শুক্রবার, ১৬ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

তারুণ্যের হৃদয় জয় করেছেন শেখ হাসিনা

বিশেষ প্রতিবেদক

তারুণ্যের হৃদয় জয় করেছেন শেখ হাসিনা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১০ বছরের টানা শাসনামলে তারুণ্যের হৃদয় জয় করেছেন। তরুণদের আকাশ ছোঁয়া স্বপ্নের সঙ্গী করেছেন একটি আধুনিক উন্নত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে। আড়াই কোটি নতুন ভোটার এবারের জাতীয় নির্বাচনে ভোট দিতে যাচ্ছে। পর্যবেক্ষকদের ধারণা আধুনিক চিন্তামনস্ক আকাশ সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত এই তারুণ্যের বিশাল অংশই ভোটের লড়াইয়ে শেখ হাসিনার নৌকায় উঠবে। তথ্য-প্রযুক্তি বিপ্লবের এই ১০ বছরে তৃণমূল পর্যন্ত প্রযুক্তির যে প্রসার ঘটেছে, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্কুলগুলোতে যেভাবে প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষাব্যবস্থা আলো ছড়িয়েছে তাতে তারুণ্য আলোকিত হয়েছে। দশ বছরের উন্নয়নবান্ধব অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রবৃদ্ধি অর্জনের যাত্রাপথে অসংখ্য ব্যাংক-বীমাই গড়ে ওঠেনি করপোরেট হাউসগুলো ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটানোর জন্য বেকারত্ব অনেকটা গুচে গেছে। শিক্ষিত তরুণরা এখন ব্যাংক-বীমা করপোরেট হাউসগুলোতে মনের সুখে কাজ করছে। জীবন যাত্রার মান পাল্টে দিয়েছে তারা। অর্থনৈতিক উন্নয়নে এই যাত্রা পথে শেখ হাসিনার হাত ধরে ইলেকট্রনিক ও অনলাইন মিডিয়ার যে দুয়ার খুলেছে সেখানে সচ্ছলভাবে জীবিকা নির্বাহ করছেন সাংবাদিকতায় যুক্ত হওয়া বিশ্ববিদ্যালয় পাস তরুণ-তরুণীরা। প্রধানমন্ত্রীর তথ্য প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় হার্বার্ড পাস প্রযুক্তিবিদ হিসেবে মায়ের পাশে থেকে এই তথ্য প্রযুক্তি বিপ্লবে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন। নিজের ক্লিন ইমেজ রেখে এই তথ্য প্রযুক্তি বিপ্লবের মাধ্যমে এই খাতকে এতটাই প্রসারিত করেছেন যে, সেখানে তারুণ্যের জয়-জয়কার ঘটেছে। ব্যবসা ও চাকরি এ খাতের তরুণদের হাতের মুঠোয় এসেছে। দশ বছরে ধীরে ধীরে হরতাল অবরোধ মুক্ত অর্থনৈতিক উন্নয়নের এই যাত্রা পথে শেখ হাসিনার হাত ধরেই দেশজুড়ে অসংখ্য সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় যেমন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তেমনি হয়েছে কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তারুণ্য সেখান থেকে কর্ম উদ্যোগী প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নিয়ে একদিকে যেমন চাকরি-বাকরি করছেন অন্যদিকে তেমনি নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করছেন। ২০০৯ সালে তথ্য প্রযুক্তি খাতে যেখানে বৈদেশিক মুদ্রা আয় হতো এক মিলিয়ন মার্কিন ডলার সেখানে শেখ হাসিনার হাত ধরে ঘুরে দাঁড়ানো তারুণ্য বিস্ময়ের সঙ্গে দেখছে প্রায় তিনশ মিলিয়নের ওপর বৈদেশিক মুদ্রা এখন অর্জন হচ্ছে। চার হাজার ৫০০ ডিজিটাল সেন্টার ইউনিয়ন পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত করায় সুফল ভোগ করছে প্রান্তিকের তারুণ্য। প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেরা আয় রোজগার করে স্বাবলম্বী হচ্ছে। ৬১টি জেলায় এবং উপজেলায় ৩৯১টি ও ৩২৮টি পৌরসভায় ৪০৭টি নগর ডিজিটাল সেন্টার প্রতিষ্ঠা করে তারুণ্যের প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থানই নয় গণমানুষের সেবা দোরগোরায় পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তির এই উন্নয়নের সুবাদে তারুণ্য এখন ইন্টারনেট ব্যবহার করে জ্ঞানের পরিধিই বাড়াচ্ছে না তারা হাতের মুঠোয় বিদেশি ফিল্ম দেখার সুযোগ গ্রহণ করে চিত্তকে প্রফুল্ল রাখছে। টেলিকম সেক্টরেও তরুণদের জন্য কর্মসংস্থানের দুয়ার খুলে দিয়েছে। তথ্য সেবাকেন্দ্র ঘিরে আউট সোর্সিং করছে স্বল্প শিক্ষত তরুণরাও। কমিউনিটি হেলথগুলোতে ৩০ ধরনের ওষুধ ফ্রি দেওয়া হচ্ছে। মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উেক্ষপণ শেখ হাসিনার বিস্ময়কর অর্জন। সে দেশবাসীর সঙ্গে গোটা তারুণ্যকে আলোড়িত করেছে। এর মধ্য দিয়ে আমরা নিজস্ব স্যাটেলাইটই শুধু ব্যবহার করতে পারব না, এটা ভাড়াও দিতে পারব। অর্থনৈতিক আয়ের আকাশদিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে যেমন, তেমনি যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ সম্পর্কেও আগাম অবহিত হব। শেখ হাসিনা যখন ২০০৯ সালে ক্ষমতা নেন তখন জাতীয় প্রবৃদ্ধি ছিল ৫ দশমিক ৮ শতাংশ। এখন সেটি ৭ দশমিক ৮১ শতাংশ। তখন মাথাপিছু আয় ছিল প্রায় সাড়ে ৯০০ ডলার, এখন ১ হাজার ৭৫১ ডলার। আমার কাছে এটি বিস্ময়কর। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩ বিলিয়ন থেকে এখন ৩২ বিলিয়ন।

তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর জ্ঞান ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা এবং ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের উন্নীত করার যে লক্ষ্য সেটি ২০০৯ সালে শেখ হাসিনার হাত ধরে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের অভিযাত্রা শুরু হয়। এই লক্ষ্যে তথ্য প্রযুক্তি অবকাঠামোগত উন্নয়ন, কানেকটিভিটি স্থাপন, ই-গভর্নেন্স প্রতিষ্ঠা, দক্ষ মানব সম্পদ তৈরি, মোবাইল অ্যাপস উন্নয়ন এবং ই-কমার্স প্রসারসহ নানান প্রকল্প বাস্তবায়ন তারুণ্যের কৌতূহলকে জয় করেছে। দেশব্যাপী ইন্টারনেট সংযোগ প্রদানের মাধ্যমে প্রযুক্তি সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সব সরকারি অফিসসমূহকে একই নেটওয়ার্কের আওতায় নিয়ে আসা হয়। ৫৮টি মন্ত্রণালয়, বিভাগ, ২২৭টি অধিদফতর, ৬৪ জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও ৬৪ নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় একই নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হয়েছে। ই-টু প্রকল্পের আয় জেলা-উপজেলায় ১৮ হাজার ১৩০টি সরকারি অফিসের কানেকটিভিটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ৬৮ প্রতিষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সিং সিস্টেম ২৫৪টি এগ্রিকালচার ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন সেন্টার ও ২৫টি টেলিমেডিসিন সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। সরকরি কর্মকর্তারা যাতে অফিসের বাইরে থেকে দাফতরিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে সে জন্য তাদের মাঝে ২৫ হাজার ট্যাব বিতরণ করা হয়েছে। সব সরকারি অফিসের মধ্যে কানেকটিভিটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। দুই লাখ প্রান্তিক পর্যায়ের স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা কমিউনিটি ক্লিনিক পোস্ট অফিস কারিগরি শিক্ষা কেন্দ্রে অপটিক্যাল ফাইবার অথবা ক্ষেত্রবিশেষে সম্ভাভ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে কানেকটিভিটি প্রদান ও স্ট্যান্ডার্ড ল্যান্ড স্থাপন করার উদ্যোগ নিয়েছে। গাজীপুরের কালিয়াকৈরে বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটি ও যশোরে শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক স্থাপন করা হয়েছে। এখানে লক্ষাধিক তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থান হতে যাচ্ছে। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের দরজা খুলে গেছে। ইতিমধ্যেই তিনটি জাপানি কোম্পানিসহ দেশি-বিদেশি ১২টি কোম্পানিকে স্থান বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে ইলেকট্রনিকক্স সিটির প্রাথমিক অবকাঠামো নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে। দেশজুড়ে এই ধরনের অনেক প্রকল্প বাস্তবায়নের পথে। লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং প্রকল্পের মাধ্যমে সারা দেশে ৫০ দিনব্যাপী ১৩ হাজার যুবক ও যুব মহিলাকে পেশাদারি আউট সোর্সিং ট্রেনিং ও বাস্তবায়ন কার্যক্রম রয়েছে। এসব প্রশিক্ষণে গ্রাফিক্স ডিজাইন ওয়েব ডিজাউন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ও ডিজিটাল মার্কেটিং বিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। দক্ষ করে তোলা হচ্ছে। হাতে কলমে প্রশিক্ষণের পাশাপাশি প্রজেক্ট ভিত্তিক কাজ করার সুযোগ রয়েছে। এসব প্রশিক্ষণার্থীরা আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে আয় করছেন তথ্য প্রযুক্তি খাত ঘিরেই গোটা দেশের তারুণ্যকে কার্যত জয় করে নিয়েছেন শেখ হাসিনা।

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট থেকে সুবিধা পাওয়া যাবে : নিজস্ব স্যাটেলাইট তাই মহাকাশ সম্পর্কে বেশি জ্ঞান লাভ করা সম্ভব হবে। মহাকাশ গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। বাণিজ্যিক ভাবে বেশি লাভ হবে। এই স্যাটেলাইটে ৪০টি ট্রান্সপন্ডার রয়েছে। যার মধ্যে ২০টি দেশের কাজে ব্যবহৃত হবে আর ২০টি ভাড়া দেওয়া হবে। স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলে প্রচুর পরিমাণ টাকা বাইরের দেশে চলে যায়, যার পরিমাণ ২ লাখ ডলার। আমরা বর্তমানে সিঙ্গাপুরের স্যাটেলাইট ব্যবহার করি। আমরা এই স্যাটেলাইট ভাড়া দিলে ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করা সম্ভব হবে। এতে করে দেশের টাকা দেশে থাকবে আবার বাইরের দেশ থেকেও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে। আবহাওয়া সম্পর্কে আরও ভালোভাবে জানা যাবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করা যাবে। মিলিটারিদের জন্য খুব সুবিধা হবে। কারণ তারা স্যাটেলাইট ফোন ব্যবহার করে। স্যাটেলাইট ফোন হলো যে ফোনে ট্রেস করা যায় না। এটি কোনো তারের মাধ্যমে চলে না। সমুদ্র বন নিয়ে রিসার্চ করা যাবে অনায়াসে। ইন্টারনেট সহজলভ্য হবে। এটি আরও অনেক স্মুথ হয়ে আসবে। কমিউনিকেশন ডেভেলপ না করতে পারলে ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন পূরণ করা সম্ভব হবে না। এ ছাড়াও মুক্তিযুদ্ধের উত্তরাধিকারিত্ব বহন করা এই দেশের তারুণ্যকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মাধ্যমে সন্তুষ্টই করেননি, এমনকি কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে শুরু করে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের ভ্যাট প্রত্যাহারের আন্দোলন যৌক্তিক হিসেবে কার্যকর সমাধান দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের আস্থা ও শ্রদ্ধা অর্জন করেছেন। দেশে বাল্যবিবাহ রোধে স্থানীয় প্রশাসন জনপ্রতিনিধি ও শিক্ষকদের কাজে লাগিয়ে যে আন্দোলন ঘটিয়েছিলেন তার সুফল গোটা দেশজুড়ে দেখা দিয়েছে। ইভ টিজিং প্রতিরোধই নয় তারুণ্যের জীবননাশ করা মাদকবিরোধী যুদ্ধ যুব সমাজকে নতুন স্বপ্নের আলোই দেখায়নি রীতিমতো তরুণ সমাজের অকুণ্ঠ সমর্থন লাভ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জঙ্গিবাদ সন্ত্রাসবাদ বিরোধী জিরো টলারেন্স নীতি তারুণ্যকে নির্ভার করেছে, নিরাপদ করেছে, স্বস্তি দিয়েছে। এ ছাড়া ছাত্র-ছাত্রীদের বিনামূল্যে পাঠ্যবই, ছাত্রীদের বিনামূল্যে শিক্ষা এমনকি নিম্ন আয়ের মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ছেলেমেয়েদের উচ্চশিক্ষালাভ ফ্রি করে দিয়ে তাদের মন জয় করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্কুল-কলেজ পর্যায়ে ব্যাপক অবকাঠামোর উন্নয়ন ঘটেছে। এমনকি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও অসচ্ছল ছাত্র-ছাত্রীদের বেতন হ্রাসের নির্দেশনা দিয়ে আইন তৈরি করেছেন। এককথায় বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার তাঁর দশ বছরের শাসনামলে দেশকে উন্নয়নের রোলমডেল হিসেবে বিশ্ব দরবারে প্রতিষ্ঠিত করে তারুণ্যকে আকাশ ছোঁয়া বাস্তবভিত্তিক স্বপ্ন দেখিয়ে তাদের হৃদয় জয় করেছেন।

সর্বশেষ খবর