শনিবার, ১০ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

সুনসান নীরবতা বিএনপি কার্যালয়ে

হয়নি ভোটে যাওয়ার সিদ্ধান্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক

সুনসান নীরবতা বিএনপি কার্যালয়ে

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হলেও এখনো সুনসান নীরবতা বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে। ভোটের আমেজ লাগেনি দলটির নয়াপল্টন কার্যালয়ে। নির্বাচন যাওয়া নিয়ে বিএনপি এখনো আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত নেয়নি। নেতা-কর্মীরাও দোটানায়। গতকাল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মনোনয়নপত্র বিক্রি শুরু করলেও বিএনপি ব্যস্ত ছিল জনসভা নিয়ে। সাত দফা দাবি নিয়ে রাজশাহীতে জনসভা করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসন কার্যালয়ও ছিল তালাবদ্ধ। দিনভর সেখানে শুধু দুজন নিরাপত্তা কর্মীকে দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়। শুক্রবার থাকায় গতকাল কেন্দ্রীয় নেতাদের কেউ ‘ঢুঁ’ মারেননি গুলশান কার্যালয়ে। সকাল ১১টায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, নিয়মিত বিফ্রিংয়ের অংশ হিসেবে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবীর রিজভী সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন। তার সঙ্গে ছিলেন চেনা কয়েকটি মুখ। দফতর শাখার নেতাদের মামলার ডাটাবেজ তৈরি নিয়ে ব্যস্ততা দেখা যায়। গুটিকয়েক কর্মীকে দেখা যায় তিন তলার দফতর শাখায় আড্ডা মারতে। এক পর্যায়ে রিজভী আহমেদ বেরিয়ে যান। জাতীয় প্রেস ক্লাবে একটি ঝটিকা মিছিল শেষে আবারও কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ফিরে আসেন। জানা যায়, দীর্ঘ ৯ মাস ৯ দিন ধরে টানা কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অবস্থান করছেন রিজভী আহমেদ। এ পর্যন্ত ১৮ বার তিনি পার্টি অফিস থেকে বেরিয়ে আবারও কার্যালয়ে এসে রাত যাপন করেন। রিজভী আহমেদকে ঘিরেই কিছু নেতা-কর্মী আসেন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হয়েছে, বিএনপি অফিস এখনো নীরব কেন জানতে চাইলে রিজভী আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমাদের সাত দফা দাবির কোনোটাই মানা হলো না। আমাদের নেত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এখন জেলে। না করার অনুরোধ সত্ত্বেও একতরফা তফসিল ঘোষণা হলো। সেই নির্বাচনে আমরা কীভাবে যাব। দেশনেত্রীর মুক্তিসহ সবার অংশগ্রহণে সুষ্ঠু ভোটের নিশ্চয়তা পেলে অবশ্যই আমরা ভোটের প্রস্তুতি নেব। মুহূর্তেই সরগরম হয়ে উঠবে নয়াপল্টন কার্যালয়।’ গতকালও কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নেতা-কর্মীদের তুলনায় গণমাধ্যমের কর্মীদের সংখ্যাই ছিল বেশি। এ ছাড়া কার্যালয়ের সামনেই সারিবদ্ধভাবে দুই স্তরে পুলিশের অবস্থান নিতে দেখা যায়। আগের মতো নেতা-কর্মীদের ঢল দেখা যায়নি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে। ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলসহ সব অঙ্গ সংগঠনের কার্যালয় ছিল তালাবদ্ধ। অবশ্য পুলিশ থাকলে নয়াপল্টনে আসতে চায় না নেতা-কর্মীরা। কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের পাশেই রাখা হয় জল কামান ও রায়ট কার। সাদা পোশাকে সরকারি বিভিন্ন সংস্থার লোকজনকেও দেখা মেলে কার্যালয়ের সামনে। সংবাদ সম্মেলন শেষে কিছুক্ষণ পর পার্টি অফিস পুরোটাই সুনসান নীরব হয়ে পড়ে।

গুটিকয়েক নেতার আনাগোনা ছিল কার্যালয়ে : সকাল ১১টার দিকে রিজভী আহমেদের নিয়মিত বিফ্রিংয়ে কিছু কেন্দ্রীয় নেতাকে দেখা যায়। এর মধ্যে ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বেগম সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. শাহেদা রফিক, স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, সহ-দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, মুনির হোসেন প্রমুখ। সংবাদ সম্মেলন শেষে কার্যালয়ে আসেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সাইফুল ইসলাম পটু ও শামসুজ্জামান সুরুজ। বিকালে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আসেন দলের সহ-প্রচার সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম, নির্বাহী কমিটির সদস্য নিপুণ রায় চৌধুরী, ফখরুদ্দিন আহমেদ বাচ্চু। দিনভর প্রায় ২০-২৫ জন কর্মীর দেখা মেলে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে। 

নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়া নিয়ে নানা আলোচনা : আগামী জাতীয় নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়া নিয়ে এখনো দোটানায় বিএনপি। বিশেষ করে সংলাপের পর ক্ষমতাসীন দলের আচরণে সন্তুষ্ট নয় দলের নেতা-কর্মীরা। মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা চান, আন্দোলনের মাধ্যমেই সব সমস্যার সমাধান। বিএনপির যৌক্তিক দাবি মেনে নিয়েই নির্বাচনে যাওয়ার পক্ষে মাঠের নেতারা। এদিকে ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতারাও বৃহস্পতিবার রাতে বৈঠক করে বলেছেন, বেগম খালেদা জিয়া ছাড়া নির্বাচনে যাবে না তারা। তবে এরপর বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে নেতারা বলেন, চলমান যে পরিস্থিতি তাতে নির্বাচন বয়কট করা ঠিক হবে না। নির্বাচন বর্জন করলে যেসব সমস্যাগুলো হতে পারে তা নিয়েও আলোচনা করেন নেতারা। তবে বিএনপির দায়িত্বশীল এক নেতা জানান, শেষ পর্যন্ত সরকারকে চতুর্মুখী চাপে রেখে নির্বাচনের পথেই যাবে বিএনপি।

জানা যায়, আরেক দফা তফসিল পেছানোর দাবি তুলবে বিএনপি। এরপর দল, জোট ও ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে মনোনয়নপত্রও সংগ্রহ করা হবে। যথা সময়ে জমাও দেওয়া হবে মনোনয়নপত্র। এরপর চলবে দরকষাকষি। শেষ পর্যন্ত নানা প্রতিকূল পরিবেশেও নির্বাচনে যাবে বিএনপি। বৃহস্পতিবার নাজিম উদ্দিন রোডে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে নাইকো দুর্নীতি মামলায় বেগম খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে বিচারকাজ চলাকালে সেখানে যান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সেখানে বেগম জিয়ার সঙ্গে এক মিনিটের দেখা সাক্ষাতের সুযোগ হয় মির্জা ফখরুলের। চলমান পরিস্থিতিতে করণীয় সম্পর্কে জানতে চান মির্জা ফখরুল। মির্জা ফখরুল বলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোটের নেতাদের সঙ্গে শলাপরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেব। তবে আন্দোলনের পাশাপাশি নির্বাচন প্রস্তুতি নেওয়ার ইঙ্গিত দেন মির্জা ফখরুল। সূত্র মতে, ঐক্যফ্রন্ট এখন নির্বাচনমুখী শোডাউন করবে। তফসিল পিছিয়ে ন্যূনতম দাবি মেনে নিলে দল, ফ্রন্ট ও জোটের প্রার্থী সবাই মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করবে। এরপর আসন বণ্টন সুরাহা করা হবে। পরে সরকারকে চতুর্মুখী চাপে রেখে শেষ পর্যন্ত ভোটে যাবে বিএনপি জোট। বিএনপির দায়িত্বশীল এক নেতা বলেন, আলোচনার পথ এখনো রুদ্ধ হয়ে যায়নি। সংলাপ শেষ হলেও আরও আলোচনা চলবে। সরকারি দল কিছটা ছাড় দিলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টও কিছুটা ছাড় দেওয়ার মানসিকতা নিয়ে এগোবে। কিন্তু সরকার আলোচনার টেবিলে গিয়ে গ্রেফতার হয়রানি আরও বেড়ে গেছে। বেগম জিয়াকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে আনা হয়েছিল। তাকে ফের কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ঐক্যফ্রন্টের মতামতকে তোয়াক্কা না করে তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। সংলাপ করে সরকার যদি নিজের সিদ্ধান্তেই অটল থাকে তাহলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলকে নিয়ে আন্দোলনের মাধ্যমেই বিএনপি দাবি আদায় করবে।  সংলাপে দাবি আদায়ের আশা ফিকে হয়ে আসার পর রাজশাহীতে অনুষ্ঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের জনসভায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘সব দলের জন্য সমান সুযোগ তৈরি করা না হলে তফসিল বা নির্বাচন কোনোটাই গ্রহণযোগ্য হবে না। বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে। সবার অংশগ্রহণে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে হবে।’

সর্বশেষ খবর