শিরোনাম
শনিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা
এবার ভোটের ইশতেহার

৮১ বছরের মহাপরিকল্পনা আওয়ামী লীগের

রফিকুল ইসলাম রনি

৮১ বছরের মহাপরিকল্পনা আওয়ামী লীগের

দলকে টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আনতে ‘শতাব্দীর ইশতেহার’ ঘোষণা করতে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এতে চলতি শতাব্দীর বাকি ৮১ বছরের মহাপরিকল্পনা তুলে ধরা হচ্ছে। ‘সমৃদ্ধ বাংলাদেশ’ অথবা ‘গ্রাম হবে শহর’ সম্ভাব্য শিরোনামে এবারের ইশতেহারে যুব সমাজের ব্যাপক কর্মসংস্থানের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। ২০৪১ সালের আগেই উন্নত দেশ। ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ সালের মধ্যে দেশকে কোথায় দেখতে চান সে স্বপ্নের কথা তুলে ধরবেন শেখ হাসিনা। ৬৪ পৃষ্ঠার নির্বাচনী ইশতেহার হচ্ছে বাংলা ও ইংরেজি ভার্সনে। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, দেশবরেণ্য শিক্ষাবিদ, অর্থনীতিবিদসহ বিভিন্ন বিষয়ে পারদর্শী বিশিষ্টজনের সমন্বয়ে গঠিত ‘ইশতেহার কমিটি’ এটি প্রস্তুত করেছেন। আজ সর্বশেষ বৈঠকে বসছেন কমিটির নেতারা। পরে তুলে দেওয়া হবে দলীয় সভানেত্রীর হাতে। সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী ১৩ ডিসেম্বর রাজধানীর একটি অভিজাত হোটেল বা বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জাতির সামনে ঘোষণা করবেন শেখ হাসিনার সমৃদ্ধ বাংলাদেশের ভিশন ও মিশন। ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির সঙ্গে যুক্ত একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির একাধিক সদস্য জানান, ৬৪ পৃষ্ঠার নির্বাচনী ইশতেহারের ২ পৃষ্ঠার সংক্ষিপ্ত তালিকায় তুলে ধরা হবে ইশতেহারের সার্বিক দিক। এটিই নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যবহার করা হবে। এবারের ইশতেহারে প্রতিশ্রুতির মধ্যে দ্বিতীয় পদ্মা সেতু ও দ্বিতীয় যমুনা সেতু নির্মাণ, বঙ্গবন্ধু-২ স্যাটেলাইট উেক্ষপণসহ ২১০০ সাল পর্যন্ত ৮১ বছরের পরিকল্পনা তুলে ধরা হচ্ছে। ২০৪১ সালের আগেই উন্নত বাংলাদেশ গড়ার প্রতিশ্রুতি থাকছে জোরালোভাবে। এ ছাড়াও উৎপাদনমুখী ব্যাপক নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি, সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকার মান উন্নয়ন, পুষ্টিকর নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত, গ্রামাঞ্চলের অর্থনীতির উন্নয়ন, চরাঞ্চলের মানুষ ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়সহ তরুণ উদ্যোক্তা তৈরি, গুণগত শিক্ষা এবং রাজস্ব খাত থেকে প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে শুধু শহরভিত্তিক উন্নয়ন নয়, শহর অঞ্চলের মতো গ্রামীণ এলাকায়ও পরিকল্পিত ঘরবাড়ি, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি সরবরাহ, স্বাস্থ্যসম্মত পয়ঃনিষ্কাশন নিশ্চিত করার অঙ্গীকার থাকছে এবারের ইশতেহারে। অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দীর্ঘদিন ধরেই যে বলে আসছেন, আগামীতে ক্ষমতায় এলে গ্রাম পাবে শহরের সুবিধা, সে বিষয়টি বিস্তারিত তুলে ধরা হবে।  জানা গেছে, ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারের স্লোগান ছিল ‘দিন বদলের সনদ’। ২০১৪ তে ‘এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ’। আর আগামী ইশতেহারে থাকবে, দেড় কোটি নতুন ভোটারের জন্য নতুন সময়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার সমাধান পথ। এবারের সম্ভাব্য শিরোনাম হতে পারে ‘সমৃদ্ধির সোপানে বাংলাদেশ’ অথবা ‘গ্রাম হবে শহর’। যুব সমাজের ব্যাপক কর্মসংস্থানের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। আওয়ামী লীগের ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির সদস্য সচিব ও দলের উপ-দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ইশতেহারের খসড়া ইতিমধ্যে প্রস্তুত করে দলীয় সভানত্রীের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল। তিনি কিছু দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। সেগুলো সংযোজন-বিয়োজনের মাধ্যমে চূড়ান্ত করে দলীয় সভানেত্রীর কাছে দেওয়া হবে। ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির আহ্বায়ক ড. আবদুর রাজ্জাক এ নিয়ে আজ সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে কথা বলবেন।’  ইশতেহার তৈরির দায়িত্বে থাকা একাধিক নেতা জানান, এবার বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে গ্রাম উন্নয়নে। এ জন্য গ্রাম নিয়ে গুচ্ছ পরিকল্পনা ও তা বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি যুক্ত হচ্ছে নতুন করে। সম্প্রতি গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের ইশতেহারের বিষয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, আগামী নির্বাচনের জন্য ডেল্টা প্ল্যান দিয়ে দিলাম, ৮১ বছরের প্ল্যান দিয়ে দিয়েছি। পরবর্তী শতাব্দীতে, মানে ২১০০ সালে কী রকম বাংলাদেশ হবে সেই পরিকল্পনাও দিয়ে দিয়েছি। আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, ঘরে ফেরা কর্মসূচি, একটি বাড়ি একটি খামার, বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতাসহ পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে সামনে নিয়ে আসার চেষ্টার মতো কর্মসূচিগুলো আমরা নির্বাচনী ইশতেহারে সন্নিবেশ করব। আমরা গ্রামকে শহর করব। গ্রামে নাগরিক সুবিধা পৌঁছে দেওয়া হবে। তারা জানান, এবারের ইশতেহারে ২০১৯ সাল থেকে ২১০০ সাল পর্যন্ত দলের পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়েছে। এটিকে ‘শতাব্দীর মহাপরিকল্পনা’ হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। এতে নতুন কিছু বিষয় যুক্ত করা হয়েছে, যা বাংলাদেশের অন্যান্য রাজনৈতিক দলের চিন্তারও বাইরে। এটি চলতি শতাব্দীতে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দর্শন হিসেবে বিবেচিত হবে। দলের ঘোষণাপত্রের আলোকেই নির্বাচনী ইশতেহার তৈরি করা হয়েছে বলে সূত্র জানায়। এবারের ইশতেহারে ২০০৮ ও ২০১৪ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে ঘোষিত বিষয়গুলোর অগ্রগতি তুলে ধরে আগামীর পরিকল্পনা সন্নিবেশিত করা হয়েছে। সূত্রমতে, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন জনসভায় আগামী প্রজন্মের জন্য উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ উপহার দিতে যেসব প্রতিশ্রুতি ও অঙ্গীকার করেছেন, সেগুলোও ইশতেহারে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। দলীয় সূত্র জানিয়েছে, এবারের ইশতেহারে গত ১০ বছর আওয়ামী লীগ সরকার পরিচালনাকালে কোন কোন খাতে কী পরিমাণ উন্নয়ন হয়েছে, সেই চিত্র তুলে ধরা হবে। তথ্যপ্রযুক্তি, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ মোকাবিলা, নারীর ক্ষমতায়ন, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা, শিক্ষা, কর্মসংস্থান, দারিদ্র্য বিমোচন, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নির্মূল, প্রবৃদ্ধি দুই অঙ্কে পৌঁছাতে পদক্ষেপ গ্রহণ, প্রতিটি মানুষের সাংবিধানিক ও মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ, ১০০টি অর্থনৈতিক জোন প্রতিষ্ঠা, মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন, নারীর উন্নয়ন ও নারী নীতি বাস্তবায়ন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান, খাদ্য নিরাপত্তা, শিল্প-কারখানা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানিসহ বিভিন্ন খাতে সরকারের উন্নয়ন কাজগুলোর তথ্য থাকবে। আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে আমাদের জিডিপির প্রায় ৫ শতাংশ আসবে সমুদ্র অর্থনীতি থেকে। গভীর সমুদ্রের বিশাল অংশ বাংলাদেশের জলসীমায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। নীল পানির নিচে লুকিয়ে থাকা এসব সম্পদকে কাজে লাগাতে পারলে পাল্টে যাবে দেশের চেহারা। সমুদ্র অর্থনীতিতে বিনিয়োগের নতুন দিগন্তে এখন বাংলাদেশ। বিশ্বের সম্পদশালী রাষ্ট্রগুলোও বাংলাদেশের সমুদ্র অর্থনীতিতে সম্পৃক্ত হতে আগ্রহী। বঙ্গোপসাগরের অফুরান সম্পদ কাঙ্ক্ষিত পরিমাণে আহরণ সম্ভব হলে ১০ বছরের মাথায় বাংলাদেশের অর্থনীতি অভাবনীয় উচ্চতায় পৌঁছবে। এ বিষয়টি আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে গুরুত্ব দেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর