বুধবার, ৭ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

মন্ত্রিসভা থেকে বিদায় চার টেকনোক্র্যাটের

নিজস্ব প্রতিবেদক

বর্তমান সরকারের মন্ত্রিসভা থেকে টেকনোক্র্যাট কোটায় থাকা মন্ত্রীদের পদত্যাগের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার নির্দেশনার পর গতকাল সন্ধ্যায়ই চার মন্ত্রী তাদের পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে। এখন পদত্যাগপত্রগুলো নিয়মমাফিক প্রধানমন্ত্রীর দফতরে যাবে। গতকাল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে টেকনোক্র্যাট মন্ত্রীদের পদত্যাগের এই নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল সংক্রান্ত উচ্চ আদালতের রায়ের নির্দেশনার আলোকেই নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকারের মন্ত্রিসভায় টেকনোক্র্যাট কোটায় কোনো মন্ত্রী থাকতে পারবেন না। প্রধানমন্ত্রী এ কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে মন্ত্রিসভার টেকনোক্র্যাট সদস্যদের নির্বাচনী শিডিউল বা তফসিল ঘোষণার পর পরই মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগের এই নির্দেশনা দিয়েছেন। ৮ নভেম্বর নির্বাচন কমিশন নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার কথা রয়েছে। মন্ত্রিসভা বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের টেকনোক্র্যাট মন্ত্রীদের পদত্যাগের বিষয়টি সাংবাদিকদের অবহিত করেন। আর মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম জানিয়েছেন, নির্বাচন সামনে রেখে মন্ত্রিসভা পুনর্গঠনের প্রক্রিয়ায় সরকার যে সিদ্ধান্ত দেবে, সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ প্রস্তুত রয়েছে।

বৈঠক সূত্র জানায়, মন্ত্রিসভার বৈঠক চলাকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে উচ্চ আদালত যে রায় দিয়েছিল তাতে স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে যে, নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর সরকারের মন্ত্রিসভায় কোনো টেকনোক্র্যাট সদস্য থাকতে পারবেন না। অর্থাৎ নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকারে শুধু নির্বাচিত প্রতিনিধিরাই থাকবেন। তাই প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর টেকনোক্র্যাট মন্ত্রীদেরকে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করার নির্দেশনা দিয়েছেন। বর্তমানে সরকারের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী মিলিয়ে মন্ত্রিসভার সদস্য হচ্ছেন ৫৩ জন। এর মধ্যে চারজন পূর্ণ মন্ত্রী হচ্ছেন টেকনোক্র্যাট কোটায়। যারা সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত নন। বিশেষ বিবেচনায় সরকারের মন্ত্রিপরিষদে রয়েছেন। এরা হলেন— ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান, চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ এবং তথ্য ও যোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। যিনি চলতি বছরের ২ জানুয়ারি মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন এবং ৩ জানুয়ারি এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান। প্রধানমন্ত্রী ও আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী সরকারে এই চার মন্ত্রীকে এখন পদত্যাগ করতে হবে। 

মন্ত্রিসভার একজন সদস্য জানান, এখন এই চার মন্ত্রী যে কোনো সময় পদত্যাগ করতে পারবেন। তবে তাদের এই পদত্যাগ কার্যকর হবে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর।

গতকাল রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সরকারের টেকনোক্র্যাট কোটায় থাকা ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান, চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ এবং তথ্য ও যোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার তাদের পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীদের ব্যক্তিগত কর্মকর্তারা। এর আগে মন্ত্রিসভা বৈঠক শেষে বিকালে সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠক নিয়ে নিয়মিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম জানিয়েছেন, মন্ত্রিসভা সংকুচিত করা হবে কি না— এখন পর্যন্ত আমি সেটা জানি না, আমাকে অবহিত করা হয়নি, জানলে আপনাদের জানাব। তিনি বলেন, টেকনোক্র্যাট মন্ত্রীদের পদত্যাগের নির্দেশের বিষয়টি তাকে ‘অফিশিয়ালি’ জানানো হয়নি। অফিশিয়াল নির্দেশনা পেলে এবং টেকনোক্র্যাট মন্ত্রীরা পদত্যাগ করলে পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে— এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, খুব বেশি সময় লাগে না। আমরা সামারি করে পাঠিয়ে দেব, মহামান্য রাষ্ট্রপতি হয়ে চলে আসবে। মন্ত্রিসভা পুনর্গঠনের বিষয়ে আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা এগুলোর ব্যাপারে রেডি। তবে এবার নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভায় কতটা পরিবর্তন আসতে পারে সে বিষয়ে তিনি কোনো ধারণা দিতে পারেননি।

সর্বশেষ খবর