রবিবার, ৪ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

কমিশনকে সহায়তা করতে হবে

ড. হারুন-অর-রশিদ

কমিশনকে সহায়তা করতে হবে

সবাই সংলাপকে ‘ওয়েলকাম’ করেন। কিন্তু সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর মধ্যে যদি চরম অনড় অবস্থান থাকে এবং যদি কোনো পক্ষ অবাস্তব অবস্থান গ্রহণ করে তাহলে সংলাপ সফল হবে না। মনে রাখতে হবে অনড় অবস্থান নিয়ে সংলাপ করা যায় না। সেখানে একটা পরিস্থিতি তৈরির জন্য  স্পেস রাখতে হবে। আর সেই উপলব্ধি থেকেই সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদ গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে এসব কথা বলেন। অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদ বলেন, জাতীয় নির্বাচন হতে আর মাত্র দুই মাস বাকি। এই সময়ের মধ্যে কতগুলো বিষয় আলাপ-আলোচনা করে কী ধরনের সমঝোতায় পৌঁছানো সম্ভব তা বিবেচনা করতে হবে। আবার এই স্বল্প সময়ের মধ্যে কোন বিষয়গুলো নিরসন করা সম্ভব নয়, তা নিয়েও স্পষ্ট ধারণা এবং উপলব্ধি থাকা দরকার। তিনি বলেন, গণতন্ত্র এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সংলাপ নতুন বিষয় নয়। রাজনৈতিক দলসমূহ, বিশেষ করে সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে প্রতিনিয়তই সংলাপ এবং আলোচনা চলবে। এটাই গণতন্ত্রের স্বাভাবিক নিয়ম। কিন্তু নানা কারণে আমাদের দেশে এই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। আসন্ন নির্বাচন সামনে রেখে সরকার এবং সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর জোট এবং বিরোধী জোটের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর আলোচনা শুরু হয়েছে। এটি নিঃসন্দেহে একটি ইতিবাচক দিক। যেখানে বহুদিন ধরে বিরোধী দল ও সরকার পক্ষের মধ্যে মুখ দেখাদেখি ছিল না, সেখানে এই দুটি পক্ষ যে একই টেবিলে বসে আলাপ-আলোচনা করছে তা গুরুত্ব বহন করে। কারণ ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ সব সময়ই অত্যন্ত গুরুত্ববাহী।

তিনি বলেন, সংলাপকে কেন্দ্র করে কোনো পক্ষের যদি আকাশচুম্বী প্রত্যাশা সৃষ্টি হয় আর শেষ পর্যন্ত সে প্রত্যাশা পূরণ না হয় তাহলে একইভাবে হতাশা দেখা দেবে এবং সংশ্লিষ্ট দলগুলোর মধ্যে যারা মনে করবেন যে, সংলাপের মাধ্যমে তারা কিছুই অর্জন করতে পারেননি তাদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হতে পারে। এর মধ্য দিয়ে নানা ধরনের সহিংস কর্মকাণ্ড ঘটতে পারে। কাজেই শুরু থেকে সংলাপের মাধ্যমে কতদূর অর্জন করা সম্ভব আর কোন বিষয়গুলো অর্জন করা সম্ভব নয় সে সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের এই অধ্যাপক বলেন, আমি যতদূর পর্যবেক্ষণ করেছি সেখানে দেখেছি যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সরকারি দল ও জোট বলে আসছে, যাই করা হবে এবং যে আলোচনা হবে তা সংবিধান মেনেই হবে। অর্থাৎ বর্তমান সংবিধানকে অক্ষুণ্ন রেখে এর মধ্য দিয়েই নির্বাচনে যেতে হবে। সরকার তার অবস্থান থেকে সরে আসবে এমনটি আশা করার সুযোগ এখন নেই। কারণ এই মৌলিক বিষয়গুলোতে যদি এখন হাত দেওয়া হয় তাহলে তার মাধ্যমে দেশে রাজনৈতিক সংঘাতময় পরিবেশ সৃষ্টির আশঙ্কা আছে। এখন যে অবস্থা আছে তার বিপরীতে একটি সংকটময় পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। এখানে বিরোধী দলগুলো যতই তর্ক করুক না কেন তাদের বুঝতে হবে কোন বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করা যায় আর কোনগুলো যায় না। আবার সংলাপে যেহেতু সব দল অংশ নিয়েছে এজন্য সরকারও যদি অনড় অবস্থানে থাকে তবে তা ঠিক হবে না। এজন্য সরকারকে সংবিধান অক্ষুণ্ন রেখে যে বিষয়গুলোকে সমন্বয় করা সম্ভব সেগুলোর বাস্তবায়ন করতে সম্মত থাকতে হবে। বিরোধী দলের সভা-সমাবেশ করার বিষয়ে আগে বাধানিষেধ ছিল, সে আপত্তি এখন নেই। এ ছাড়া বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্ট বলেছে যে, নির্বাচনকালীন সময় সংসদকে নিষ্ক্রিয় করে দিতে হবে। এর যথাযথ বাস্তবায়ন করতে হবে। আর নির্বাচন কমিশন যাতে অবাধ সুষ্ঠু পরিবেশে নির্বাচন করতে পারে তার জন্য সরকার, বিরোধী দল সবার সর্বাত্মক সহযোগিতা থাকা উচিত। এ ছাড়া রাজনৈতিক কারণে কারও বিরুদ্ধে যদি কোনো মামলা হয়ে থাকে তবে তা রিভিউ করা উচিত। এভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার আগ পর্যন্ত যতগুলো বিষয় বাস্তবায়ন করা সম্ভব তা সরকারের দেখা উচিত। অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদ বলেন, তবে জাতি আশা করে এই সংলাপের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া তথা আস্থার জায়গা তৈরি হবে এবং সব দল আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর