বুধবার, ২১ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

আজ সশস্ত্র বাহিনী দিবস

ত্যাগে ও সেবায় বিশ্বনন্দিত

শিমুল মাহমুদ

আজ সশস্ত্র বাহিনী দিবস

জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে বিশ্বশান্তি রক্ষায়, ত্যাগে ও সেবায় গত ৩০ বছর ধরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী। বিশ্বের দেশে দেশে সংঘাত, হানাহানি রোধে ভূমিকা রাখার পাশাপাশি নেতৃত্বের দক্ষতায়, পেশাগত নৈপুণ্যে আরও চৌকস হয়ে উঠছেন তিন বাহিনীর সদস্যরা। শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি দেশের জন্য বয়ে আনছেন বিরল সম্মান ও মর্যাদা। বাড়তি অর্জন হিসেবে নিয়ে আসছেন বিপুল পরিমাণ   বৈদেশিক মুদ্রা। বাংলাদেশের একেকজন শান্তিরক্ষী দেশের শুভেচ্ছাদূত হিসেবে কাজ করছেন বিশ্বের অচেনা জনপদে। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার গত ১০ বছরের প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ও বাংলাদেশ নৌবাহিনীর আধুনিকায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। সরকারের ফোর্সেস গোল ২০৩০-এর আওতায় তিন বাহিনীর পুনর্গঠন ও আধুনিকায়নে ব্যাপক কার্যক্রম বাস্তবায়ন হচ্ছে। জাতীয় উন্নয়ন অভিযাত্রার সহযোগী হিসেবে এবং দুর্যোগ মোকাবিলা ও পুনর্বাসনে নিরবচ্ছিন্ন ভূমিকা পালন করছে সশস্ত্র বাহিনী। মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে গড়ে ওঠা তিন বাহিনী আজ যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করছে সশস্ত্র বাহিনী দিবস।

সশস্ত্র বাহিনী : সেবা ও ত্যাগের ৩০ বছর : বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে এ বছর পার করছে বিশ্বব্যাপী সেবা ও ত্যাগের ৩০ বছর। গত ৩০ বছরে বাংলাদেশের এক লাখ ৪৯ হাজার ৫৮৮ জন শান্তিরক্ষী (পুলিশসহ) জাতিসংঘের ৫৪টি মিশনে অংশ নিয়েছেন, যার মধ্যে রয়েছেন এক হাজার ২৪২ জন নারী সদস্য। জাতিসংঘের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে ৭ হাজার ২৪৬ জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী বিভিন্ন মিশনে দায়িত্ব পালন করছেন। একক দেশের সংখ্যার দিক দিয়ে এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। ইথিওপিয়া বাংলাদেশের চেয়ে ১ হাজার ১৭৪ জন বেশি শান্তিরক্ষী নিয়োজিত করে তালিকার শীর্ষে আছে। বাংলাদেশের চেয়ে ৫৪৯ জন কম শান্তিরক্ষী নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে আছে ভারত। এর আগে ২০০৭-০৮ সাল থেকে ২০১৪-১৫ পর্যন্ত বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা এই তালিকার শীর্ষে ছিলেন। সে সময় সশস্ত্র বাহিনী থেকে প্রতি বছর গড়ে প্রায় ১০ হাজার শান্তিরক্ষী নিয়োজিত হয়েছিল। ১৯৮৮ সালে প্রথম ইরান-ইরাকে শান্তিরক্ষা মিশনে যোগ দেন সেনাবাহিনীর ১৫ কর্মকর্তা। সেনাবাহিনীর পাশাপাশি পুলিশ বাহিনী ১৯৮৯ সালে জাতিসংঘ পরিবারের সদস্য হয় নামিবিয়া মিশনের মাধ্যমে। ১৯৯৩ সাল থেকে নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনী শান্তিরক্ষা মিশনে অংশ নিয়ে আসছে। এ ছাড়াও কুয়েত পুনর্গঠনে ২৭ বছর ধরে নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। ১৯৯১ সালে উপসাগরীয় যুদ্ধের সময় থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কুয়েতের নিরাপত্তা ও উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ‘অপারেশন কুয়েত পুনর্গঠন’ নামের দ্বিপক্ষীয় চুক্তির আওতায় বর্তমানে ৬ হাজারের বেশি সেনাসদস্য কুয়েতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দায়িত্ব পালন করছেন। বিশ্বশান্তি রক্ষায় গত ৩০ বছরে বাংলাদেশ হারিয়েছে ১৪৬ জন অকুতোভয় শান্তিরক্ষীকে। অন্যদিকে ২০০০ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ১৭ বছরে শান্তিরক্ষা মিশনের মাধ্যমে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আয় হয়েছে ১৬ হাজার ৪৩৮ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। আজ সশস্ত্র বাহিনী দিবস : আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর) জানায়, যথাযথ মর্যাদা ও উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে দেশে আজ সশস্ত্র বাহিনী দিবস উদ্যাপিত হচ্ছে। দেশের সব সেনানিবাস, নৌ ঘাঁটি এবং বিমান বাহিনী ঘাঁটির মসজিদসমূহে দেশের কল্যাণ, সমৃদ্ধি এবং সশস্ত্র বাহিনীর উন্নতি-অগ্রগতি কামনা করে ফজরের নামাজ শেষে বিশেষ মোনাজাতের মধ্য দিয়ে দিবসের কর্মসূচি শুরু হবে। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী সকালে ঢাকা সেনানিবাসের শিখা অনির্বাণে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এরপর সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ, নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদ এবং বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল মাসিহুজ্জামান সেরনিয়াবাত নিজ নিজ বাহিনীর পক্ষ থেকে শিখা অনির্বাণে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। তিন বাহিনী প্রধানরা বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি এবং সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। ‘সশস্ত্র বাহিনী দিবস-২০১৮ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী ঢাকা সেনানিবাসের আর্মি মাল্টিপারপাস কমপ্লেক্সে বীরশ্রেষ্ঠদের উত্তরাধিকারী এবং নির্বাচিত খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের উত্তরাধিকারীদের সংবর্ধনা জানাবেন। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী তিন বাহিনীর ১৩ জনকে শান্তিকালীন পদকে ভূষিত করবেন। দিবসটি উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রী কর্তৃক ঢাকা সেনানিবাসের সেনাকুঞ্জে এক বৈকালিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হবে। এতে সরকারি, বেসরকারি বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার বিশিষ্ট ব্যক্তিরা, স্বাধীনতা যুদ্ধের সব বীরশ্রেষ্ঠের উত্তরাধিকারীরা, স্বাধীনতা যুদ্ধের খেতাবপ্রাপ্ত কর্মকর্তা/তাঁদের উত্তরাধিকারীরা অংশ নেবেন। সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে ২২ নভেম্বর সেনাবহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী প্রধানরা খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা/তাঁদের উত্তরাধিকারীদের সংবর্ধনা দেবেন। ঢাকা ছাড়াও বগুড়া, ঘাটাইল, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, কুমিল্লা, সিলেট, যশোর, রংপুর, খুলনা, বরিশাল এবং রাজেন্দ্রপুর (গাজীপুরসহ) সেনানিবাসে সংবর্ধনার আয়োজন করা হবে। ঢাকার বাইরে দেশের অন্যান্য সেনা গ্যারিসন, নৌজাহাজ/স্থাপনা এবং বিমান বাহিনী ঘাঁটিতেও বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। ঢাকা ছাড়াও খুলনা, চাঁদপুর, বরিশাল ও চট্টগ্রামে বিশেষভাবে সজ্জিত নৌবাহিনী জাহাজসমূহ আজ বেলা ২টা হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সর্বসাধারণের পরিদর্শনের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে টিভি চ্যানেলগুলো বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচার এবং জাতীয় দৈনিকগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে।

সেনানিবাসে যান চলাচল সীমিত : আইএসপিআর জানায়, সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে আজ ঢাকা সেনানিবাসের শহীদ জাহাঙ্গীর গেট থেকে স্টাফ রোড পর্যন্ত যানজটমুক্ত রাখতে সেনানিবাসে অবস্থানকারী ব্যক্তিরা এবং আমন্ত্রিত অতিথিদের বহনকারী যানবাহন ছাড়া সব যানবাহন চালকদের সকাল ৭টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত এবং বেলা ১২টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত সেনানিবাস এলাকা দিয়ে চলাচল পরিহার করতে অনুরোধ করা হয়েছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর