শনিবার, ১৭ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

নরসিংদীর চরে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে নিহত ৪

নরসিংদী প্রতিনিধি

নরসিংদীর চরে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে নিহত ৪

আওয়ামী লীগের সংঘর্ষে নিহতের স্বজনের আহাজারি

নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার চরাঞ্চল বাঁশগাড়ি ও নীলক্ষায় আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের সময় গোলাগুলিতে ৪ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে একজন এসএসসি পরীক্ষার্থীও রয়েছে। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়েছেন আরও ১০ জন। আহতের সংখ্যা সব মিলিয়ে অর্ধশতাধিক। গতকাল ভোরে এবং দুপুরে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

নিহতদের মধ্যে রয়েছেন নীলক্ষার সোহরাব মিয়া (৩০), স্বপন (২৭) ও অজ্ঞাত পরিচয় একজন। বাঁশগাড়িতে নিহতদের মধ্যে রয়েছে এসএসসি পরীক্ষার্থী তোফায়েল রানা (১৬)।

নিহতের স্বজন ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বাঁশগাড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত হাফিজুর রহমান সাহেদ সরকারের সমর্থক ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য এবং সাবেক চেয়ারম্যান প্রয়াত সিরাজুল হকের সমর্থকদের মধ্যে বিরোধ চলছিল। এর ধারাবাহিকতায় আগেও দুই পক্ষের হামলা ও পাল্টা হামলায় চেয়ারম্যান সিরাজুল হকসহ একাধিক নিহতের ঘটনা ঘটে। পুলিশ জানায়, গতকাল সকালে বাঁশগাড়ি গ্রামের বালুমাঠ এলাকায় বর্তমান চেয়ারম্যান আশরাফুল হক ও বাবুল মেম্বারের সমর্থক এবং প্রয়াত হাফিজুর রহমান সাহেদ সরকারের সমর্থক জামাল, জাকির ও সুমনের লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে ঘটনাস্থলেই গুলিবিদ্ধ হয়ে এসএসসি পরীক্ষার্থী তোফায়েল রানা নিহত হয়। গুলিবিদ্ধ হন পেয়েরাকান্দি গ্রামের সফর আলীর দুই ছেলে সুমন মিয়া (২৮), মামুন মিয়া (২৫) ও মির্জাচর গ্রামের আবদুল খালেকের ছেলে সুমন (২৬)-সহ ৭ জন। পরে তাদের নরসিংদী সদর হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ ৩ জনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। সংঘর্ষে আরও অনেকে আহত হয়েছেন। নিহত এসএসসি পরীক্ষার্থী তোফায়েল রানার বাবা আবদুল্লাহ ফকির বলেন, ‘ঝগড়া-বিবাদের জন্য এলাকা ছেড়ে পরিবার নিয়ে নরসিংদী চলে এসেছি। ছেলে পরীক্ষার খোঁজখবর নিতে গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিল। সেখানে দুই পক্ষের গোলাগুলির মাঝে পড়ে তাকে প্রাণ হারাতে হলো। এভাবে আর কত বাবার বুক খালি হলে থামবে বাঁশগাড়ির এই রক্তক্ষয়ী বিবাদ? আমি ছেলে হত্যার বিচার চাই।’ এদিকে আরেক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার নীলক্ষার গোপীনাথপুর বীরগাঁও কান্দাপাড়া গ্রামে। এখানে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে সোহরাব মিয়া (৩০) ঘটনাস্থলেই নিহত হন। আহত হন অন্তত ১০ জন। গতকাল বেলা ১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। নিহত সোহরাব মিয়া একই এলাকার ওসমান মিয়ার ছেলে। এ ছাড়া আরেকজন নিহত স্বপন একই ইউনিয়নের গোপীনাথপুর গ্রামের সোবহান মিয়ার ছেলে। নিহত আরেকজনের নাম-পরিচয় তাত্ক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। পুলিশ জানায়, দীর্ঘদিন ধরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে নীলক্ষা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হক সরকার ও বর্তমান চেয়ারম্যান তাজুল ইসলামের সমর্থকদের মধ্যে বিরোধ ছিল। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল দুপুরে পূর্বপরিকল্পিতভাবে আবদুল হক সরকারের সমর্থকদের ওপর হামলা চালায় তাজুল ইসলাম সরকারের সমর্থকরা। আবদুল হক সরকার ও তাজুল ইসলাম সরকার স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়। হামলার এক পর্যায়ে তাজুল ইসলামের সমর্থক সোহরাব মিয়া ঘটনাস্থলেই মারা যান। গুরুতর আহতাবস্থায় হাসপাতালে নেওয়ার পর স্বপন (২৭) মারা যান। রায়পুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মহসিন-উল কাদির বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। পৃথক দুটি ঘটনাই আধিপত্য বিস্তারের জের ধরে ঘটেছে। নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাকির হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, আধিপত্য বিস্তারের ঘটনাকে কেন্দ্র বাঁশগাড়ি, নীলক্ষাসহ কয়েকটি গ্রামে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। এসব ঘটনায় আমরা ৩ জন নিহত হওয়ার খবর পেয়েছি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ কাজ করছে।

সর্বশেষ খবর