সোমবার, ৫ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

শেখ হাসিনার প্রতি পূর্ণ সমর্থন ১৪ দলের

ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে ফের সংলাপ বুধবার

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৪ দলীয় জোট আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করে জানিয়েছে, ১৪ দল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধভাবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবে। গতকাল রাতে গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংলাপ বৈঠকে অংশ নিয়ে ১৪ দলের নেতারা এ সমর্থনের কথা জানান। এদিকে বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ফের বৈঠকে বসবে।

গতকাল রাতে ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক শেষে ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের জানান, ঐক্যফ্রন্টের নেতা ড. কামাল হোসেন দ্বিতীয় দফা সংলাপ চেয়ে আমাদের কাছে চিঠি দিয়েছেন। সংবিধান বিশেষজ্ঞদের নিয়ে তারা ছোট পরিসরে এ সংলাপ করতে চান। তাদের চিঠি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তিনি আগেই বলেছিলেন যে, সংলাপের জন্য তার দ্বার উন্মুক্ত। তবে ৭ নভেম্বরের পর সংলাপ সম্ভব নয়। সবকিছু বিচার বিশ্লেষণ করে আগামী ৭ নভেম্বর বুধবার বেলা ১১টায় ছোট আকারে এ সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে। ‘খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তি’ নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘প্যারোল কেন? তার কি কোনো নিকট আত্মীয় মারা গেছেন? নাকি তিনি গুরুতর অসুস্থ? যদি খালেদা জিয়ার চিকিৎসক বোর্ড মনে করে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যাওয়া প্রয়োজন সেক্ষেত্রে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি প্যারোলে মুক্তি পেতে পারেন।’ ওবায়দুল কাদের আরও জানান, সব দলের সঙ্গে সংলাপ শেষে  প্রধানমন্ত্রী প্রেস ব্রিফিং করবেন। এদিকে বৈঠক শেষে ১৪ দলীয় জোটের মুখপাত্র ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী  মোহাম্মদ নাসিম সাংবাদিকদের জানান, নির্বাচনের আসন বণ্টন প্রক্রিয়া এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এ ব্যাপারে জোট শরিকরা প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তকে চূড়ান্ত বলে মেনে নেবেন। এর আগে রাত ৮টায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসেন ১৪ দলীয় জোটের শীর্ষনেতারা। জোটনেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম  সেলিম, ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম, ড. আবদুুর রাজ্জাক, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি, জাহাঙ্গীর কবীর নানক, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, আইনবিষয়ক সম্পাদক শ ম রেজাউল করিম, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, জাসদ সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সাধারণ সম্পাদক শিরীন আক্তার, জাসদ একাংশের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া, জেপির চেয়ারম্যান ও পানিসম্পদ মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের ডা ওয়াজেদুল হক, গণআজাদী লীগের এস কে শিকদার, তরিকত ফেডারেশনের নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারীসহ জোটের নেতারা। ১৪ দলের মুখপাত্র বলেন, জোটের বৈঠকে নেতারা জোটনেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়েছেন। কারণ অশুভ শক্তি এখনো সক্রিয় আছে। তারা নির্বাচনকে ভণ্ডুল করতে চায়। এই অপশক্তির বিরুদ্ধে ১৪ দল সক্রিয় থাকবে। নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ীই হবে। সংবিধানের বাইরে আমরা একচুলও নড়ব না। কারণ অনেক রক্তে ভেজা অর্জিত আমাদের এ সংবিধান। এ সংবিধানের মর্যাদা রক্ষার বিষয়ে ১৪ দল নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আসন বণ্টন নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, এ ব্যাপারে সব সিদ্ধান্তের ভার প্রধানমন্ত্রীর ওপর  দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আসন বণ্টন নিয়ে আপনাদের কোনো চিন্তা করতে হবে না। জরিপ রিপোর্ট  দেখেই আমি মনোনয়ন দেব। এতে করে কেউ বঞ্চিত হবেন না। যেখানে যে বিজয়ী হয়ে আসতে পারবেন, তাকে  সেখানেই মনোনয়ন দেওয়া হবে। ১৪ দলের আরেক শীর্ষনেতা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, আমাদের একটাই এজেন্ডা তা হলো- সংবিধানের ভিত্তিতেই অংশগ্রহণ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠান। জোটনেত্রীর আসন বণ্টন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে প্রধানমন্ত্রীকেই দায়িত্ব দিয়েছি। এ ছাড়া বৈঠক সম্পর্কে ওবায়দুল কাদের জানান, বৈঠক শেষ হয় রাত সোয়া ১০টায়। বৈঠকে অংশ নেন শরিক দলগুলোর শীর্ষনেতারা। বৈঠকে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী  শেখ হাসিনা বলেছেন, ক্ষমতার মালিক জনগণ। আগামী নির্বাচনে জনগণ যাকে ভোট দেবে তারাই ক্ষমতায় আসবে। তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি গত দশ বছরে আমরা দেশের  যে উন্নয়ন করেছি তাতে জনগণ নৌকায় ভোট দেবে। এ সময় আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের বিজয় সুনিশ্চিত করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান  শেখ হাসিনা। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের উন্নয়নের পাশাপাশি জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করেছি, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছি। কিন্তু দুঃখের বিষয়, ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে জনগণ গণতন্ত্র এবং ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। তিনি বলেন, দখলকারীরা অবৈধভাবে জনগণের  ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র নস্যাৎ করেছে। স্বাধীনতার যে স্বপ্ন ছিল সে স্বপ্ন তারা ধূলিস্যাৎ করেছে। ২২ বছর পর ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় এসে উন্নয়ন শুরু করে। জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেয়। কিন্তু ২০০১ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত যারা ক্ষমতায় ছিল তারা কোনো উন্নয়ন করেনি। জনগণের ভোটাধিকার নষ্ট করেছে।

আজ জাপার সঙ্গে সংলাপ : চলমান সংলাপের অংশ হিসেবে নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে জাতীয় পার্টির সংলাপ আজ সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় গণভবনে অনুষ্ঠিত হবে। এতে সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বে ২০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল অংশ নেবে।

সর্বশেষ খবর