বুধবার, ১৪ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা
পর্দার অন্তরালে দৌড়ঝাঁপ

আওয়ামী লীগ আসন বণ্টনে যোগ্যদের দিচ্ছে অগ্রাধিকার

রফিকুল ইসলাম রনি

আওয়ামী লীগ আসন বণ্টনে যোগ্যদের দিচ্ছে অগ্রাধিকার

বিএনপিবিহীন ৫ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনের মতো আসন পাবেন না মহাজোটের শরিকরা। শতভাগ বিজয় নিশ্চিত জেনেই প্রার্থী ঠিক করবে আওয়ামী লীগ। নিজ দল ও মহাজোটের শরিকদের সম্ভাব্য মনোনয়নপ্রত্যাশীর মধ্যে বিজয়ের জন্য সবচেয়ে সম্ভাবনাময় প্রার্থী চূড়ান্ত করে ভোটের আগেই জয় নিশ্চিত করতে চায় ক্ষমতাসীন দলটি। বিএনপির প্রার্থীর সঙ্গে লড়াইয়ে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় প্রার্থীকেই বেছে নেবে আওয়ামী লীগ। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো আসন চাইলে জোটকে ছাড় দেওয়া নয়, আবার ডেকেও মনোনয়ন নয়। জোটের সঙ্গে আসন ভাগাভাগির নামে ভোটের আগেই হারতে চায় না আওয়ামী লীগ।  রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, একাদশ জাতীয় সংসদ  নির্বাচন ক্ষমতাসীন দলের জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ হবে। সার্বিক বিষয় মাথায় রেখে প্রার্থী চূড়ান্ত করে ভোটের আগেই এগিয়ে থাকতে হবে। এর মধ্যে জোটের আসন ভাগাভাগির নামে যাকে তাকে যেখানে সেখানে প্রার্থী করা হবে না। সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিকেই প্রার্থী করার দলীয় সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রচার-প্রচারণা শুরুর আগেই সারা দেশে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ দলাদলি বন্ধ করে দলীয় বা জোট প্রার্থীর পক্ষে একযোগে মাঠে নামাতে হবে। তা না করতে পারলে আওয়ামী লীগকে এবার চরম মূল্য দিতে হবে। 

এ প্রসঙ্গে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, জোট রক্ষার স্বার্থে যতটুকু ছাড় দেওয়ার দরকার ততটুকুই দিতে হবে। তবে জোট রক্ষার নামে যাকে তাকে এবং ফেল করা প্রার্থীকে যেখানে সেখানে মনোনয়ন দেওয়া ঠিক হবে না। ঢাকায় যারা বড় বড় নেতা, যাদের তৃণমূলে অনুসারী নেই, তাদের মনোনয়ন দিলে বুমেরাং হবে। আওয়ামী লীগকে মূল্য দিতে হবে। 

সূত্র মতে, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলে ১৩টি রাজনৈতিক দল রয়েছে। এর মধ্যে ৫টির নিবন্ধন নেই। অন্য আটটি দলের নিবন্ধন থাকলেও তারা এবার নৌকা প্রতীকে ভোট করবেন। ছোট দলগুলোর বড় চাহিদা রয়েছে আওয়ামী লীগের কাছে। নিবন্ধনহীন রাজনৈতিক দলও ৫টি করে আসন চায়। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জোটবদ্ধ হয়ে অংশ নিতে ১৪ দলের শরিকরা আওয়ামী লীগের কাছে তাদের প্রার্থী তালিকা দিয়েছে। ১৪ দলীয় জোটের প্রার্থীদের নৌকা প্রতীক বরাদ্দ করতে ইসিতে চিঠি পাঠানো হয়েছে। অন্যদিকে জাতীয় পার্টি মহাজোটে থেকেই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। এখনো প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা হয়নি। তবে দরকষাকষির অবস্থায় রয়েছে। জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের কাছে চায় ১০০ আসন। এ ছাড়াও আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট করে নির্বাচন করতে চায় বিকল্পধারার নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্ট, ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার বিএনএ জোট। নাজমুল হুদা নিজেই নৌকায় চড়তে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম তুলেছেন। এ ছাড়াও জাকের পার্টি, বাংলাদেশ সম্মিলিত ইসলামী জোট, ইসলামিক ডেমোক্র্যাটিক এ্যালায়েন্স, ইসলামী ঐক্যজোটসহ বেশ কিছু ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে থেকে ভোট করতে চায়। তারাও নিজ নিজ দলের চাহিদার কথা জানিয়েছে আওয়ামী লীগকে। গতকাল ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কার্যালয়ে সাক্ষাৎ করেন যুক্তফ্রন্টের দুই নেতা মেজর (অব.) আবদুল মান্নান ও মাহি বি চৌধুরী। ১৪ দলের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টি ১০টি, জাসদ (ইনু) ১০টি, জাসদ (আম্বিয়া) ১৫টি, জেপি (মঞ্জু) ৪টি, তরীকত ফেডারেশন ৩টি, সাম্যবাদী দল ৪টি, জাকের পার্টি ২ থেকে ৩টি, তৃণমূল বিএনপির জোট ৪টি আসনের তালিকা আওয়ামী লীগের কাছে জমা দিয়েছে বলে জানা গেছে। তবে এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ তাদেরকে কিছু জানায়নি। জোটের হেভিওয়েট প্রার্থীরা কোথায় কে অংশ নেবেন সে বিষয়টি বিশেষ নজর রাখছে আওয়ামী লীগ। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহম্মদ ফারুক খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা জোটবদ্ধ হয়েই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। আসন ভাগাভাগি নিয়ে আমাদের মধ্যে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে আগে দলের প্রার্থী ঠিক করছি, পরবর্তীতে জোটের প্রার্থী ঠিক করা হবে। কত আসন ছাড় দেওয়া হতে পারে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সর্বোচ্চ ৮০ আসন বা কমও হতে পারে। যেখানে উইনেবল প্রার্থীকে আমরা চূড়ান্ত করব। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী ফোরামের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, যেখানে জাতীয় পার্টির প্রার্থী থাকবে সেখানে কোনো প্রার্থী দেবে না আওয়ামী লীগ। শরিকদের ক্ষেত্রেও তাই। আর গত দশম সংসদের মতো ‘দুর্বল’ প্রার্থীকে কোনোভাবেই মনোনয়ন দেবে না আওয়ামী লীগ। জোটের শরিকদের চাহিদা থাকলেও বিজয়ের ব্যাপারে কতটা উপযুক্ত তা দেখেই প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে। এবার প্রার্থী চূড়ান্ত করতে আগে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ঠিক করা হচ্ছে। তার জোট শরিকদের সঙ্গে বসে প্রার্থী চূড়ান্ত করে একসঙ্গে ঘোষণা দেওয়া হতে পারে এবার মহাজোটের প্রার্থী, অথবা যেসব আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী দেবে না সেখানে ফাঁকা রাখা হবে। 

কাদেরের সঙ্গে জাকের পার্টির বৈঠক : গতকাল রাত আটটার দিকে ধানমন্ডি আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে বৈঠকে বসেন জাকের পার্টির শীর্ষ নেতারা। বৈঠকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথা জানায় জাকের পার্টি।

সর্বশেষ খবর