শনিবার, ৩ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় ভোট দিন নৌকায়

ময়মনসিংহে বিশাল জনসভায় শেখ হাসিনা

সৈয়দ নোমান, ময়মনসিংহ

উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় ভোট দিন নৌকায়

ময়মনসিংহে গতকাল আওয়ামী লীগের বিশাল জনসভার একাংশ —বাংলাদেশ প্রতিদিন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় নৌকায় ভোট চেয়ে বলেছেন, দেশে দারিদ্র্যের হার ৪০ ভাগ থেকে কমিয়ে ২১ ভাগে নামিয়ে এনেছে বর্তমান সরকার। আগামীতে নৌকায় ভোট দিলে এ দারিদ্র্যের হার আরও পাঁচভাগ কমিয়ে আনা হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি এই ময়মনসিংহকে বিভাগ করে দিয়েছি। এই বিভাগের সার্বিক উন্নয়নের জন্য আজ উপহার হিসেবে ১০১টি উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন ও ৯৪টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে দিয়েছি। এখানেই থেমে থাকলে চলবে না, বিভাগ সুন্দরভাবে গড়তে হবে। গতকাল বিকালে ময়মনসিংহ নগরীর সার্কিট হাউস মাঠে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিশাল জনসভায় এ কথা বলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী। এর আগে বেলা ৩টা ৫০ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী জনসভার পাশেই সুইচ টিপে বিভাগের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।  জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট জহিরুল হক খোকার সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন, মহানগর সভাপতি এহতেশামুল আলম ও সাধারণ সম্পাদক মোহিত উর রহমান শান্তর সঞ্চালনায় জনসভায় আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, ধর্মমন্ত্রী আলহাজ অধ্যক্ষ মতিউর রহমান, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ড. আবদুুর রাজ্জাক, সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. দীপু মনি, আহম্মদ হোসেন, মিজবাহ উদ্দিন সিরাজ, পাট ও বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম, কেন্দ্রীয় নেতা অসীম কুমার উকিল, আবদুস সাত্তার, মারুফা আক্তার পপি, অ্যাডভোকেট মোসলেম উদ্দিন এমপি, শরিফ আহমেদ এমপি, নাজিম উদ্দিন আহমেদ এমপি, ফাহমী গোলন্দাজ বাবেল এমপি, জুয়েল আরেং এমপি, নেত্রকোনা জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আশরাফ আলী খসরু, জামালপুর জেলা সভাপতি বাকী বিল্লাহ, শেরপুর জেলা সভাপতি আতিকুর রহমান, কেন্দ্রীয় নেত্রী সাফিয়া ইসলাম, অপু উকিল, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ইউসুফ খান পাঠান, সিটি করপোরেশনের প্রশাসক ইকরামুল হক টিটু, স্বাচিপ মহাসচিব ডা. এম এ আজিজ, ঢাবি ছাত্রলীগ সভাপতি সঞ্জিব সরকার, জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি রকিবুল ইসলাম রকিব প্রমুখ নেতারা। টানা ১০ বছর ক্ষমতায় থাকার পর শেখ হাসিনার ময়মনসিংহে এটি ছিল দ্বিতীয় সফর। এর আগে ২০১৩ সালের ৩ জানুয়ারি ময়মনসিংহে এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সাড়ে পাঁচ বছরের বেশি সময় পর প্রধানমন্ত্রীর ময়মনসিংহে আগমন উপলক্ষে পুরো শহর ব্যানার, ফেস্টুন, তোরণ ও রঙিন আলোয় সাজানো হয়। শুধু ময়মনসিংহ নগরীই নয়, জেলার ১৩ উপজেলাতেই ছিল একই দৃশ্য। প্রধানমন্ত্রীকে বরণ করতে আয়োজনের কমতি ছিল না ময়মনসিংহবাসীর। জনসভায় অংশ নিতে ১৩টি উপজেলাসহ বিভাগের আরও তিন জেলা থেকে  আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ঐতিহাসিক এ মাঠে আসেন। ফলে সকাল থেকেই ময়মনসিংহ ছিল মিছিল আর স্লোগানের মুখরিত নগরী। প্রতিটি সড়ক ধরে এসেছেন দলীয় নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষ। সব মিছিল রাজনৈতিক সচেতন মানুষগুলোর গন্তব্য ছিল সার্কিট হাউস ময়দান। একপর্যায়ে এই ময়দানে সমবেত হন লাখো মানুষ। হেমন্তের মিষ্টি রোদে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা যখন বেলা ৩টা ৫৬ মিনিটে মঞ্চে ওঠেন তখন ময়দান ছাপিয়ে জনতা অবস্থান নিয়েছিল আশপাশের সড়কগুলোতে। আওয়ামী লীগের প্রাক-নির্বাচনী এ জনসভায় তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। মঞ্চে উঠে সবাইকে হাত নেড়ে সভানেত্রী যখন শুভেচ্ছা জানাচ্ছিলেন তখন স্লোগানে স্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে উঠেছিল গোটা এলাকা। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে কারও ওপর নির্যাতন করে না— উল্লেখ করে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ করে উন্নয়ন। মানুষের কল্যাণ করে আওয়ামী লীগ। আর বিএনপি-জামায়াতের কাজ ছিল নির্বাচন ঠেকানোর নামে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে পুড়িয়ে মানুষ মারা। তারা ৩ হাজার ৯০০ মানুষকে আগুন দিয়ে পুড়িয়েছে। হাজার হাজার যানবাহন পুড়িয়ে দিয়েছে। আমাদের যুবলীগ নেতার আঙ্গুল কেটে দিয়েছিল। গফরগাঁওয়ে বসতবাড়ি দখল করেছে। খুন, হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, মানি লন্ডারিং, বাংলা ভাই সৃষ্টি ছিল বিএনপি-জামায়াতের কাজ। তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোটের আমলে সরকার ছিল হাওয়া ভবনে। এই হাওয়া ভবনের উন্নয়নের কারণে দেশের কোনো উন্নয়ন হয়নি। তার বদলে হয়েছে অর্থ পাচার। শিক্ষা ক্ষেত্রের উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, লেখাপড়ার জন্য প্রাইমারি স্কুল থেকে উচ্চ শিক্ষা পর্যন্ত ২ কোটি ৪ লাখ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি এবং উপবৃত্তি দিয়ে যাচ্ছি। এর মধ্যে প্রাইমারি শিক্ষা ১ কোটি ৪০ লাখ মায়ের কাছে উপবৃত্তির টাকা সরাসরি আমরা পৌঁছে দিই মায়েদের হাসি ফোটার জন্য। প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্যও ভাতার ব্যবস্থা করেছি। ২০০৮ সালের ১৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন থেকে ২০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে রেকর্ড গড়েছি। দেশের ৯৩ ভাগ মানুষ এখন বিদ্যুৎ পাচ্ছেন। ১৯৫টি প্রকল্পের কাজ শুরু হলে মানুষের কর্মসংস্থান হবে। আমরা ২১০০ সালের জন্য ডেল্টা প্রকল্পের প্ল্যান তৈরি করে ফেলেছি। ‘আজকের বাংলাদেশ ডিজিটিল বাংলাদেশ’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিটি এলাকায় ব্রডব্যান্ড এবং ইন্টারনেট সার্ভিস আমরা চালু করেছি। মহাকাশে বঙ্গবন্ধু-১ উেক্ষপণ করে মহাকাশও জয় করেছি। বাংলাদেশ আজকে এগিয়ে যাচ্ছে। আজকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এই দেশকে আমরা গড়ে তুলতে চাই জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ হিসেবে। ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী আমরা উদযাপন করব। ২০২০ সালের মাঝ থেকে ২০২১ সাল মুজিব বর্ষ হিসেবে আমরা ঘোষণা দিয়েছি। এর মধ্যেই বাংলাদেশ হবে ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ। এখানেই থেমে থাকছি না। ২০২১ সালের পর ২০৪১ এর মধ্যে বাংলাদেশ হবে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে উন্নত দেশ। তিনি আরও বলেন, নদীমাতৃক দেশের জন্য ডেল্টা প্ল্যান ২০১০০ প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এ জন্য দরকার আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় থাকা। তাই আপনাদের কাছে আমার চাওয়া যেসব ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে, তা সঠিকভাবে গড়ে তোলার জন্য আগামীতেও নৌকায় ভোট দেওয়া। বক্তব্যের শেষে নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে কাব্যিক ছন্দে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রিক্ত আমি, নিঃস্ব আমি দেবার কিছু নাই, আছে শুধু ভালোবাসা, দিয়ে গেলাম তাই।’

সর্বশেষ খবর