বুধবার, ২১ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা
নির্বাচনী ইশতেহার

ডিজিটাল আইন নিয়ে দলগুলোর ঘোষণা চায় সম্পাদক পরিষদ

নিজস্ব প্রতিবেদক

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ইশতেহারে বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধনের অঙ্গীকার যুক্ত করতে রাজনৈতিক দলগুলোকে অনুরোধ জানিয়েছে সম্পাদক পরিষদ। একই সঙ্গে বিধিমালা তৈরির আগেই বিতর্কিত এই আইন গণমাধ্যম সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করায় তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। সরকারের তিনজন মন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিয়েও আইনটি সংশোধনের কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন দেশের সংবাদপত্র   সম্পাদকদের এই সংগঠন। গত সোমবার রাজধানীর ডেইলি স্টার সেন্টারে সম্পাদক পরিষদের সভা অনুষ্ঠিত হয়। নিউজ টুডের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক রিয়াজউদ্দিন আহমেদ এতে সভাপতিত্ব করেন। পরে সম্পাদকরা এক বিবৃতিতে তাদের অনুরোধ, হতাশা ও উদ্বেগের কথা জানান। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আলোচনার সুযোগ শেষ হয়ে যায়নি’—  সরকারের তিনজন মন্ত্রীর এমন প্রতিশ্রুতির পরও সাংবাদিক ও গণমাধ্যম সম্পৃক্তদের ক্ষোভ লাঘবের কোনো চেষ্টা ছিল না। এমনকি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধনের বিষয়ে দশম সংসদের শেষ অধিবেশনেও কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় সম্পাদক পরিষদ গভীর হতাশা ব্যক্ত করছে। সম্পাদক পরিষদ আরও উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করেছে যে, বিধি তৈরির আগেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি গণমাধ্যম সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হচ্ছে। গণমাধ্যমগুলোকে পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন থেকে বিরত রাখতে ওই আইনে মামলা দায়েরের ভয় দেখানোর ঘটনাও ঘটেছে। আসন্ন সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া সব রাজনৈতিক দল যেন তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে পরবর্তী ১১তম সংসদে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধনের বিষয়ে অঙ্গীকার যুক্ত করে সেই অনুরোধ জানিয়েছে পরিষদ। সাংবাদিক ও সম্পাদকদের হেনস্থা করা এবং তাদের সংবাদ পরিবেশনের দায়িত্ব পালন থেকে বিরত রাখার জন্য মানহানি মামলার ব্যাপক ব্যবহারে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে পরিষদ। এ বিষয়ে সম্পাদক পরিষদ হাকিম ও বিচারকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চায়, আইনে পরিষ্কারভাবে বলা আছে কেবল একজন সংক্ষুব্ধ ব্যক্তিই মানহানির মামলা করতে পারেন। কিন্তু আইনের সংজ্ঞায় সংক্ষুব্ধ নন এমন লোকও মানহানির মামলা করছে এবং আদালত তা গ্রহণ করছে। পরিষদ আন্তরিকভাবে বলতে চায়, আইনের এমন অপব্যবহার এখনই বন্ধ করতে হবে এবং মানহানির মামলার ক্ষেত্রে আইনের বিধানগুলো কঠোরভাবে অনুসরণ করতে হবে। বিবৃতিতে স্বাক্ষরদাতারা হলেন— নিউজ টুডের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক রিয়াজউদ্দিন আহমেদ, মানবজমিন সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী,  নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবীর, প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান, ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম, বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম, নয়া দিগন্ত সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দিন, দৈনিক আজাদীর সম্পাদক এম এ মালেক, করতোয়া সম্পাদক মোজাম্মেল হক, ইনডিপেনডেন্ট সম্পাদক এম শামসুর রহমান, যুগান্তরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সাইফুল আলম, বণিক বার্তা সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ, ঢাকা ট্রিবিউনের সম্পাদক জাফর সোবহান, ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক শহীদুজ্জামান খান ও সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মুস্তাফিজ শফী। ব্যাপক সমালোচনা, আপত্তি ও উদ্বেগ উপেক্ষা করেই গত ১৯ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাস হয়। সম্পাদক পরিষদ দীর্ঘদিন ধরে এ আইন সংশোধনের দাবি জানিয়ে আসছে। তারা বলছে, এ আইনের কয়েকটি ধারা স্বাধীন সাংবাদিকতা ও বাক-স্বাধীনতার পরিপন্থী।

 

সর্বশেষ খবর