মঙ্গলবার, ২০ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

বিদ্যুতে শেখ হাসিনার বিস্ময়কর সাফল্য

জিন্নাতুন নূর

বিদ্যুতে শেখ হাসিনার বিস্ময়কর সাফল্য

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের গত দুই মেয়াদে বিদ্যুৎ খাতে বিস্ময়কর সাফল্য অর্জন করেছে বাংলাদেশ। তার দূরদর্শী নেতৃত্বে বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নে নেওয়া হয়েছে মহাপরিকল্পনা। আর সারা দেশে শতভাগ ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ নিশ্চিতে বিদ্যুৎ খাতে চলছে বিশাল কর্মযজ্ঞ। আওয়ামী লীগ সরকার ২০২১ সালের মধ্যে দেশের প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এ লক্ষ্য পূরণের আর বেশি দেরিও নেই। ‘শেখ হাসিনার উদ্যোগ-ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ’ এ স্লোগানে সরকারের বিদ্যুৎ বিভাগ ও পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) কর্তৃপক্ষ প্রত্যন্ত গ্রামগুলো আলোকিত করার কাজ করে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন আগামী বছরই দেশের ৯৫ শতাংশ মানুষ বিদ্যুতের সুবিধা ভোগ করতে পারবে। দেশের শতভাগ বিদ্যুতায়নের বিষয়টি আর স্বপ্ন থাকছে না। এটা শিগগিরই হতে যাচ্ছে বাস্তব। বিদ্যুৎ বিভাগ কর্তৃপক্ষ জানায়, বর্তমানে      দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা ২০ হাজার ৪৩০ মেগাওয়াট (ক্যাপটিভ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ)। মানে এক দশকে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা বেড়েছে চার গুণ।

অথচ আওয়ামী লীগের ক্ষমতা গ্রহণের আগে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে ২০০১ থেকে ২০০৬ সালের অক্টোবর পর্যন্ত মোট ১ হাজার ২৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সংযোজিত হয়। এমনকি ২০০৯ সালের আগে দেশে উৎপাদিত হতো সর্বোচ্চ ৩ হাজার ২৬৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। যদিও গ্রীষ্মকালে সে সময় ৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা ছিল। কিন্তু এর বিপরীতে সরবরাহ ছিল মাত্র ৩ হাজার ২১৯ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে পার্থক্য বেশি হওয়ায় তখন সারা দেশে ব্যাপক পরিমাণ লোডশেডিং হতো। এতে ব্যাহত হতো শিল্প ও কৃষির উৎপাদন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে এক প্রশ্নের উত্তরে জানান, ২০০৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই বিদু্যুৎ খাতের উন্নয়নের জন্য আওয়ামী লীগ সরকার তত্ক্ষণাৎ স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করে। এ পরিকল্পনার আওতায় ২০২১ সালের মধ্যে ‘সবার জন্য বিদ্যুৎ’ সুবিধা নিশ্চিত করতে উৎপাদন ক্ষমতা ২৪ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করার লক্ষ্যে কাজ চলছে।

দেশের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ রেকর্ড পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয় গত ১৯ সেপ্টেম্বর (১১ হাজার ২৯৩ মেগাওয়াট)। শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতায় আসার পর একের পর বিদ্যুৎ উৎপাদনে এক রেকর্ড তৈরি করে যাচ্ছে। সামগ্রিকভাবে বিদ্যুৎ খাতেরও বেশ উন্নতি হয়েছে। এই সময়ে বিদ্যুতের সুবিধাপ্রাপ্ত জনগোষ্ঠী ও গ্রাহক পাল্লা দিয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। কমেছে বিদ্যুতের সিস্টেম লসের হার। বৃদ্ধি পেয়েছে মাথাপিছু বিদ্যুৎ উৎপাদন হার। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের যুগোপযোগী বাস্তবসম্মত টেকসই পরিকল্পনা ও উদ্যোগ গ্রহণে বিদ্যুৎ খাতে নজিরবিহীন এ উন্নয়ন হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে ২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত দেশে ৮৭টি নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়। দেশে মোট বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সংখ্যা ১২৬টি। আর বর্তমানে দেশের মোট ৯২.৫০ শতাংশ মানুষ বিদ্যুতের সুবিধাভোগী। বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নের ফলে গত নয় বছরে সেচ সংযোগ দেওয়ার হার বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩০ হাজার। বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করা হচ্ছে। বর্তমানে ভারতের সরকারি-বেসরকারি খাত থেকে ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হচ্ছে। এ ছাড়া আঞ্চলিক সহযোগিতায় সার্কভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে ক্রসবর্ডার বিদ্যুৎ আমদানির পরিমাণ আরও বৃদ্ধি করতে দ্বিপক্ষীয় উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এজন্য নেপালের সঙ্গেও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। বিদ্যুতের ভবিষ্যৎ চাহিদা বিবেচনায় সারা দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি উন্নত করা হচ্ছে বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা ও সেবার মান। এ ছাড়া বিদ্যুতের মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ক্ষতিগ্রস্ত জনগণের জন্যও পুনর্বাসন প্রকল্পের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর আওতায় পটুয়াখালীর পায়রা ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের পাশেই ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ‘স্বপ্নের ঠিকানা’ নামে আবাসন ব্যবস্থা করা হয়েছে। সরকারের মহাপরিকল্পনার অংশ হিসেবে ২০২১ সালের মধ্যে ২৪ হাজার ও ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রাও ঠিক করা হয়েছে। সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রণালয় ২০২১ সালের মধ্যে ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের মাধ্যমে সবার জন্য বিদ্যুৎ সুবিধা নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে। এটি বাস্তবায়নে ৬ হাজার কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন ও ১ লাখ কিলোমিটার বিতরণ লাইন এবং প্রয়োজনীয় উপকেন্দ্র নির্মাণ ও এর ক্ষমতা বৃদ্ধি করা হবে। এ ছাড়া এই লক্ষ্যে আঞ্চলিক গ্রিডে সাড়ে ৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হবে। ৬ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ ও ২ হাজার ক্ষমতার পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আর অত্যন্ত দুর্গম, চর ও দ্বীপাঞ্চলের বিদ্যুিবহীন এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সোলার প্যানেল স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে প্রত্যন্ত এলাকায় ৪৫ লাখ মানুষ সৌরবিদ্যুতের সুবিধা পাচ্ছে। বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত মোট ৩৪টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু করা হবে। ৪ হাজার ৯১৭ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য এরই মধ্যে দরপত্র প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আশা করা হচ্ছে ২০১৮ থেকে ’২৩ সালের মধ্যে এ কেন্দ্রগুলো উৎপাদন শুরু করবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগেই স্বাধীনতার ৪৫ বছর পর বিদ্যুৎ পায় ছিটমহলবাসী। এতে ছিটমহলের ৩০৮ কিলোমিটার বিদ্যুৎ লাইন নির্মাণের ফলে ১১ হাজার ৮৮২টি পরিবার বিদ্যুৎ পায়। সম্প্রতি সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে বঙ্গোপসাগরের দ্বীপাঞ্চল সন্দ্বীপও বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হয়েছে। এসব সম্ভব হয়েছে শেখ হাসিনার দূরদর্শিতায়।

পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, শতভাগ বিদ্যুতায়নের প্রকল্পটি বাস্তবায়নে আরও এক বছর লাগবে। আশা করা হচ্ছে, আগামী বছরের শেষের দিকে দেশের সব উপজেলায় বিদ্যুৎ পৌঁছে যাবে। এ বিষয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা জাতীয় নির্বাচনের আগেই দেশের শতভাগ এলাকা বিদ্যুতায়নের লক্ষ্যে কাজ করলেও কিছু অঞ্চলে যেমন চরাঞ্চল, পার্বত্য এলাকায় গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ পৌঁছাতে কিছুটা সময় লাগবে। তবে বিকল্প পথে এসব এলাকায় বিদ্যুৎ পৌঁছানোর জন্য আমরা কাজ করছি। এজন্য ৭০০ কোটি টাকার প্রকল্পও গ্রহণ করেছি। পার্বত্য এলাকায় সৌরবিদ্যুতের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে সন্দ্বীপে সাবমেরিন দিয়ে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়া অফ গ্রিড এলাকা হাতিয়ায় বিদ্যুতের জন্য জেনারেটরের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মনপুরায় “সূর্যগ্রাম” নামক প্রকল্প দিয়ে সূর্যের আলো থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রকল্প নেওয়া হবে।’

সরকারের বিদ্যুৎ বিভাগ, পাওয়ার সেল, বিভিন্ন কোম্পানি ও সংস্থার কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, ২০১৭-১৮ মেয়াদে বিদ্যুৎ সুবিধাপ্রাপ্ত গোষ্ঠী ৮০ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৯০ শতাংশ অতিক্রম করে। আর এ সুবিধা পৌঁছে দিতে ২৭ হাজার কিলোমিটার নতুন বিতরণ লাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে পল্লী বিদ্যুতের সমিতিগুলো প্রতি মাসে ৩ থেকে সাড়ে ৩ লাখ নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ দিচ্ছে। আগে বিদ্যুতের মিটার পাওয়া কষ্টকর হলেও শতভাগ বিদ্যুতায়ন কর্মসূচির পর এখন সংযোগ প্রদান দ্রুত ও সহজতর হয়েছে।

 

সর্বশেষ খবর