শিরোনাম
শনিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা
বিএনপি নেতা আবুর দাফন

ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিলেন সিইসি

নিজস্ব প্রতিবেদক, যশোর

যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনের জন্য দলীয় মনোনয়ন নিতে ঢাকায় গিয়ে শেষ পর্যন্ত লাশ হয়ে ফিরলেন কেশবপুরের বিএনপি নেতা যশোর জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আবু বকর আবু (৭০)। গতকাল দুপুরে তার মরদেহ কেশবপুর পৌঁছলে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। দুই দফা নামাজে জানাজা শেষে বিকালে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

এদিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা গতকাল বলেছেন, আবু বকর আবু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। স্বজনরা জানান, গত ১৮ নভেম্বর রবিবার রাত ৮টার পর রাজধানীর পল্টন এলাকা থেকে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা বিএনপি নেতা আবু বকর আবুকে অপহরণ করে। দুই দিন পর ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশ বুড়িগঙ্গা নদী থেকে তার লাশ উদ্ধার করে। কিন্তু পুলিশ প্রথম অবস্থায় লাশের পরিচয় শনাক্ত করতে না পেরে লাশের ছবিসহ ফেসবুকে একটি পোস্ট দেয়। সেই ছবি দেখে পরিবারের সদস্যরা আবুকে শনাক্ত করেন। এলাকার মানুষের মাঝে জনপ্রিয় চিরকুমার এই বিএনপি নেতা আবু বকর আবু কেশবপুর উপজেলার মজিদপুর ইউনিয়ন পরিষদে পাঁচবার ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন নেওয়ার ইচ্ছায় তিনি গত ১২ নভেম্বর ঢাকায় যান। রাজধানীর পল্টন এলাকার মেট্রোপলিটন হোটেলের ৪১৩ নম্বর রুমে ছিলেন তিনি। সেখান থেকেই দলীয় মনোনয়ন ফরম ক্রয় ও জমা দেন। সাক্ষাৎকার পর্বে অংশ নেওয়ার জন্য তিনি ওই হোটেলেই থেকে যান। ১৮ নভেম্বর রাত ৮টার দিকে তার সঙ্গী মজিদপুর ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার সাইফুল ইসলাম ওষুধ কেনার জন্য বাইরে গিয়েছিলেন। তিনি হোটেলে ফিরে আর আবু বকর আবুকে পাননি। পরে ০৯৬৩৮৮৮৮২০২ নম্বর থেকে আবুর ভাগনের কাছে ফোন দিয়ে দেড় লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। এজন্য অপহরণকারীরা কয়েকটি বিকাশ নম্বরও সরবরাহ করে। মঙ্গলবার সকালে অপহরণকারীরা ০১৭৪৮১১০৫৭৭ নম্বরের মোবাইল ফোন থেকে পুনরায় যোগাযোগ করে। এরপর তাদের দেওয়া বিভিন্ন নম্বরে দেড় লাখ টাকা বিকাশ করা হয়। পরে আরও ২০ হাজার টাকা বিকাশ করা হয়। দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে অপহরণকারীদের মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। নিহতের স্বজনরা অভিযোগ করেছেন, অপহরণের পর কেশবপুর ও ঢাকার সংশ্লিষ্ট থানায় বারবার যোগাযোগ করা হলে পুলিশ অভিযোগ গ্রহণ করতে গড়িমসি করে। কোনো থানাতেই জিডি নেয়নি। এদিকে গতকাল বেলা ১২টার দিকে আবু বকর আবুর মরদেহ কেশবপুর পৌঁছলে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। বাদ জুমা কেশবপুর পাবলিক মাঠে তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে গ্রামের বাড়িতে দ্বিতীয় দফা জানাজা অনুষ্ঠিত হওয়ার পর পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

 এর আগে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিবের পক্ষে এই নেতার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু। বিএনপি নেতা আবু বকর আবু নিহতের ঘটনায় যশোরের প্রত্যেকটি উপজেলায় দলীয় কার্যালয়ে কালো পতাকা উত্তোলন ও নেতা-কর্মীরা কালো ব্যাজ ধারণ করেন। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু বলেন, আবু বকর আবু নিহত হওয়ায় আমরা কেশবপুরে জাতীয়তাবাদী দলের একজন অভিভাবককে হারিয়েছি। এই ক্ষতি সহসা পূরণ হওয়ার নয়। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, আবু বকর আবুকে পাওয়া যাচ্ছিল না। কিন্তু তিনি যে আর আমাদের মাঝে ফিরবেন না এটা আমরা চিন্তাও করতে পারিনি।

সর্বশেষ খবর