সোমবার, ১৯ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

আওয়ামী লীগের প্রার্থী চূড়ান্ত

এবার দরকষাকষি শরিকদের সঙ্গে, বড় ধরনের পরিবর্তন নেই

রফিকুল ইসলাম রনি

আওয়ামী লীগের প্রার্থী চূড়ান্ত

দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন চূড়ান্ত করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন থাকছে না এবার। তবে কেন্দ্রীয় বেশ কয়েকজন নেতাসহ মন্ত্রী-এমপি বাদ পড়েছেন। এ তালিকা সর্বোচ্চ ৫০ জনের কমবেশি হতে পারে। এখন চূড়ান্ত করা হচ্ছে জোটের আসনগুলো। চলছে দরকষাকষি। আজ রাতে গণভবনে জোট শরিকদের নিয়ে আনুষ্ঠানিক বৈঠকে বসছেন মহাজোট প্রধান, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জোটের প্রার্থী তালিকা রাতে চূড়ান্ত করা হলেও আনুষ্ঠানিক ঘোষণার জন্য সময় নেওয়া হতে পারে। দলের নীতিনির্ধারণী ফোরামের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চূড়ান্ত করতে ধারাবাহিক বৈঠক করেছেন দলের সংসদীয় বোর্ডের সদস্যরা। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিজস্ব দুটি জরিপ, দল পরিচালিত একটি এবং তিন সংস্থার রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করেই চূড়ান্ত করা হয়েছে দলের মনোনয়ন তালিকা। বাদ পড়েছেন আওয়ামী লীগের কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা, বর্তমান এমপি ও মন্ত্রিসভার কয়েকজন সদস্য। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। এখন জোট শরিকদের সঙ্গে আসন বণ্টন নিয়ে বৈঠক হবে।’ কতজন বাদ পড়েছেন— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এবারের দলের মনোনয়ন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন ৫০-৬০ জনের মতো।’ এই তালিকায় কী কেন্দ্রীয় নেতা ও মন্ত্রিসভার সদস্য রয়েছেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পুরনোদের বিদায় না করলে কীভাবে নতুনরা স্থান পাবে? বাদ পড়াদের তালিকায় কেন্দ্রীয় নেতা ও মন্ত্রিসভার সদস্যও আছেন।’

সূত্রমতে, ব্যাপক যাচাই-বাছাই করে আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা হলেও এই মুহূর্তে ঘোষণা করা হচ্ছে না। দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করতে ঐক্যফ্রন্টের দিকে তাকিয়ে ক্ষমতাসীন দলটি। ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী তালিকা দেখে শেষ মুহূর্তে আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালিকায় কিছুটা কাটছাঁট হতে পারে। সংসদীয় বোর্ডের একাধিক সদস্য জানান, জরিপে যেসব এমপির অবস্থা খারাপ ছিল তাদের অনেককেই ডেকে সতর্ক করা হয়েছিল। অনেকেই অবস্থার উত্তরণ করতে সক্ষম হয়েছেন।

আওয়ামী লীগের প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে জানিয়ে  গতকাল সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুুল কাদের বলেন, ‘তালিকা প্রায় চূড়ান্ত। তবে ফাইনাল ফিনিংশটা বাকি আছে। আমাদের এলায়েন্সের সঙ্গে আলোচনা করে ফাইনাল করা হবে।’ এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমরা নমিনেশনটা দিয়েছি জরিপ রিপোর্টের ভিত্তিতে। যাদের ছয় মাস আগেও খারাপ ছিল তারা হয়তো এখন ভালো হয়েছে, তাই তাদের নমিনেশন দেওয়ার বিষয়ে চূড়ান্ত করা হয়েছে। তবে আগে যারা জনপ্রিয় ছিল তাদের মধ্য  থেকে বাদ পড়েছে কম।’ জানা গেছে, গত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কেন্দ্রীয় নেতা, মন্ত্রীসহ মোট ৫০ জন এমপি মনোনয়ন থেকে বাদ পড়েন।  এবারও সেই ধারাবাহিকতাই থাকছে। বাদ পড়া এমপি-মন্ত্রীদের মধ্যে রয়েছেন যারা দলকে নানাভাবে বিতর্কিত করেছেন। নিজেরা নানা সময়ে আলোচিত ও সমালোচিত হয়েছেন। দলের সংসদীয় বোর্ডের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রংপুর, রাজশাহী, খুলনা, ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগে পরিবর্তন বেশি হয়েছে। সিলেট ও খুলনাতেও কিছু পরিবর্তন এসেছে। 

জাপাকে নৌকায় চড়াতে আজ বৈঠক : মহাজোটের প্রধান শরিক জাতীয় পার্টি। একাদশ সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি তাদের নিজস্ব প্রতীক লাঙ্গল নিয়ে ভোট করতে চায়। কিন্তু জোটের প্রধান শরিক আওয়ামী লীগ চায় ‘জাতীয় পার্টির ভোটব্যাংক’ ছাড়া অন্য আসনগুলোয় নৌকা নিয়ে নির্বাচন করুক। বিশেষ করে বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলে লাঙ্গল করলে আপত্তি থাকবে না আওয়ামী লীগের। বাকি অন্য জেলায় মহাজোটের প্রতীক নৌকা নিয়ে নির্বাচন করুক। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সংসদীয় বোর্ডের একাধিক প্রভাবশালী সদস্য জানালেন, আজ (সোমবার) রাতে শরিকদের সঙ্গে বৈঠকে জাতীয় পার্টিকে কিছু আসনে নৌকা নিয়ে নির্বাচন করার কথা বলা হবে। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতীক একটা ফ্যাক্টর। উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি জেলা ছাড়া জাতীয় পার্টির অবস্থান ও নিজস্ব ভোট ব্যাংক কোথাও নেই। জাতীয় পার্টিকে যেসব আসন ছাড় দেওয়া হবে— সেসব আসনে নৌকার প্রার্থী থাকবে না। নৌকার ভোটার অন্য প্রতীকে ভোট দিতে কেন্দ্রে যেতে অনীহা দেখাতে পারেন। সে কারণে নৌকা নিয়ে কিছু আসনে নির্বাচন করতে তাদের বলা হবে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোটের শরিকরা নৌকা নিয়ে নির্বাচন করবেন এমন সিদ্ধান্ত আগেই নির্বাচন কমিশনকে জানানো হয়েছে। মহাজোটের সঙ্গে যুক্ত হতে দরকষাকষি করছে বিকল্পধারার নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্ট। তারাও নৌকা চড়ে সংসদ নির্বাচন করতে চান। আর ১৪ দলের শরিকরা যারা আওয়ামী লীগের নৌকা পেতে চান তারা আজ রাতে যাচ্ছেন গণভবনে। বৈঠক করবেন জোট প্রধান আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ রাতেই চূড়ান্ত হবে জোট শরিকদের আসন। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী সূত্র জানিয়েছে, মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টিকে সর্বোচ্চ ৪৫টি, ওয়ার্কার্স পার্টিকে ৪-৫টি, জাসদ দুই অংশকে সব মিলে ৫টি, তরিকতকে ১টি, জেপিকে সর্বোচ্চ ২টি, যুক্তফ্রন্টকে ৩-৪টি, জাকের পার্টিকে ১টিসহ অন্যান্য দলকে ২টি আসন ছাড় দেওয়ার চিন্তা-ভাবনা রয়েছে। মহাজোট শরিকদের কত আসন দেওয়া হবে এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, আমাদের নেত্রী যেটা বলেছেন তা হলো ৬৫ থেকে ৭০টি আসন শরিকরা পাবেন। আলোচনা করে যদি মনে হয় উইনিবল প্রার্থী তাদের বেশি তাহলে সেটা বাড়ানো যেতে পারে।

 

সর্বশেষ খবর