শিরোনাম
রবিবার, ১৮ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা
আইনজীবী সমাবেশে ড. কামাল

ভোট বর্জন নয়, কেন্দ্র পাহারা দিন

নিজস্ব প্রতিবেদক

ভোট বর্জন নয়, কেন্দ্র পাহারা দিন

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করা হবে না বলে জানিয়েছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন। তিনি বলেছেন, একবার নির্বাচন বর্জন করে খেসারত দিতে হয়েছে। তাই কোনো অবস্থাতেই এবার নির্বাচন বর্জন করবে না জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।

গতকাল বিকালে ঢাকায় আইনজীবী মহাসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে ড. কামাল হোসেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করেন। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি প্রাঙ্গণে জাতীয় আইনজীবী ঐক্যফ্রন্ট এই কর্মসূচির আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন। প্রবীণ রাজনীতিক ড. কামাল হোসেন বলেন, এ সরকারের আমলে বিচার বিভাগের ওপর আঘাত এসেছে। বিচার বিভাগের ওপর হস্তক্ষেপ হচ্ছে। নিম্ন আদালতের বিচারকদের দায়িত্ব পালন অসম্ভব করে দেওয়া হচ্ছে। সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাকে ষোড়শ সংশোধনীর রায় দেওয়া নিয়ে শাস্তি পেতে হয়েছে। ওই রায়ে সাতজন বিচারপতি স্বাক্ষর করলেও একজনকে শাস্তি পেতে হলো। তিনি বলেন, নির্বাচন ছাড়াই ১৫৪ জনকে সংসদ সদস্য করা হয়েছে। এ নিয়ে আবার  গেজেটও প্রকাশ করা হয়েছে। আমি মনে করি এই গেজেট করে তারা প্রেসের কাগজ নষ্ট করেছেন। ড. কামাল বলেন, ওরা যতই ১০ নম্বরি করুক না কেন, আমরা সবাই ভোট দিতে যাব। হাজার হাজার মানুষ ভোট দিতে যাবে। দেশের সব  ভোটারকে আগামী নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র ঘিরে পাহারা দিতে হবে। কেউ যাতে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে প্রার্থী না হন, টাকা দিয়ে ভোট কিনে মেম্বার হয়েছে কিনা, তা সংঘবদ্ধ হয়ে প্রতিহত করতে হবে। জনগণের বিশ্বাস করতে হবে আমরাই সব ক্ষমতার উৎস, আমরাই দেশের প্রকৃত মালিক। তিনি বলেন, এবারের নির্বাচনে দুই কোটি তরুণ ভোটার। এরাই  দেশের মালিক। নির্বাচন ঘিরে কিছু গুণ্ডাপাণ্ডা থাকবে। তবু আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। ঘরে ঘরে মানুষকে গিয়ে  বোঝাতে হবে। দশম সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে ড. কামাল বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর দ্রুত আরেকটি নির্বাচন দেওয়ার কথা সরকারের পক্ষ থেকে বলা হলেও পাঁচ বছরেও সে নির্বাচন হয়নি। এই পাঁচ বছরে আমরা ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছি। সংবিধানের মূলমন্ত্র গণতন্ত্র। কিন্তু এই পাঁচ বছরে কি আমরা  সেই গণতন্ত্র দেখতে পেয়েছি? নির্বাচন দেবে বলে তারা ভাঁওতাবাজি করেছে। ভাঁওতাবাজিতে পুরস্কার পদ্ধতি থাকলে তারা মেডেল পাওয়ার যোগ্য হতো। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি প্রসঙ্গে কামাল হোসেন বলেন, তিনি  দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তার কারামুক্তি চাই। যেখানে এতদিন পর একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হতে যাচ্ছে সেখানে খালেদা জিয়াকে, একটি বড় দলের নেত্রীকে পরিত্যক্ত জেলে রাখা হয়েছে। তাকে মুক্তি দিতে হবে। তাকে ছাড়াও হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে কারাগারে রেখে নির্বাচনে বৈষম্য সৃষ্টি করা হচ্ছে। এতে গণতন্ত্র ফিরে আসবে না, সংবিধান সমুন্নত থাকবে না। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার প্রসঙ্গ তুলে ড. কামাল আরও বলেন, সরকার সংবিধানের কথা বললে আমার হাসি পায়। এই সরকারের ক্ষমতায় থাকাই অসাংবিধানিক। দিনে-রাতে নিজেরা সংবিধান লঙ্ঘন করছে। আর আমাদের সংবিধান দেখাচ্ছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমি জোর গলায় বলতে পারি, সম্পূর্ণ সরকারি চাপের মুখে খালেদা জিয়াকে বেআইনিভাবে সাজা দেওয়া হয়েছে। আইন মন্ত্রণালয় থেকে যা নির্দেশ দেওয়া হয়, নিম্ন আদালতের বিচারকরা তা পালন করেন। আমি আজ দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে চাই, এই ব্যবস্থার পরিবর্তন হতে হবে। বিচার বিচারের মতো হতে হবে। রাজনৈতিক বিবেচনায় যেন কোনো ব্যক্তির বিচার না করা হয়, সে জন্য আপনাদের এগিয়ে আসতে হবে। তিনি বলেন, আমরা বিচার বিভাগের দিকে তাকিয়ে থাকি। যখন সরকারের দ্বারা আক্রান্ত হই তখন এই মহান ভবনে আসি, একটু আশ্রয়ের আশায়। কিন্তু বিচার বিভাগে সেই আশ্রয়টুকুও আমাদের আজ নেই। উচ্চ আদালতের দেওয়া জামিনের মেয়াদ শেষে নিম্ন আদালতে গেলে সেখানে আর জামিন হয় না। আমাদের বহু নেতা-কর্মী এ অবস্থার সম্মুখীন। এর পরিবর্তন আনতে হবে। মির্জা ফখরুল বলেন, আমি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে বলতে চাই, দেশের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা এই বন্ধ্যত্বের যুগে, যখন কেউ কোনো প্রতিবাদ করে না, সত্য বলে না, তখন এই মানুষটি দাঁড়িয়েছিলেন, প্রতিবাদ করেছিলেন। তিনি সত্য রায় দিয়েছিলেন, সত্য বলেছিলেন। এ জন্য সরকার তাকে জোরজবরদস্তি করে দেশ থেকে বের করে দিয়েছে। তবে আইনজীবীরা তাদের বক্তব্যে বিচারপতি সিনহার কথা উল্লেখ না করায় মর্মাহত হয়েছেন বলেও উল্লেখ করেন বিএনপি মহাসচিব। বিচার বিভাগের স্বাধীনতার জন্য আইনজীবীদের আন্দোলনে নামার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত না হলে মানুষ আইনের শাসন থেকে বঞ্চিত হবে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, মূল যে কারণে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছিলাম, আজ স্বাধীনতার সেই চেতনা আর নেই। এই সরকারের আমলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, আইনের শাসন, মৌলিক অধিকার হারিয়েছি। দেশের মানুষ এই সরকারের পরিবর্তন দেখতে চায়। জাতীয় আইনজীবী ঐক্যফ্রন্টের সদস্য সচিব মাহবুব উদ্দিন খোকনের সঞ্চালনা এবং আহ্বায়ক জয়নুল আবেদীনের সভাপতিত্বে মহাসমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, খন্দকার মাহবুব হোসেন, মীর মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন, সুব্রত চৌধুরী, নিতাই রায় চৌধুরী, মোয়াজ্জেম  হোসেন আলাল, মজিবর রহমান সরোয়ার, বদরুদ্দোজা বাদল প্রমুখ। অনুষ্ঠানে দেশের ৫৪টি জেলার আইনজীবী সমিতির প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। সংগীত পরিবেশন করেন সংগীতশিল্পী বেবী নাজনীন।

সর্বশেষ খবর