শিরোনাম
শুক্রবার, ১৬ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা
প্রার্থী ঘোষণায় কৌশলী দুই জোট

ঐক্যফ্রন্টের ঘোষণা দেখে প্রার্থী দেবে আওয়ামী লীগ

রফিকুল ইসলাম রনি

ঐক্যফ্রন্টের ঘোষণা দেখে প্রার্থী দেবে আওয়ামী লীগ

দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করতে আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ডের সদস্যরা দফায় দফায় বৈঠক করছেন। এরই মধ্যে দুটি বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে দেশি-বিদেশি ৫/৬টি জনমত জরিপ রিপোর্ট বিশ্লেষণ করা হয়। আগামী ২২ নভেম্বরের মধ্যেই চূড়ান্ত করা হবে ৩০০ আসনে দলীয় প্রার্থী। তবে ঘোষণা করতে আরও দু-একদিন সময় নেবে ক্ষমতাসীন দলটি। কারণ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মনোনয়ন দেখেই প্রার্থী ঘোষণা করতে চায় আওয়ামী লীগ। ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থীকে মোকাবিলা করার জন্য শক্তিশালী প্রার্থী দেওয়া হবে। সে কারণে চূড়ান্ত তালিকায় থাকলেও শেষ মুহূর্তে বাদ পড়তে পারেন কেউ কেউ। আবার কারও কারও কপাল খুলে যাওয়ার জোর সম্ভাবনা রয়েছে। দলের নীতি নির্ধারণী ফোরামের একাধিক নেতা এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।  

দলীয় সূত্র মতে, একাদশ সংসদ নির্বাচন ক্ষমতাসীন দলটির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ হিসেবে নেতারা বলছেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার নজির নেই। সে কারণে নির্বাচনে ‘যোগ্য প্রার্থী বাছাইকেই’ বিজয়ের প্রথম ধাপ হিসেবে মনে করছেন তারা। কারণ তৃণমূলে অভ্যন্তরীণ কোন্দল এখনো দৃশ্যমান। অনেক এমপি জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। অন্যদিকে ধানের শীষ নিয়ে এবার জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরা সংসদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ‘জনপ্রিয়’ ও ‘তারকা’ প্রার্থীদের বিপরীতে আওয়ামী লীগও শক্তিশালী প্রার্থী বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে। এ জন্য বর্তমান এমপি কিংবা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা, সাবেক ছাত্রনেতা— এসব  যোগ্যতায় নৌকার টিকিট এবার পাওয়া যাচ্ছে না। যাকে মনোনয়ন দিলে জিতে আসার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি তাকেই মনোনয়ন দেওয়া হবে। ইতিমধ্যে দলটির মনোনয়ন বোর্ডের আনুষ্ঠানিক দুটি বৈঠকে প্রার্থী চূড়ান্তকরণ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রার্থী ঘোষণা করতে সময় নেওয়া হবে। কারণ বিএনপি বা ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী কারা থাকছেন? তাদের সঙ্গে লড়াই করে জিতে আসার মতো প্রার্থী আমাদের দিতে হবে। এখন প্রার্থী চূড়ান্ত করা হলেও ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী দেখে শেষ মুহূর্তে পরিবর্তন আসতে পারে।’

জানা গেছে, দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করার সময় মহাজোটের প্রার্থীকেও বিবেচনায় রাখা হচ্ছে আওয়ামী লীগে। যেখানে মহাজোটের শক্তিশালী প্রার্থী আছেন, সেখানে আওয়ামী লীগ কোনো প্রার্থী রাখবে না। তবে দলের প্রার্থী ঘোষণার সময় তাদের নাম ঘোষণা করা হবে। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, কোনো কারণে বিএনপি বা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালে সেখানে যেন কেউ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত না হয় সেজন্য দলীয় প্রার্থী রাখা হবে। শেষ মুহূর্তে দলের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করা হবে। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘যেখানে আমাদের জোটের প্রার্থী থাকবে সেখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী রাখা হচ্ছে না। তবে প্রাথমিকভাবে সব আসনেই প্রার্থীর নাম ঘোষণা করব। কোনো কারণে বিএনপি নির্বাচনে না এলে ওইসব আসনে যেন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারি সেজন্য প্রার্থী রাখা হবে। তবে বিএনপি ভোটে থাকলে মহাজোটকে ছাড় দিয়ে আমাদের প্রার্থী প্রত্যাহার করব। গত ৯ নভেম্বর থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম বিতরণ ও জমাদান শুরু হয়। শেষ হয় গত ১৩ নভেম্বর। ৪ হাজার ২৩ জন মনোনয়নপ্রত্যাশী দলের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। বুধবার দুপুরে গণভবনে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এর আগে গত ১১ নভেম্বর আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও দলের সংসদীয় বোর্ডের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে প্রথম বৈঠক হয়। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী পরিচালনা কমিটির একাধিক নেতা জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে সারা দেশে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের একটি তালিকা সংগ্রহ করেছে আওয়ামী লীগ। ওই তালিকা দেখেই আওয়ামী লীগের বা জোটের প্রার্থী চূড়ান্ত করা হচ্ছে। কোনোভাবেই দুর্বল প্রার্থীকে এবার মনোনয়ন দেবে না আওয়ামী লীগ। প্রার্থী বাছাইয়ে এত কড়াকড়ির বিষয়ে আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, দেশব্যাপী অবকাঠামোগত অনেক উন্নয়ন আর আন্তর্জাতিকভাবে দেশকে মর্যাদাশালী করার পরও আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে ক্ষমতাসীনদের দুশ্চিন্তা বাড়ছে। বেশি দুশ্চিন্তা হচ্ছে, যেসব এমপি ক্ষমতা পেয়ে দলের নেতা-কর্মীদের এতদিন পাশ কাটিয়ে চলেছেন, তাদের নিয়ে। যারা দম্ভ করে বলেছেন, ‘আমাকে তো তোমরা ভোট দিয়ে এমপি বানাওনি।’ গত বুধবার দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলে দিয়েছেন, ২০১৪ সালের মতো এবার কাউকে তিনি এমপি করে আনতে পারবেন না।

সর্বশেষ খবর