের পরিবর্তন হয়েছে। পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা সীমিত আকারে ইভিএম ব্যবহার করতে চাই।’ সূত্রে আরও জানা যায়, বৈঠকে শুরুতেই ড. কামাল হোসেন সাত দফা দাবি তুলে ধরেন। এরপর একে একে সব নেতাই বক্তব্য দেন। প্রত্যেকেই তিন থেকে ছয় মিনিট করে বক্তব্য দেন। এরপর আওয়ামী লীগের নেতারাও বক্তব্য দেন। প্রধানমন্ত্রী কোনো কোনো বক্তব্য খণ্ডনও করেন। এ সময় যুক্তি-পাল্টা যুক্তি দেওয়া। বাইরে যা-ই হোক, ভিতরে হৃদ্যতাপূর্ণ সংলাপ অনুষ্ঠিত হয় বলে সূত্রে জানা যায়।

১৪ দলের নেতৃত্ব দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা : ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সংলাপে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোটের নেতৃত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার সঙ্গে ২৩ নেতার মধ্যে ছিলেন আওয়ামী লীগের ১৯ জন, জাসদের দুজন, সাম্যবাদী দলের একজন ও ওয়ার্কার্স পার্টির একজন। অন্য নেতারা হলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম, প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক, কাজী জাফর উল্লাহ, আবদুল মতিন খসরু, রমেশ চন্দ্র সেন, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ ও আইনবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করিম। অন্যদিকে জোট শরিকদের মধ্যে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি সমাজকল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, জাসদ সভাপতি তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, জাসদ একাংশের কার্যকরী সভাপতি মঈনউদ্দীন খান বাদল সংলাপে বসেন।

ড. কামালের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ২০ নেতা : প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংলাপে ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে নেতৃত্ব দেন গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন। তার সঙ্গে ছিলেন বিএনপির ছয় সদস্যের প্রতিনিধি। এরা হলেন—বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস ও ড. আবদুল মঈন খান। গণফোরাম থেকে মোস্তফা মহসীন মন্টু, মোকাব্বির খান, আ ও ম শফিকুল্লাহ, জগলুল হায়দার আফ্রিক, অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, ঐক্য প্রক্রিয়ার সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ ও মোস্তবা আমিন। জেএসডি থেকে আ স ম আবদুর রব, তানিয়া রব ও আবদুল মালেক রতন। নাগরিক ঐক্য থেকে মাহমুদুর রহমান মান্না এবং এস এম আকরাম। এ ছাড়া গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংলাপে অংশ নেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংলাপে অংশ নিতে প্রথমে ঐক্যফ্রন্ট থেকে ১৬ জন নেতার তালিকা পাঠায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। গতকাল এক বিবৃতিতে ঐক্যফ্রন্ট জানায়, ১৬ জনের নয়, গণভবনে যাচ্ছে ২১ জনের প্রতিনিধি দল। গতকাল ঐক্যফ্রন্ট নতুন করে পাঁচ সদস্যের নামের তালিকা আওয়ামী লীগের কাছে পাঠায়।

সংবাদ সম্মেলনে কাদের যা বললেন : রাতে বৈঠক থেকে বেরিয়ে এসে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে অত্যন্ত খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। ঐক্যফ্রন্টের নেতারা কিছু অভিযোগ করেছেন। এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আমাদেরও তো একটা বক্তব্য আছে। সেটাও খুব ভদ্রভাবে শালীনতার সঙ্গে বলা হয়েছে। এই আলোচনা অব্যাহত থাকবে। তারা যখন চাইবে তখনই আলোচনা হবে।’

জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট কি আলোচনায় সন্তুষ্ট?— এমন প্রশ্নে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ড. কামাল হোসেনকে যদি জিজ্ঞাসা করেন, তিনি বলবেন।’ কাদের বলেন, অনেকক্ষণ আলোচনা চলেছে। ৭টা থেকে সাড়ে ১০টা। সাড়ে তিন ঘণ্টা। অত্যন্ত খোলামেলা আলোচনা হয়েছে।’ তিনি বলেন, এখানে কিছু বিষয়ে আমরা একমত হয়েছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরিষ্কারভাবে বলে দিয়েছেন, সভা-সমাবেশ চলবে। মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকবে। তবে, রাস্তা বন্ধ করে কোনো সভা-সমাবেশ না করে একটা মাঠে হতে পারে।

ড. কামাল হোসেনের সংবাদ সম্মেলন : সভা-সমাবেশের অনুমতি ব্যতিরেকে সংলাপে কোনো সমাধান আসেনি বলে জানিয়েছেন ড. কামাল হোসেন। সংলাপ শেষে রাতে বেইলি রোডে নিজের বাসায় এক জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা সংলাপ নিয়ে এমন মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা গিয়েছিলাম আজকে গণভবনে। সেখানে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংলাপ ছিল। আমরা তিন ঘণ্টা সেখানে ছিলাম। নেতৃবৃন্দ সবার অভিযোগ ও বক্তব্য তুলে ধরেছেন। সবার কথা শোনার পরে প্রধানমন্ত্রী বেশ লম্বা বক্তৃতা দিলেন। তবে ওখানে কোনো বিশেষ সমাধান আমরা পাই নাই। শুধু একটা ব্যাপারে, সভা-সমাবেশের ব্যাপারে উনি যেটা বললেন একটা ভালো কথা বলেছেন। সুব্রত চৌধুরী সেটা বলবেন।’ খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে কি না বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘এ ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। তিনি (প্রধানমন্ত্রী) সুনির্দিষ্টভাবে কোনো কিছু বলেননি। তিনি বলেছেন যে, এই বিষয়গুলো নিয়ে ভবিষ্যতে আলোচনা হতে পারে।’

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র আ স ম আবদুর রব বলেন, ‘আমরা ৭ দফা কর্মসূচি দিয়েছি। মানা না মানার দায়িত্ব সরকারের। আমাদের কর্মসূচি আমরা দিয়েছি এ নিয়ে আমাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।’ আ স ম রব বলেন, ‘এক দিনে সব পাওয়া যায় না।’

সর্বশেষ খবর