মঙ্গলবার, ২০ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা
পূর্ণাঙ্গ রায়ে আদালত

সাত খুন ছিল সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্রমূলক

নিজস্ব প্রতিবেদক

নারায়ণগঞ্জের বহু আলোচিত সাত খুন মামলায় ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে হাই কোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়েছে। রায়ে আদালত বলেছে হত্যাকাণ্ডটি ছিল সুপরিকল্পিত ও ষড়যন্ত্রমূলক। নূর হোসেন হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড। গতকাল হাই কোর্টের ওয়েবসাইটে দুই মামলায় ১ হাজার ৫৬৪ পৃষ্ঠার রায় প্রকাশ করা হয়। এর আগে গত বৃহস্পতিবার রায় প্রদানকারী বিচারপতি ভবানী প্রসাদ সিংহ ও বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম রায়ে স্বাক্ষর করেন।

ওয়ার্ড কাউন্সিলর নূর হোসেন, র‌্যাব-১১ এর সাবেক অধিনায়ক তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, সাবেক র‌্যাব কর্মকর্তা আরিফ হোসেন, র‌্যাবের ক্যাম্প কমান্ডার মাসুদ রানাসহ ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে গত বছরের ২২ আগস্ট এ রায় দেয় হাই কোর্ট। রায়ের পর্যবেক্ষণে হাই কোর্ট বলেছে, এই চাঞ্চল্যকর মামলার আসামিরা যে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন তাতে উঠে এসেছে যে, এই হত্যাকাণ্ড ছিল সুপরিকল্পিত ও ষড়যন্ত্রমূলক। আর্থিক লেনদেন হয়েছে নূর হোসেনের সঙ্গে। নূর হোসেন হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড। তার সঙ্গে ছিলেন তারেক সাঈদ, আরিফ ও মাসুদ রানা। আসামিরা তাদের অপহরণের পর হত্যা করে লাশ নদীতে ফেলে দেয়। রায়ে আদালত বলেছে, কিছু উচ্ছৃঙ্খল র‌্যাব সদস্যের কারণে এ বাহিনীর গৌরবোজ্জ্বল অর্জন ম্লান হতে পারে না। তাদের সন্ত্রাসবিরোধী গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা ধূলিসাৎ হতে পারে না। কিন্তু এ ঘটনায় বাহিনীর কতিপয় সদস্যের শয়তানি প্রবৃত্তি মানবসভ্যতার মধ্যে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। যে সাতজনকে হত্যা করা হয়েছে, তাদের মৃত্যুযন্ত্রণা ছিল ভয়াবহ ও অকল্পনীয়। ওই র‌্যাব সদস্যরা এতটাই নির্দয় ছিলেন যে তাদের হত্যার পর তলপেট ছুরি দিয়ে কেটে বস্তাবন্দী করা হয়। প্রতিটি বস্তার সঙ্গে ১০টি ইট বেঁধে দেওয়া হয়, যাতে লাশ নদীর পানিতে তলিয়ে যায়। এ নৃশংসতায় প্রতীয়মান হয়, তারা মরদেহের ওপর কতটা নির্দয় ছিলেন। মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকা আসামিরা হলেন— নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) সাবেক কাউন্সিলর নূর হোসেন এবং র‌্যাব-১১ এর চাকরিচ্যুত তিন কর্মকর্তা সাবেক অধিনায়ক লে. কর্নেল (অব.) তারেক সাঈদ মুহাম্মদ, মেজর (অব.) আরিফ হোসেন ও লে. কমান্ডার (অব.) মাসুদ রানা। আরও ফাঁসির আদেশ বহাল ১১ আসামি হলেন— র‌্যাবের চাকরিচ্যুত সাবেক হাবিলদার মো. এমদাদুল হক, ল্যান্সনায়েক হীরা মিয়া, আরওজি-১ এ বি মো. আরিফ হোসেন, ল্যান্সনায়েক বেলাল হোসেন, সিপাহি আবু তৈয়্যব আলী, কনস্টেবল শিহাব উদ্দিন, এসআই পূর্ণেন্দু বালা, সৈনিক আবদুল আলীম, সৈনিক মহিউদ্দিন মুন্সী, সৈনিক আলামিন শরীফ ও সৈনিক তাজুল ইসলাম। তাদের মধ্যে মহিউদ্দিন মুন্সী, আলামিন শরীফ ও তাজুল ইসলাম পলাতক। অন্যদিকে সাজা কমে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ১১ আসামি হলেন— র‌্যাবের চাকরিচ্যুত সাবেক সিপাহি আসাদুজ্জামান নূর ও সার্জেন্ট এনামুল কবির এবং নূর হোসেনের ৯ সহযোগী মূর্তজা জামান চার্চিল, আলী মোহাম্মদ, মিজানুর রহমান দিপু, আবুল বাশার, রহম আলী, জামাল উদ্দিন সরদার, সেলিম, সানাউল্লাহ সানা ও শাহজাহান। তাদের মধ্যে সেলিম, সানাউল্লাহ সানা ও শাহজাহান পলাতক। এর আগে বিচারিক আদালতে ২০১৭ সালের ১৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জে আলোচিত সাত খুনের মামলায় তৎকালীন কাউন্সিলর নূর হোসেন, র‌্যাবের কর্মকর্তা লে. কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদসহ ২৬ আসামিকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেয় বিচারিক আদালত। বাকি নয় আসামির সবাইকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল বেলা দেড়টার দিকে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড থেকে অপহৃত হন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজন। তিন দিন পর ৩০ এপ্রিল শীতলক্ষ্যা নদীতে একে একে ভেসে ওঠে ছয়টি লাশ। পরদিন মেলে আরেকটি লাশ। নিহত অন্যরা হলেন— নজরুলের বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, লিটন, গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম ও চন্দন সরকারের গাড়িচালক মো. ইব্রাহীম। ঘটনার এক দিন পর কাউন্সিলর নজরুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বাদী হয়ে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা (পরে বহিষ্কৃৃত) নূর হোসেনসহ ছয়জনের নাম উল্লেখ করে ফতুল্লা মডেল থানায় মামলা করেন।

সর্বশেষ খবর