রবিবার, ৪ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

চলতি সপ্তাহেই তফসিল প্রস্তুতি ইসিতে

সংসদ নির্বাচনে অনলাইনে মনোনয়ন দাখিল করা যাবে, প্রার্থীকে উপস্থিত হতে হবে না

গোলাম রাব্বানী

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার প্রস্তুতি চলছে নির্বাচন কমিশনে। নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ জানিয়েছেন, চলতি সপ্তাহে সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করার সব প্রস্তুতি রয়েছে। গত শুক্র ও শনিবার নির্বাচনের সর্বশেষ প্রস্তুতি নিয়ে বৈঠক করেছে ইসি। অনলাইনে মনোনয়নপত্র দাখিলের বিধিমালা চূড়ান্ত হয়েছে। আজ ভোটের দিনক্ষণ চূড়ান্ত করতে বিকাল সাড়ে ৪টায় আবারও বৈঠকে বসবে কমিশন।

এর আগে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা বলেন, ৪ নভেম্বর কমিশন বৈঠকে ভোটের তারিখ চূড়ান্ত করা হতে পারে। ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, বৈঠকে যে তফসিল অনুমোদন পাবে, তা বিটিভি ও বেতারে জাতির উদ্দেশে ভাষণে ঘোষণা করবেন সিইসি। কবে সেই তফসিল ঘোষণা হবে, তা এখনো নিশ্চিত করছে না ইসি। এ ক্ষেত্রে আজকালের মধ্যে তফসিল না হলে, ৮ নভেম্বরের মধ্যে তফসিল ঘোষণা করবে ইসি। এদিকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সংলাপ শেষ না হওয়া পর্যন্ত একাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা না করতে নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।

চলতি সপ্তাহে তফসিল, ডিসেম্বরে ভোটের প্রস্তুতি : ইসি সচিব

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল চলতি সপ্তাহে ঘোষণা এবং ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন করার এখন পর্যন্ত প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ। গতকাল রাত পৌনে ৮টার দিকে কমিশন সভা শেষে এসব কথা বলেন তিনি। সচিব বলেন, ‘কমিশন সভায় তফসিলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে যে, কবে তফসিল ঘোষণা করা হবে। আর ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন করার জন্য এখন পর্যন্ত আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে। আজ বিকালে বৈঠক হবে।’ সচিব বলেন, কমিশন সভায় অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার বিধিমালা চূড়ান্ত করা হয়েছে। অনলাইনে আবেদন করলে সশরীরে রিটার্নিং কর্মকর্তার অফিসে হাজির হওয়ার প্রয়োজন নেই। প্রথমে অনলাইনে আবেদনের ফরম পূরণ করে তা ডাউনলোড দিতে হবে। তারপর তাতে প্রার্থী ও সমর্থক যাদের স্বাক্ষর প্রয়োজন তারা তাতে স্বাক্ষর করবেন। এরপর তা স্ক্যানিং করে অনলাইনে আপলোড করতে হবে। আবেদন পাঠানোর পর তা গ্রহণ করা হলো কিনা বা তা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে পৌঁছল কিনা তা এসএমএস বা ইমেইলের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে বলেও জানান সচিব। ইভিএম ব্যবহার বিধিমালা নিয়ে সভায় আলোচনা হয়েছে। এটি নিয়ে আজ বিকাল ৩টায় আবার সভা করে চূড়ান্ত করা হবে। তিনি বলেন, ‘কমিশনকে আমাদের প্রস্তুতির বিষয়ে অবহিত করেছি।’

এদিকে চলতি সপ্তাহে তফসিল ঘোষণার জন্য কালকের মধ্যে মনোনয়নপত্র দাখিলসহ সংশ্লিষ্ট ফরম-প্যাকেটসহ প্রয়োজনীয় দ্রব্য মাঠ পর্যায়ে পাঠানো হবে। এ ছাড়া নির্বাচন পরিচালনা-সংক্রান্ত ম্যানুয়েল রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে দ্রুত পাঠানো হবে। ভোট গ্রহণ কর্মকর্তার প্যানেল প্রস্তুত করে ৮ নভেম্বরের মধ্যে নির্বাচন কমিশনে পাঠানোর জন্য মাঠ কর্মকর্তাদের নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। ইসির নির্বাচন পরিচালনা শাখার কর্মকর্তারা জানান, মনোনয়নপত্র দাখিল, বাছাই, প্রত্যাহারের শেষ সময় এবং প্রতীক বরাদ্দ শেষে প্রচারের পর্যাপ্ত সময় দিয়ে তফসিল ঘোষণা থেকে ভোটের দিন পর্যন্ত ৪০-৪৫ দিন সময় রাখা হয়। সেই হিসাব ধরে ২০ ডিসেম্বরের মধ্যে বা ডিম্বেরের শেষ সপ্তাহ ভোট আয়োজনের পরিকল্পনা নিয়েই সার্বিক প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন।

সূত্র জানিয়েছে, ভোটের তারিখ নির্ধারণের ক্ষেত্রে বিজয় দিবসের আগে-পরের সুবিধা-অসুবিধার বিষয়টিও চিন্তা করা হচ্ছে। তবে সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণের জন্য সম্ভাব্য তারিখ হিসেবে ১৩, ১৮, ১৯ বা ২০ ডিসেম্বর, ২৩ বা ২৪ ডিসেম্বর ও ২৭ ডিসেম্বর বা ৩০/৩১ ডিসেম্বর প্রাথমিকভাবে চিন্তা করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে বড় কোনো সমস্যা না থাকলে ডিসেম্বেরের মধ্যে ভোট হবে। সেইসঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে ৩ জানুয়ারি ভোট করার চিন্তাও মাথায় রাখছে কমিশন। তবে কমিশন ভোটের তারিখ হিসেবে ১৯, ২০ ও ২৭ ডিসেম্বরকেই বেশি উপযোগী মনে করছে। এর আগে দশম সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে ২০১৩ সালের ১৯ নভেম্বর রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তৎকালীন কাজী রকিব কমিশন। পরে ২৫ নভেম্বর প্রধান নির্বাচন কমিশনার জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন।

সিইসির সঙ্গে ডিএমপি কমিশনারের বৈঠক : একাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল নিয়ে নিজেদের বৈঠকের আগে নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে পুলিশের সঙ্গে আলোচনা করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা। নির্বাচন ভবনে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে গতকাল বেলা ১১টার পর ঘণ্টাব্যাপী এ বৈঠক চলে। বৈঠকে চার নির্বাচন কমিশনার ছিলেন না। ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদকে নিয়ে ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়াসহ সাত পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক করেন সিইসি।

বৈঠক শেষে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন সাংবাদিকদের বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচন ভবন, সিইসি, নির্বাচন কমিশনারদের নিরাপত্তা ও তফসিল-পরবর্তী মেট্রোপলিটন এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলতে এসেছিল ডিএমপির প্রতিনিধি দল। তফসিলের আগে এটি একটি ‘রুটিন সাক্ষাৎ’ বলে উল্লেখ করেন একজন পুলিশ কর্মকর্তা। দশম সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার দিন ২০১৩ সালের ২৫ নভেম্বর বাড়তি পুলিশ ও র‌্যাব সদস্য মোতায়েন ছিল শেরেবাংলানগরে ইসির আশপাশে, ইসির পাশেই বঙ্গবন্ধু সম্মেলন কেন্দ্রের পাশে ছিল পুলিশের সাঁজোয়া যান।

সর্বশেষ খবর